ইতি তোমার তিথি
//////////////////////


নিতান্ত নিদারুণ নিরাসক্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে
গতিহীন নদীর মতো জঞ্জাল কুড়িয়েছি দুহাতে।
শৈশব কৈশোর যৌবন হেলায় করেছি পার-
এই জঞ্জালের স্তুপে।
কখনো পাইনি দুঃখ
কখনো খুঁজিনি তোমার মুখ
কাটিয়েছি মহা সুখে।
সুখের বাতাস গায়ে মেখে
জঞ্জালের গন্ধে থেকে থেকে
ভুলে গেছি হৃদয়ের কথা!
মনের কথা!
বলেছিল কেউ কোনোদিন চলার পথে।
জঞ্জালের স্তুপে থেকে থেকে
ভুলে গেছি বাতাসেও সুগন্ধ আছে।
থেকেছি জঞ্জালের গন্ধে বিভোর
এই বার্ধ্যকেও কাটেনি তার ঘোর।
তাকিয়ে দেখি অনন্ত দিগন্তে
রামধনু রং যায় দাগ কেটে
সবুজ শিরিসের পাতায়
মিশে গেছে তায় লাল রং একসাথে।


মনের কোনে আচম্বিতে জাগে
যৌবনের এক অতি পরিচিত মুখ,
ঝড় তুলে গেল ঝিরঝিরে বুকের মাঝে।
দুহাতে সরিয়ে দেখি সঞ্চিত জঞ্জাল,
যদি পাই কোনো স্মৃতি তার!
গভীর দীর্ঘশ্বাসে শ্বাসবন্ধ হলো -
জঞ্জালের স্তুপে তারই
লেখা কিছু পত্র পাওয়া গেল।
তাতে আছে কিছু মনের আবেগী কথা
যে পাতা যৌবনে কখনো খুলে হয়নি দেখা।
অবজ্ঞা করে উপেক্ষা করে
অহংকারের পথধরে আগামীর পথে নিরন্তর চলেছি একা


আজি এই বার্ধ্যকে টপটপ করে
দুচোখে অশ্রু ঝরে,
বুকে বিবেক কানে জাগে অসহ্য যন্ত্রনা ও ব্যথা,
ঝাপসা অশ্রুজলে মেলেধরি আঁখি তলে-
তারই দুএকটি পত্রের পাতা,
পাতায় পাতায় ঝরে যায়
অব্যক্ত অধরা প্রেমকথা।
সব শেষে লেখা
পাবে তুমি দেখা গির্জার পিছনের মাঠে।
দুর্বল পায়ে কাঁপা কাঁপা হাতে
চিঠি নিয়ে সাথে খুঁজে খুঁজে গেলাম জীর্ন ঘরে।
এলো এক নব যুবক
বলল মুখ পানে চেয়ে।
কুড়ি বছর ধরে গির্জার ধারে
উনি আছেন নিদ্রায় শুয়ে।


একগুচ্ছ সাদা রজনী বেল
আর গাঁদা, দিলাম শিয়রে,
নত মস্তক শিরে
বললাম আদর করে
আজও তোমায় ভালবাসি
নিও আপন করে।
সন্ধ্যা হয় হয়
নব যুবক এসে অনেক কথা কয়।
অনেক ডাকাডাকি করে,
নেই কোনো সাড়া-
নিঃশব্দে!
দুটো প্রাণ মিলে গেল সবার অগোচরে।


দমকা হওয়ায় উড়ে এলো
চিঠির এক টুকরো পাতা,
তাতে কয়েকটা লাইন লেখা
বাকি সব পাতা গেছে উড়ে।
আকাশ আসবে তুমি ফিরে অন্তিম প্রহরে
থাকবো তোমার পথ চেয়ে বনবীথি  হয়ে,
থাকবো জীবন মরনের সাথী,
ইতি তোমার তিথি।