চারপাশে আবছা নীরবতার আড়াল
সরিয়ে উষ্ণ রাতের চোরাবাঁকে
গুমোট ঘেরাটোপের চোখে ধুলো দেওয়া
গৃহবন্দী শরীর স্ট্যানলিভিলের দিকে
যাওয়ার পথে পোর্ট ফ্রাঙ্কুইতে অকস্মাৎ,
মোবুতু’র সৈন্যরা দড়ি দিয়ে বেঁধে
লিওপোল্ডভিলের ব্যবধানে তখন কি
মনে পড়েছিল আসল পদবীর দ্যোতনা!


পরাধীন কঙ্গোর বেলজিয়ান শোষণ বুকে
নিয়েও কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা
দু’চোখে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন,
দু’হাতে এম.এন.সি’র কর্মভার
আর সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির
মাধ্যমে প্যান-আফ্রিকান নীতি,
ঋজুস্বভাবে ছিঁড়ে ফেলে বিদেশী শৃঙ্খল
অসহায় কৃষ্ণাঙ্গদের স্বাবলম্বী হতে শেখানো!


স্বাধীনতা উদযাপনের রঙীন অনুষ্ঠান,
বেলজিয়ান রাজা ব্যওদ্যওয়িনের ভাষণের প্রত্যুত্তরে
প্রস্তূতিহীন অনমনীয় আগুনের ঝলক
জাতির মেরুদন্ডে বিদ্যুৎ সঞ্চার করলেও
কাতাঙ্গা অপসারণের দাবীতে সোচ্চার মূর্খেরা
ডেকে আনে কঙ্গো ক্রাইসিস,
বেলজিয়ান মদতে ধ্বসে যাওয়া দেশের
ভেতর মাত্র বারো সপ্তাহের প্রধানমন্ত্রী
পদচ্যুত হয়ে নজরবন্দী ছাইচাপা!


সেখান থেকে পালাতে গিয়ে ধরে নাও,
লিওপোল্ডভিল থেকে থিসভিল হয়ে
সুদূর এলিজাবেথভিলে নিয়ে যাও,
কাতাঙ্গান-বেলজিয়ান অফিসারদের অকথ্য
অত্যাচার শেষে সে রাতেই কোনো নির্জন
গাছে বেঁধে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে
ঝাঁজরা শরীর মাটিতে পুঁতে দাও,
রেডিও’র ভুঁয়ো খবরে যে আগুন দিগ্বিদিক ছড়াবে
সেই আগুনের আগুয়ানকে তোমরা নেভাবে কিকরে!



বিঃদ্রঃ                  ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই জানুয়ারী মঙ্গলবার রাত সম্ভবত ৯টা ৪০ থেকে ৯টা ৪৩ মিনিটের মধ্যে স্বাধীন কঙ্গোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী, লেখক, সংগঠক, স্বাধীনতা-সংগ্রামী প্যাট্রিস লুমুম্বাকে হত্যা করা হয়।। এই হত্যার সাথে কঙ্গোর তৎকালীন নবনিযুক্ত সরকার, কাতাঙ্গা কর্তৃপক্ষ, আমেরিকা (সি.আই.এ) এবং ব্রিটেন (এম.আই.সিক্স) জড়িত ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।। জাতিসংঘ এই হত্যায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল।। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা যাওয়া এই দৃঢ়চেতা নেতাকে মানুষ কোনোদিনও ভুলবে না।।