মনের মাধুরী
//////////////
কয়েক বছর ধরে ভুবন কাকার ঘরে,
ছানি হাতুড়ির আওয়াজ আসছে ঠকঠাক করে।
রাস্তা দিয়ে গেলেই শব্দ গুলো কানে আসে ,
কেউ কেউ বলে ভীমরতি ধরেছে বৃদ্ধ বয়সে এসে।
কেউ বলে মতি ভ্রমে শিল্পকলা জেগেছে মনে।
এই সব শুনে কৌতুহল বাড়ছে আমার দিনে দিনে।
দেখার মতো সময় হয়ে ওঠে না।
তাই আর যাওয়াও হয় না।


একদিন  কাকাকে  কতগুলো
রং নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখলাম।
কাকা কি করবে এই রং গুলো দিয়ে?
জানতে চাইলাম।
বলল সাজাবো-
আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে
তোর কাকীকে
শুনে একটু বিস্মিত হলাম
এই ভুতুড়ে ঘরে থেকে
সত্যি কি কাকার মাথা বিগড়েছে?


কাকার স্ত্রী মাধুরী দেবী
এই গ্রামেরই সত্যিকারের চাঁদ ছিলেন
তিনি ছিলেন নারী শিক্ষার অগ্রদূত
করেছেন দুটো বিদ্যালয় আরো অনেক কিছু
গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছিলেন।
তিনি ছিলেন মহিলা সমবায়ের মণি
তিনি ছিলেন ঘরে ঘরে কুটির শিল্পের জননী
ছিলেন ভীষণ দূরদর্শী আর অসাধারণ জ্ঞানী।
দশ বছর আগেই তিনি পরলোকে গেছেন
তবে কি
কাকীর শোকে কাকা সত্যি বিগড়েছেন।
এই সব কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরে এলাম।
আরো কত কি আগডুম বাগডুম
ভাবনা চিন্তায় ছবি আঁকলাম।


পর দিন সকালে তারিণী খুড়ো
এসে বলে
একবার চল ভুবনের বাড়ি
কোনো প্রশ্ন না করেই
গেলাম তাড়াতাড়ি।
বিশাল একটা পাথরের মূর্তি
আসমানী রঙের সাথে
ময়ূর কণ্ঠী রঙের মিশ্রণ,
হা করে তাকিয়ে রইলাম।
নীচে বড় বড় করে লেখা
তোমায় আপন
মনের মাধুরী মিশিয়ে বানালাম।
পাশে কাকার নিথর দেহটা শুয়ে আছে
মনে মনে ভাবলাম
এই ছিল কাকার মনের ইচ্ছে।
যখন কাকার ভীমরতি বুঝলাম
চোখের জল আর থামে না।
কেউ কোনোদিন
ভুবন মাধুরী কে চিনতে পারলো না।


কয়েকদিন পরে
চার রাস্তার ধারে -
কাকার মনের মাধুরীর মূর্তি টা জায়গা পেল।
আজ কাকী নেই
নিঃস্বার্থে গ্রামের জন্য কতকিছু করে গেল।
প্রতিদিন নিয়ম করে
ধুপ ধুনা জ্বলে সকাল সাঁজে
যখন বেঁচে ছিল কেউ একটু জায়গা দেয়নি হৃদি মাঝে।


মানুষই দেবতা গড়ে
যদি ঠিকঠাক কীর্তি করে
জীবন উৎসর্গ করে ।
ধরণীর বুকে পাথরের সমাহার
তবুও
ক'টা পাথর মূর্তি হয়ে সবার পূজা পায়!!