লাল ফড়িং
///////////////


হেমন্তের বেলা শেষে,
শীত এলো প্রভাব খাটিয়ে ঘরে ঘরে।
শীতের সকালে মিঠে রোদে
কিছু ছেলে।
ধুলো মাটি নিয়ে খেলা করে।
ঘাসের আগায় শিশির বিন্দু
করছে টলটল,
স্ফটিকের মতো চকচকে ফোঁটা
গুলো করছে জ্বলজ্বল।
গ্রামের অনতি দূরে প্রান্তিক পারে
কিছু পরিযায়ী গুড়
প্রস্তুতকারি দল, বাঁধে ঘর।
বড় বড় কড়া হাঁড়ি পাত্রে ভরা
টাটকা গুড়ের সুঘ্রানে সবাই আত্মহারা।


লাল ফড়িং গুলো কনকনে
শীতে ভীষণ কাতর।
একটু উষ্ণতার জন্য আশ্রয় দিলো
খেজুর পাতার বেড়া।
ডানা মিলে উড়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই
বোধয় হয়েছে কোনো বোঝাপড়া।


দুষ্ট বালকের দলে তাদেরই
কেউ একজন,
মিশি মুখে সকালে হইয়া
উঠিল দুর্জন।
কষিয়া বল লাঠি মারিল
ধুমাধম খেজুর পাতার প্রাচীরে।
বাকি ছিল যারা খিলখিলিয়া
হাসিয়া উঠিল তারা।
তারি মাঝে একটি বালক
উঠিল চেঁচিয়া হইলো সদয়।


এরা বেঘর বেসাহারা
কেন মারছিস তোরা?
দলের মধ্যে এক সৃষ্টি ছাড়া
ফড়িং গুলোকে করলো লেজ হারা।
মজার আর শেষ নাই
কাটা লেজে ঘাস বেঁধে দিলো তাই।
তাই নিয়ে উড়ে গেল
বোধয় ভীষণ কষ্ট পেল!
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবে ওই
অসহায় ছেলেটি।
অস্ফুটে বলে প্রভু এদের দিয়ো
আলোক দৃষ্টি।


পঞ্চাশটা বছর পর ওই বালক
আসিল গ্রামের ঘর।
ক্ষেতে খামারে ঘরে বাইরে
সবাই কেমন কর্ম তৎপর।
উঠিয়া সকালে মিশি মুখে
গেল ক্ষেতের ধারে।
আছে শীত,আছে নতুন চমকে
গুড়ের পসরা সাজিয়ে।


নেই আজ ধুলোমাটি নিয়ে
খেলা করা ছেলে।
দশ ফুট বই দশ ঘরে
ছেলেবেলা যাচ্ছে হারিয়ে।
আছে সেই খেজুর পাতার বেড়া,
হারিয়ে গেছে লাল ফড়িং
আজ আর নেই কোনো বোঝাপড়া।