বর্ণহীনদের ভিড়ের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকি
আমরা দল বেঁধে,
লাল আলো জ্বলে উঠলে রাস্তা পার হই
তাড়াতাড়ি- তবে সাবধানে।
অবাক চোখের সামনে দিয়ে সাইরেন বাজিয়ে
চলে যান নেতা-মন্ত্রীরা,
এদিক-ওদিক অনেক দৌড়াদৌড়ি হল তবে
মিলের দরজা আর খুললো না।
জানতাম, তবে কোথাও যেন তলানী আশা ছিল
যে ঝান্ডা ধরলেই হয়তো পুরোনো
দিনগুলো আবার ফিরে আসবে!
সেই দিনগুলো…যখন
ফি মাসে বউকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া
একবার, আর সপ্তাহে একদিন মাংস পাতে … ।
মেয়েদুটো বছর বছর নতুন ড্রেস পরে
ইস্কুলে যেত খোশমেজাজে,
বিশ্বকর্মা পূজোর সন্ধ্যেতে ঠাকুর দেখতে যেত
মিলে আমার হাত ধরে।
আজ কোথায় সেই দিনগুলো?
নোংরা বস্তির ছোটো ভাড়া ঘরের পাশে
যে ঝুপড়িটাতে জ্বলে বাল্বের আলো,
ওটাই আমার তেলেভাজার দোকান-
সন্ধ্যের দিকে তা-ও একটু ভিড় হয়।
বউ? বউ এখন তিনবাড়ি রান্নার কাজ করে,
মাইনে সেরকম কিছু নয়;
বাবা বিয়ে দিতে পারবেনা জেনে বড়োমেয়েটা
পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলো দু’বছর আগে,
শুনেছি নাকি সেই অটো ড্রাইভারের সাথে
বেহালার ওদিকে কোথায় যেন সংসার পেতেছে।
বাড়ি ফিরে আসেনি আর,
আমিও খবর নিতে চাইনি কোনোদিন-
কি জানি কখন কি শুনবো!
তবে ভগবানকে ওর জন্য ডাকি প্রতিদিন
সময় পেলেই, দোকান বন্ধ করে
রাতে ঐ খুপরি ঘরটাতে গিয়ে ঢুকি পা টিপে টিপে,
চোরের মত-
সস্তা নারকেল তেল আর ঘামের গন্ধমাখা
মাদুরের কোণটাতে গিয়ে চুপচাপ
ঘুমিয়ে পড়ি।
মাথার ভিড়ে হারিয়ে গেলে আমাদের যে চেনা
যায়না হাজারো চেষ্টা করলেও
অথচ … দামী সেন্টের রঙ কিংবা মখমলী
কাপড়ের গন্ধ সব আলাদা করে দেয়।
আমরা এক নই বোধহয়
কেউ লাল, কেউ সবুজ, কেউ গেরুয়া,
আর আমি বর্ণহীন … একেবারে ফ্যাকাসে
এই হরেক রঙের মেলায় … নাগরদোলা
না, আরো অনেকে আছে আমার পাশে!
বর্ণহীনদের ভিড়ের ভেতর দাঁড়িয়ে আছি
আমরা দল বেঁধে … ।