আমি কবি হতে চাই না
আমি এই শ্যামলা হিজল গাঁয়ের রাখাল হতে চাই।
কোন একদিন
গাঁয়ের পিছনের চিত্রহারা নদীটির কাছে চলে যাবো
নদীর তীরবর্তি বয়স্ক বটগাছটার ছায়ায় দাঁড়াবো খানিক।
গরুগুলোকে খুটি দিয়ে বেঁধে ফেলবো কাছাকাছি
পতিত জমিটার ঘাসের উপরে,
যেন ওরা দুষ্টোমি করে পরের জমিতে না যায়।
তারপর ধীর পায়ে গিয়ে বসবো শিকড়টার শিয়রে।
গাছে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে দিয়ে বসব।
পরম শান্তিতে চোখদুটো বন্ধ রাখবো কিছুক্ষণ।
তারপর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকবো আমি
পাকা ফসলের ডালি ভরা হলুদরঙা পাথারের দিকে।
বিচিত্র রকমের পাহাড়ি মেঘের দিকে একটানা তাকিয়ে দেখবো
মুগ্ধ চোখে।
দুরের শ্যামলা গাঁয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবো শুধুই।
মনে মনে বলবো, “কে আছে ঐ গাঁয়ে?
কোন মেয়ে নদীতে পানি আনার ছলে
কেউ কি ভাবছে আমার কথা।
ঘাড়ের গামছাটাকে মাথায় বেঁধে ফেলবো,
তারপর বগলে রাখা তেলচিটচিটে কালো বাশিটা
মুখে তুলে নিয়ে সূর তুলবো।
ভূবনমোহিনী সূর।
গাছের পাখিরা কাছে এসে চারপাশে ঘিরে ধরবে।
গান ভূলে গিয়ে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে।
কৌতুহলী চোখে বলবে,”কে তুমি?,
কোথায় পেলে এই সুর?”
আমার চোখেমুখে দেখা দেবে রহস্যঘেরা মুচকি হাসীর রেখা।
মেঘবালিকারা মাথার উপরে এসে ভীড় করবে
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে।
শুকিয়ে যাওয়া পাশ্ববর্তি শীর্ণ নদীটার মাঝি
দূর থেকে চিৎকার করে বলবে,”কে হে তুমি?
কোথায় বাড়ি?”
কিছুই বলবো না আমি,
মনে মনে হাসবো খানিক।
আমার চোখের সামনের প্রকৃতি নিঃশ্চুপ হয়ে যাবে তখন।
সবাই যখন অনুনয় করে বলবে,
“ বলোনা রাখাল, কোথায় পেলে এই বাঁশির সুর?
আমি বলব, এ তো সূর নয়,
এ হলো মায়া।
জীবনের মায়া, জগতের মায়া।“
ইসস, আমি যদি হতাম
সেই রকম কোন রাখাল
সেই রকম কোন বাঁশিওয়ালা।


৫০/১