সোনামুখী নদীর চর
##############
কেটেছে একেলা,বিরহের বেলা,
শৈশব গেছে জ্বলে পুঁড়ে,
এক ডাবর জলে।।
কাপ,প্লেট,থালা ,ঘটি
বাটি ধুয়ে ধুয়ে ,
সকালে বিকেলে ।।


মদন বাবুর দোকান,
উদোয়াস্ত পরিশ্রম, বিরামহীন ঘাম ।।
পুঁড়ে যাওয়া এক টুকরো রুটির আশায়,
নির্লজ্জ্ব, দারিদ্র্যের অত্যাচারে,
ক্লান্তিহীন দৌড়,দৌড়,অবিরাম ।।
এক টুকরো আশার আলো
বুভুক্ষু ,পেটের ভগবান,
মদন বাবুর চায়ের দোকান ।।


দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে লাগাম হীন ঘোড়া হয়ে,
অহ:রহ ,সাঁঝ সকালে,
দাঁতে দাঁত চেপে,
চোয়ালে চোয়াল কোষে,
দু -হাতের বজ্র মুষ্ঠিতে, পেশিতে শক্তি সঞ্চয় ।
মানব না,মানব না,
দারিদ্রের কাছে হার পরাজয় ।।


ক্ষুধার রাজ্য আমি একা ,
কুলহীন এই কূলে ,
দীনে,দিনান্তে রাতে এক ডাবর জলে,
সূর্যাস্ত,রঙিন নিশীথ গেছি ভুলে ।।
স্বপ্নগুলো গরম তেলের কড়ায়,
বাদামী, লাল,কালো,
দুমড়ে মুচড়ে খোকলা হয়ে যায়,
তবুও বুভুক্ষু পেটের ভগবান,
মদন বাবুর চায়ের দোকান ।।


শৈশবের স্মৃতি গুলো,কবে যে,
চায়ের কাপ ,প্লেট ,ধুয়ে মুছে ফিকে হয়ে গেল!
কখনো অজান্তে হাত ফসকে,
একটা কাপ ভেঙে টুকরো হয়,
ভয়ঙ্কর তার ইনাম,
নীল বিদ্রোহের চাবুক,বেত্রাঘাত,
পিঠের চামড়ায় দিতে হয় দাম ।।


অ, আ,ক,খ,শেখার স্বপ্ন গুলো,
মাথায় ঘুরে বেড়ায়,
অগোছালো,এলোমেলো ।
উঁকি মেরে যায় দুই বেলা,
এমনি করে কেটে গেল ছেলেবেলা ।।


উপোস, আপসহীন বেঁচে থাকার সংগ্রাম,
দামহীন ঘরে ঝরে যাওয়া ঘাম,
তবুও বুভুক্ষু পেটের ভগবান ,
মদন বাবুর চায়ের দোকান।।


পনের বছর আগে আস্তাকুঁড়ে ঘুরে,
এসেছিলাম দুর্গা দেবীর ঘরে।
শত সহস্র স্বপ্ন দিয়ে,দুর্গা দেবীর কোল ভরে ,
অভাবের সংসারে আছি আলো করে ।
আশা, ভরসা, বৃদ্ধা কালের বৈশাখী,
নিদারুন অভাবেও মলিন হতে দিই নি,
দুর্গা দেবীর স্নিগ্ধতার হাসি ।।


নিরাশায়, বেদনায়,
অসহ্য, যন্ত্রনায়, শয্যাশায়ী রোগগ্রস্থ মা ।
আরোগ্যের ব্যায় ভার,
যায় না বহা আর।
মা চলে ধীরে ধীরে,
জাগতিক আয়োজন ,
দূরে ফেলে আরো দূরে ।।


বিনীত, কাতর সুরে,
সুধাই বাবুরে,
কিছু টাকা দাও ধার,
হয়ে যাবে শয্যাশায়ী মায়ের আরোগ্যের ভার ।।


বাবু বলে--
জন্মেছিস কুললহীন কূলে,
দয়া, দাক্ষিণ্যে,বিনা খরচায়,
অকালে যেতে হবে চলে।।
কাজ কর মন দিয়ে,
তোর দুই টাকা বেতন পাবি,
মাস শেষ হলে ।।


অবশেষে আলো ঝলমলে,
এক পূর্ণিমা রাতে,
সোনা মুখী নদীর চর,
চিতার আলোয় হলো আলোময় ।।
নিয়তির পরিহাস ,দারিদ্র্যের হলো পরাজয় ।
শুধু কটা টাকা করে নিলো  মাতা ,
এর বিচার কেবা করে কিংবা কিসে হয়??


আকাশে বাতাসে ,বিষাক্ত নিঃশ্বাস,
ঝলমলে চিতায়,নিদারুন গভীর দীর্ঘশ্বাস ।।
জননী বিনা ভুবন নি:রর্থক,
সবই অন্ধকার ময় ।
উদোয়াস্ত দিনের হিসেবের খাতা,
আজ নিষ্প্রয়োজন ।।


প্রণাম করি,
কহিলাম বাবু, আর হবে না দেখা,
দেব পাড়ি, যেখানে নেই অভাব,
আর জাতের বলয় রেখা ।।


কিছুদিন পরে ,
সোনামুখী নদীর চরে,
পাওয়া গেলো এক নিথর প্রাণ,
কানা ঘুশো, ফিসফাস,
অজ্ঞাত পরিচয় হীন এক লাশ ।।


খোঁজ,খবর,তত্ত্ব তল্লাশি,হেথা হোথা
তারই মাঝে কারো ,বুকফাটা ব্যাথ্যা।।
কারো বা সহানুভূতির কড়চা, বাক্যবানে ।
অবশেষে স্বমস্বরে বলে ওঠে,
দেখেছি ওকে মদন বাবুর চায়ের দোকানে ।।