সাগরিকা পঞ্চম পর্ব
:::::::::::::::::::::::::


হরিহর জানালাটার পাল্লা
দুটো বন্ধ করে দে
হওয়ার গতি বাড়ছে এখন
ঠান্ডা হওয়া হু হু করে আসছে।
শোন নীচে গিয়ে শীতঘুম বইটা এনে দে।
আসার সময় চশমা আনিস
ভুলে যাস না রে।


বকবকিয়ে নীচে গেল হরিহর
আমার কথা কেউ শোনে না
আমি যে শুধুই এই বাড়ির চাকর।
দাদাবাবু আপনি যখন ছোট ছিলেন
আমারই কোলে পিঠে কত খেলেছেন।
আপনার দুঃখ আমি হাড়ে হাড়ে বুঝি,
কোথায় কখন কিসে কষ্ট পেয়েছেন।
কত্তা বাবুর সময় থেকে
আমি এই বাড়িতে আছি।
আমার হয়েছে যত জ্বালা
এখন কেমন করে বাঁচি।


ঐদিকে দুটো প্রাণী আর
এদিকে আপনি,
ইচ্ছে মতো যা খুশি করছেন জানি
আর ওই দিকে দিদিমণি।
দাদাবাবু আপনি আমার কথা শুনুন
দিদিমণি আর ফিরবেন না
এবার আপনি ভুলুন।


যখন আপনি শয্যাসায়ী
দিনেরাতে শুয়ে।
দিদিমণি চলে গেলেন
সব জিনিস পত্র গুছিয়ে।
তিনদিন পর লোক পাঠালেন
নিয়ে গেল সব খালি করে ঘর,
যা যা জিনিস পড়ে ছিল নিয়ে গেল ফেরৎ।
যাবার সময় কত কটু কথা
শুনিয়ে গেলেন মাকে।
উঁচু নিচু,বংশ,জাত সম্ভ্রম শুনিয়ে বলেন
এই ঘরে মানুষে কি থাকে!


মিষ্টি মুখে ভুট্টা পোড়া দাঁত দিয়ে
ধরে আছেন দিদিমণি।
ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময়
পেলাম এই ছবিখানি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশ
তাকিয়ে দেখে নয়ন মিলে।
দেখে মনে হলো দাদাবাবুর
শরীরের শক্তি আর পরান বায়ু
কেউ যেন নিয়ে যাচ্ছে টেনে।
চকচকে বিন্দু বিন্দু জলের ধারা
দেখা দিল চোখের কোনে।
ছবি টা দেখিয়ে ভালো করিনি
ক্ষেদ জাগলো নিজের মনে।


দু চোখ রগড়ে আছেন চুপ করে,
ঘরটার মধ্যে এক নিমিষে
প্রেতাত্মার বাতাস যেন
কেউ দিয়ে গেল ভরে।
এই ছবিটা বছর চারেক আগের তোলা
বর্ষা দিনে নদীর পাড়ে।


নদীর ধারে আমরা দুজন
তাকিয়ে আছি রামধনুর দিকে।
ঝিরি ঝিরি এক দু পশলা
বৃষ্টি তখন আসছে মুহুর মুহুর ঝেঁপে।
ভুট্টা ওয়ালা দেখে বলে
একটা ভুট্টা খেতে চাই।
প্রেমিক প্রেমিক যুগল চোখে
তোর দিদিমনির মন্মহিনী ছবিটা ওঠাই।


দাদাবাবু ছবিটাই শুধু রয়ে গেছে
এই পোড়া ঘরে।
সব কিছু শেষ করে দিয়ে গেছে
তবুও দিদিমণি আছে তোমার হৃদয় জুড়ে।


হরিহর এবার একটু তুই থাম
তোর কোথাও ভুল হচ্ছে ।
তুই একই কথার জাবর কাটা
প্রাণীর মতো কাটছিস শুধু জাব।
আমি তোর দিদিমনিকে এখনো
প্রাণের থেকে বেশি ভালোবাসি।
ফিরে আসুক না আসুক
থাকবো অপেক্ষায়
তাতেই আমি খুশি।


ক্রমশ..................