খয়েরি পাড় শাড়ি
।।।।।।।।।।।।।।।।।


অনেক পরিবর্তন হয়েছে বাইশ বছরে
স্কুলটার বাইরে ভেতরে,
একটু দাঁড়িয়ে মুখ তুলে দেখলাম নয়নভরে
কানে এলো পুরনো সেই পরিচিত ঘন্টার ধ্বনি
দু চোখে ভেসে আসে
সেই পরিচিত মুখ কাজল নয়নি
একটু এগিয়ে গেলাম-
সামনের পাকা রাস্তাটার বিস্তর ফারাক
চকমকে বাঁধানো ডিভাইডারের রঙের বাহার
লাটিমের মত চোখ দুটো ঘুরিয়ে দেখি
শ্মশান টাও আগের মতোই আছে
আছে সেই বুড়ো বট গাছটাও
কিছু ঝুরি মাটিতে নেমে গেছে
আছে সেই কৃষ্ণ তুলসী
বাবুই তুলসী স্ব স্ব স্থানে
ফারাক শুধু মড়া পুড়ানো হয়না আর এখানে


একটু বসলাম বুড়ো বটের তলায়
কত আপন কত শান্তির ছায়া
চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিলাম
বুড়ো বটের তলে
স্মৃতি গুলো যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিলো
শীরায় শীরায় দুর্বল বক্ষ স্থলে
খয়েরি পাড়ের শাড়িতে তুমি এলে
সেই মনমহিনী রূপে
যে ভাবে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে
বসতাম দুজনে এই নির্জন শ্মশানে
পায়ে সেই কালো হিলের জুতো
ঘাসের উপর অদ্ভুত
তোমার পা ফেলা আলতো আলতো
কত আবেগী ভাষায় নকশী কথা
একাকী বসে স্মৃতির আঙিনায় আজ শুধু ছবি আঁকা।


মনে পড়ে-
একদল মৌ মাছি পথভুলে ঘিরে ধরে তোমায়
ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরেছিলে আমায়
সে এক অদ্ভুত  শিহরণ ছিল
মনে বুকে
রেগে গিয়ে তুমি
কয়েক পাপিছিয়ে গিয়েছিলে রাঙা মুখে
তুমি ভীষণ ....
বলে থেমে গিয়েছিলে
একটু পরে বললে
আমি মরছি মৌ মাছির ভয়ে
আর তুমি হেসে যাচ্ছো ডগমগিয়ে
এমনি করেই কেটেছে কত দুপুর বিকেল
একদিন স্কুল ছেড়ে গেলে অন্য স্কুলে
বাইশটা বছরে ধরে একই স্মৃতি
ঘুরে মরে মগজে পাঁজরে


হঠাৎ এক শব্দে চোখ গেল খুলে
দেখি এক যুগল দাঁড়িয়ে সম্মুখে
ইশারায় বলে আমরাও ওখানে বসতে চাই
আমি যদি একটু সরে যাই
অবাক হয়ে ভাবি
প্রেমের ভাষা আজও একটু বদলায়নি
আবেগ প্রেম ফুরিয়ে যায়নি
ভালো করে তাকিয়ে দেখি
সেই খয়েরি পাড় শাড়ি
দুজনের মধ্যেও দেখি
আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই খুনসুটি
সেই ভাব আর আড়ি।


ফিরে যাওয়ার আগে মনে মনে বলি
বাইশ বছর আগে ও পরে
বুড়ো বটের তলে আজও যে
প্রেমের হাসি ঝরে পড়ে
ফোটে আবেগের কথাকালি।