হয়তো শেষ গোধূলির মতো আমিও অস্ত যাবো আঁধারে,
হয়তো নিজেকে ঠিকানাহীন বস্তুতে রূপ দেবো;কিংবা আঁধারে নিজেকে মিলিয়ে,মেঘের সাদা হয়ে ফিরবো বকের সাদায়,কিংবা শিউলীর পাপড়ী জুড়ে গভীর সাদার জমাট হয়ে।


নয়তো শৈশবের উজ্জীবিত হাস্যোজ্জ্বল ঠোঁটে,শতবছর পুরোনো গাছের রৌদ্রস্নাত পাতায়,নতুবা শীতের ভোরে ধান পাতার ক্ষুদ্র শিশির হয়ে।


ব্ল্যাকবোর্ডে ভেসে থাকা অ আ ই হয়ে শিশুর রেটিনায়,নয়তো পাহাড়ি নগরের সবচেয়ে উঁচু স্থানের গাছে ক্লান্ত পাখির বেশে,যে ডালে এসে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে,নগরটাকে ক্ষুদ্র চোখে ক্ষুদ্র করে দেখে।


অথবা শালবনে স্নিগ্ধ হাওয়ার দলে,ডালে ডালে ছুটোছুটি;কিংবা গাঙচিলের ঝাঁকে মিশুক রোদ হয়ে মিলে যাব গাঙচিলের পাখে পাখে।নীল জলের সর্বোচ্চ ঢেউয়ের চূড়োয় উড়ে বেড়ানো জলফড়িঙের হাজার চোখে প্রতিবিম্ব হয়ে।


যুদ্ধের ময়দানে শান্তির প্রয়োজনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাঝে কোনো এক শান্তিপ্রিয় মগজে শান্তির কামনা হয়ে বসবো চেপে,বারুদের গন্ধে কোনো অচেনা হিংসা ধ্বংসকারী সুঘ্রাণ হয়ে,নয়তো হিংস্র মনে প্রাণের প্রতি প্রেমের রূপে।


দিন ফুরানোর ব্যস্ত যাত্রায় শালিকের ডানায় আমিও হবো ঘরে ফেরার আকাঙ্ক্ষা;অথবা শুশুকের ভীড়ের মাঝে অদেখা আনন্দপূর্ণ আলাপচারিতা হয়ে,সন্ধ্যেবেলায় পড়ন্ত সূর্যের রক্তিম আলো যে জোনাকি সাদরে মাখে গায়ে,তার চোখের তৃপ্তি হয়ে ফিরবো ফের।


শিশুর জিভে ফুটে ওঠা প্রথম বাংলা হয়ে ফিরবো আমি,মায়ের চোখে প্রথম মা হবার মমতা হয়ে ফিরবো আমি;গাঁয়ের মেঠো পথের অতুলনীয় সৌন্দর্য দেখে ফুলে ওঠা বুকের ভেতরকার খুশি হয়ে ফিরবো আমি,
সরষে ক্ষেতের হলুদের সাম্রাজ্যে শৈশব দলের মুখের হাসি হয়ে ফিরবো আমি;নদীর বুকে কৈশোরের প্রাণবন্ত লাফঝাঁপ হয়ে ফিরবো আমি,বৃদ্ধের ঝাপসা চোখেও অবাক রূপে এই  লক্ষ কোটি বছরের পুরোনো পৃথিবী দেখার মোহ হয়ে ফিরবো আমি।
নয়তো বাংলার ঋতু মতো নানাদিনে নানা রূপ-রঙের চাদর গায়ে জড়িয়ে ঢলে পড়বো বাংলার বুকে,
আমি বাংলার বুকে বারংবার ফিরতে চাই,আমি বাংলার সুখে বারংবার নিজেকে মোহিত করতে চাই,
আমি আবার বাংলা হয়ে ফিরবো বলে বাংলায় হারাতে চাই।