আমাকে টেরর বলো! রংবাজ বলো! মাস্তান বলে বলে
চিৎকার করে ধীক্কার দাও, নিন্দার মালা পড়াও গলে।
'বেজন্মা' বলে গালি দাও? লজ্জা কি নাই তোমাদের মুখে!
আমি কি জন্মগত সন্ত্রাস? মায়ের উদরে থেকে কি চালিয়েছি অস্ত্র কারো বুকে ?
শুধু-শুধু মিথ্যা বানোয়াট অপবাদ দিচ্ছো যত্ত সব কদর্যকথা;
হে সুশীল সমাজের মানুষ ! সেদিন কোথায় ছিলো তোমাদের এই ভদ্রতা সভ্যতা?

সেই বাইশ বছর আগে গুলিস্তানের মোড়ে এক পাগলীর কোলে ;
নগ্নাক, নাকে নির্গত শ্লেষ্মা, রোদে পুড়া স্বেদজলে সিক্ত এক শিশু ছেলে।
আহারের জন্য কাঁদছিলো!
পাগলী-মা হন্নে হয়ে অন্ন খুঁজে, ফুটপাতে কুকুরের পাহারায় রেখে;
কই' সেদিন তো কোন সুশীল-সভ্য মানুষ এসে তুলে নেয়নি কাঁকে;
লাঞ্চনায় বঞ্চনায় অনাহারে দুর্গত জীবনের সাথে লড়ে লড়ে,
বৃষ্টির জলে ভিজে, প্রখর তাপে জ্বলে, রাস্তায় ঘুরে ঘুরে -
শুধু এক টুকরো শুকনো রুটি চেয়েছিলো ছেলের মুখে তুলে দিবে বলে,
কিন্তু 'পাগলি' বলে নির্মমভাবে-লাথি মেরে রাস্তায় দিয়েছো ফেলে।


হঠাৎ একদিন ঝড়ো হাওয়ার মত!
কোন এক বাবু-সাহেবের গাড়ির  ধাক্কায় কেড়ে নিলো পাগলীর প্রাণ
আমি গুলিস্তানের ঐ পাগলীর ছেলে মাতৃহারা সেই শিশু-সন্তান।


অতঃপর আর কিছু নেই এক অনাথ পথ-শিশু নিঃস্ব একা!
পেটে দাউ দাউ করে জ্বলে ক্ষুধার প্রজ্বলিত উগ্র শিখা।
যে দিকে যাই
ধর' ধর' ধর' ধ্বনিত ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে দৌড়ে পালাই আমি যবে ক্লান্ত!  
সেদিন  প্রথম দিয়েছিলাম কামড় মানুষের বিবেকে যারা সমাজের উচ্চবিত্ত।


আজকের যত বড় বড় হাঙ্গামা, নারকীয় যত হত্যা!
শুধু অস্ত্র হাতে আমাকে দ্যাখো! কে দিলো তুলে হাতে    দেখোনি কখনো তা?
কে কাকে স্বার্থের বলি দিতে রাত দুপুরে আসে বায়না চুকাতে ;
মিছিল মিটিং জনসমাবেশে, কে জ্বালে অগ্নি? বোমা ফাটে কার ইঙ্গিতে?
শুধু আমাকে সন্ত্রাস বলো! কে এই সন্ত্রাসের আদি জন্মদাতা!!
আজকের সভ্য সমাজ না কি আমার বঞ্চিত নির্যাতিত ঐ পাগলী মাতা!