আমার মাতামহ যিনি
শুভ্র শরতের নরম কাশফুলের মতো যার কেশ।
শ্বেত বর্ণের চিকননকশা পারের সাদাসিদে যার বেশভূষণ।
দুই চোখে যার পরিপূর্ণ পূণ্যের পরিনমতায়
পরিতৃপ্তির ছায়াপাত।
মুখজুড়ে যার খোদাভক্তির সুস্পষ্ট প্রকাশ।
কথায় ও কর্মে পরহেজগারির নূরানীচিহ্ন।
কামিয়াবীর স্বচ্ছপ্রকাশ যার নরম আচরনে
এবাদতবন্দেগীতে একটুও গাফলতি ছিল না যার কোনদিন।
আমাকে দেখলেই যে হাসীমুখে বলতো
“ওরে আমার মানিক,পঞ্চরাজার ধন।“
আসলে আমি একজন সাধারন জমিদারের সম্পদও হতে পারিনি।
পঞ্চরাজার ধন সেতো অকল্পণীয় বিষয়।
ওটা ছিল আমার নানীর অতিআদরের বহিঃপ্রকাশ।
স্বপ্ন কিংবা দিবাস্বপ্ন
অথবা আশির্বাদ।
মধ্যবয়সী নানীকে দেখেছিলাম একজন পূর্ণকর্মা গৃহস্থবধু
বাড়ীতে পূর্ণ বাঙালীয়ানা এবং উপযুক্ত ধার্মিকতার প্রকাশ।
সে এখন জীবনের সায়াহ্নবেলার বিদায়ী পথিক।
জীবন নদীর বেগবান তরঙ্গমালা থেমে গেছে আজ।
সেখানে এতটুকু পানির চিহ্ন নেই বললেই চলে।
এখন সে শয্যাশায়ী।
ওপারে যাওয়ার অপেক্ষায় অপেক্ষমান
যে কোন দিন মাঝি এসে নিয়ে যাবে তাকে
ভব নদীর ওপারে।
শরীর শুকিয়ে শুকনো খড়ের মতো পরে আছেন তিনি।
তারই স্মৃতিবহ কয়েক যুগ আগের পুরোনো বিছানায়।
বিশ্বপালনকর্তার কাছে প্রার্থনা আমার
তার মৃত্যু যেন হয় স্বপ্নের মতো
সুগন্ধি ফুলের মতো।
কাশফুলের কোমল পেলবতার মতো।
অবুঝ শিশুর মতো নির্জিব শিশু আজ সে।
তাকে দেখলে সহজেই মনে হয়
কত বড় অসহায় মানুষের জীবন
কি নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি সে আজ।
বিশ্বকর্তার কাছে আবারো করজোড়ে মিনতি
বিদায়ের দারুণ কালে
তুমি তাকে কাছে ডেকে নিও
পরম স্নেহে।
৪৬/২