একটি প্রাচীন ব্যাথা
■■■■■■■■■■■


ভুপাল মন্ডল দশ কাঠা জমি
আগলে রেখেছে বুকে করে,
সুখে ছিল সেই জমিতে বউ বাচ্চা
নিয়ে তিন পুরুষ ধরে।
বিধি বাধ সাধলো বছর দুই ধরে
এতি বর্ষণে বাড় এলো
শস্য গেল ডুবে এলোনা গোলাঘরে।


গেল বছরও তাই ছিল
এই বছরও তাই হলো
বিপদে পড়ে ভুপাল মন্ডল
গোপাল মাহাজনের থেকে
দুই হাজার টাকা ধার নিয়েছিল
ফসল উঠলে শোধ দিয়ে দেবে এই ভেবে।


জানত না সে মরণ ফাঁদে পা পড়েছে তাঁর
এবার যাবার সময় হলো
উপায় নেই আর।
কেঁদে কেঁদে মহাজনের কাছে করে আবেদন।
যা কিছু ছিল সবই গেছে বাড়ে,
এবারের মতো কৃপা কারো
হে জনার্দন।


গত বছরের তুলনায় এ বছর
ক্ষেতে সব গেছে মরে।
সোনালী ফসল যতছিল মাঠে
সবই আজ মাটিতে লুটায়ে গেছে,
ঘরে তুলিবার বেঁচে কিছু নাই আর।
জীবন বাঁচানো বড়ই দূর্দায়।


বাবু,
তব গোলাঘরে মজুত আছে অফুরান,
কিছু কর দান বাঁচে মোর প্রাণ।
ছেলে পুলে বউ নিয়ে যাবো
কোথায় এখন,
তুমি মোর দাতা বিধাতা
রেখেছো আপন করে
এই দশ কাঠা ভুমি পরে।


ব্যাট্যা বজ্জাত,ছোটো জাত
তোদের কখনোই হবে না
মান সম্মান চেতনা।
ধার দেনা করে খাওয়া
তোদের স্বভাব,
গত বছরের ধারের টাকা
সুদ সমেত হয়েছে কত?
করেছিস কোনোদিনও হিসাব।


শুধু হাত পেতে ভিখ মেগে খাওয়া সার
যখন তখন এসে বলিস
বাবু মোর টাকার দরকার।
টাকা কি তোর বাপের নাকি,
না আছে আমার ছাপার
ট্যাকশাল।


কান খুলে শুন বজ্জাত ছোটলোক,
টাকা শোধ দিয়ে যাস
যাওয়ার আগে পরলোক।
টিপ ছাপ দিয়েছিস যে দলিলে
বস্তু ভিটে,জমি সবই যাবে চলে।
কড়ায় গন্ডায় হিসেব করে
সবই নেব ঘাড় ধরে।
ধার নেওয়ার বেলায়
যত মিঠা মিঠা কথা
ফেরত দেওয়ার সময়
জেগে ওঠে ব্যাথা,


শুন ব্যাট্যা,
বন্যা হয়েছে সে কথা সবাই জানে,
সরকার থেকে গ্রামের মোড়ল
এক বাক্যে মানে।
মোর কি দোষ বল
টাকা যা নিয়েছিস হাত পেতে
সে টাকা আর সুদ ফেরত
দিতে হবে যে তোকে।


বিড়াম্বনা কি বিড়াম্বনা
আজি এল দেখ!
টাকা শোধ দিতে চায় না কেহ!
তিরিশ দিন সময় দিলাম তোরে,
টাকা শোধ দিস যেমন পারিস করে।
একত্রিশ দিনে জমি জমা
সব হবে মোর হস্তগত।
যদি না পারিস বিষ খেয়ে মর
বংশে বেঁচে আছে যত।
তিরিশ দিন পরে যথারীতি
জমি গেল মহাজনের ঘরে,
আর ভুপাল মন্ডলের
বংশে যত ছিল
শ্মশানে গেল পাশাপাশি হাত ধরে।


বর্ষা এলো অঝোর ঝরে
চিতা গুলো জ্বলছে দাউদাউ করে,
দেখার আজ সময়ই নেই
বড় ব্যস্ত এখন সবাই,