রোম্যান্টিক কবিতা লিখতে ভুলে গেছি,
পুরোনো শ্মশানের পিছনে বসে
আগাছাভর্তি ভগ্নাবশেষের পাশে
শুধু তারই অপেক্ষায় মিছিমিছি।
গহীন আঁধার ঘনিয়ে আসে
শেষ মাঝির হাঁক হাওয়ায় ভাসে
পাতলাভাবে কাছে আসে খুব অল্প
এক চিরাচরিত ইংরেজ সাহেবের গল্প
ভাসা ভাসা আবছা নেশার মত
ঐ জলে মিশে আছে রক্ত আর ক্ষত!
গাছের ডালে ডালে বেতের দাগ,
দূর গ্রামশেষের পতিতালয় থেকে সন্ধ্যার রাগ
যেন মলিন হয়নি সময়ের বাহুপাশে-
কাছেই কোনো কুটীরে বৃদ্ধ কৃষক কাশে
একনাগাড়ে জ্বলতে থাকা তারা হাসে
আমার পাগলামোর গভীরতা অনুভব করে
সাহেব যেদিন পথ হারিয়েছিলেন বুকের ভিতরে
সেদিনও কি সে এইভাবেই হেসেছিল?
পাষাণহৃদয় এক গ্রাম্য যুবতীকে ভালোবেসেছিল
কোনো এক অসতর্ক মুহূর্তে আলোর অজান্তে
রাতজাগা চোখ নিটোল কামনার প্রান্তে
পায়চারি করেছিল নতুনত্বের সৌরভে
গোরা সাহেব বদলাতে থাকেন, নীরবে…
নীরবে পাষণ্ডতা ছাই হয় প্রেমের আগুনে।
রঙ ফিরে এসেছিল গ্রামে সেবার ফাগুনে
নানান রঙ, উৎসবের সকালে-পরবের রাতে
রঙবেরঙের কত খেলনা শিশুদের হাতে
কত উচ্ছ্বাস-কত খেলনা-কত উষ্ণতা
জমি থেকেও মুছে গেছিল সব মলিনতা
ধীরে ধীরে…সাহেবের অব্যক্ত ভালোবাসা
খুঁজে নিতে পারেনি কোনো প্রকাশের ভাষা,
আঁধারে শুরু হয়েছিল আর আঁধারেই শেষ-
বদলির পর রইলো না গ্রামে ভালোবাসার লেশ।
আবার নৃশংসতা, আবার অত্যাচার, আবার চাবুক
চিরে দিয়ে যায় আমার কবিতার বুক
বুলেটের নীরবতার মাঝে! এই নদী দিয়ে
বয়ে গেছে কত চোখের জল নিয়ে
সময় অথচ…অথচ সোনালী চাঁদের আলো
কালো জলে ভাসতে থাকলেই তো ভালো
লাগে চুপচাপ তাকিয়ে থাকি সেদিকে
যেখানে অব্যক্ত ভালোবাসা হয়না ফিকে
কোনোদিনও আমার লেখনী তা লিখতে
পারেনি-পারবেওনা সে শিল্প শিখতে-
গুজব আছে আজও নাকি সাহেব আসেন এখানে
প্রতি ফাগুনে, মায়াবী জ্যোৎস্নার আলোয়ানে
পুরোনো শ্মশানের পিছনে বসে
আগাছাভর্তি ভগ্নাবশেষের পাশে
মনে হয় যেন হৃদয়ের খুব কাছাকাছি
শুধু তারই অপেক্ষায় বসে থাকেন মিছিমিছি।