(১)


লক্ষ্যচ্যুত অজানা সৌরভের শুভাগমন আমার দেহে
প্রতিনিয়ত নিয়ে আসছে এক অচেনা শুচিতা,
যেন আমাকেও মিশিয়ে দিতে চাইছে এই শুকনো
গহন বনে; দূরে কোথাও শুরু হয়েছে শ্রুতিমধুর
শুভানু্ষ্ঠান, আর মাতোয়ারা আমি, রাতের আকাশে
শুকতারা খুঁজে না পেয়ে এগিয়ে চলেছি শুধু কোনো
এক অদেখা ফুলের শুচিশুভ্র ঘ্রাণ অনুসরণ করে।
মন বলছে ভুল পথে এগিয়ে চলেছি, কিন্তু যে ভুলে
এত শুদ্ধতা, এত প্রশান্তি, তা কোনোদিন ভুল হতে পারেনা;
এ নিশ্চয় অনুভূতির সেই শুক্ল রঙ যা শুনিয়ে যায়
হাজার হাজার বছর আগের কোনো এক সম্মোহিতের
শুচিস্মিত গান কিংবা ভাসিয়ে নিয়ে আসে
কোনো শুষ্ক মৃগনাভির অনুরক্ত সুরভি!


                               (২)


এই অভ্রংলিহ বনস্পতির অরণ্যেই হয়তো কোনোদিন
কোনো এক রাজকন্যা ভ্রমণ করতে করতে তোমার
সুগন্ধে, ভ্রমক্রমে পথ হারিয়ে ফেলেছিল ঠিক আমারই
মত; তখন হয়তো ভ্রাম্যমান ভ্রমরের দল জানতোও
না যে স্বর্গোদ্যানের কোনো দুর্মূল্য পুষ্পকে ভ্রমীতে
আবদ্ধ করতে পারে তোমার পাপড়ির একটি ভ্রূকুটি।
সেই রাজকুমারী সেদিন প্রথম ভ্রমান্ধ হয়ে তার
রজতশুভ্র ত্বকে অনুভব করেছিল নিখর্ব শিশিরপাতের
স্বপ্নময় সংগীতালেখ্য, নাকি সে কোনো আতরদান
থেকে পান করেছিল জীবনের চেয়েও সুমিষ্ট অমৃত,
যা তার ভ্রূলতায় এনেছিল তার উদভ্রান্ত প্রেমিকের
শীতল জলছবি; নৈষ্ঠিক ভালোবাসার আজ যেন ভ্রূণহত্যা
হতে চলেছে এই নৈসর্গিক ভ্রমের মাদকীয়তায়!


                             (৩)


মঙ্গলময় মহালয়ার সেই ভোরে সবাই যখন পিতৃতর্পণে
নিমগ্ন, তখন কোনো এক মদিরাক্ষী সাঁওতাল রমণী এই
মহীরুহের অরণ্যাণীতে মহুয়ার মধু সংগ্রহ করতে এসে,
তোমার মনমোহিনী সুবাসে মোহিত হয়েছিল হয়তো।
তার মর্মবিদারী দুঃখের কাহিনী উপশমের নতুন ভাষা
খুঁজে নিয়েছিল তোমার মোদিত মরুদ্যানে, কিংবা হয়তো
তুমি তার বেদনার মাত্রা এত বাড়িয়ে দিয়েছিলে যে
সেই স্বস্তির মড়কের ক্ষণেও তার রোমে রোমে
আবির্ভূত হয়েছিল শ্বেতশুভ্র মন্মথের অস্তিত্ব।
এই দুনিয়ার কোনো পরিত্যক্ত মঞ্জিলে তার মৃত
প্রেমিকার মনোরম মঞ্জীরের রব শুনে যে পুনর্জাত
মানুষের মন অতীন্দ্রিয় মদোন্মত্ততায় ভরে উঠেছিল,
সেও কোনোদিন অন্তরে দেখতে পায়নি এই মহান নিধুবনকে!


                              (৪)


হে অজ্ঞাতনামা বনফুল, কেন জানিনা তোমার নান্দনিক
উপস্থিতি অন্তত একবারের জন্য দেখতে ইচ্ছা করে,
যাতে আমিও হারিয়ে যেতে পারি সেই নাবিকের মত
যে বিশ্বজয়ের নেশায় বিলীন হয়ে গেছে ইহলোকে।
কিন্তু ভয় হয়, ফজরের নামাজসম তোমার পবিত্রতা, যদি
আমার দৃষ্টির মলিনতায় নাপাক হয়ে যায়, কিংবা
আমার মনোমধ্যে লুক্কায়িত নারাচের আঘাতে যদি তোমার
নাভিশ্বাস উপস্থিত হয়! হে শুভ্রমনা, তারচেয়ে বরং
আল্লার মত অদৃশ্য থেকে নাশ করে দাও আমার
অন্তরের বিষাক্ত নাগফণীগুলোকে; নাগালের বাইরে থেকেও
ধরা দাও আমার অনুভূতির নাগালের মধ্যে, যাতে
আমার নাসাপথে কোনোদিন প্রবেশ করতে না পারে এই
দুনিয়ার কোনো নারকীয় বাতাসের নাতিশীতোষ্ণ তরঙ্গ।