এদিন থেকে শত বছর আগে
( মুজিব শতবর্ষ)


প্রতীক্ষার সেই দিন সেই ক্ষণ
স্বাধীনতার ঘোষণা–অমর ভাষণ
মুক্তি সংগ্রামের ডাক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কাব্য কথন,
আছড়ে পড়া উচ্ছ্বাস টগবগে প্রাণ
তিল ঠাঁই নাই আর পূর্ণ ময়দান
বজ্রকন্ঠে হাঁকে পিতা বিস্ময় গণজাগরন
মুক্তি মন্ত্রে বলীয়ান যায় যদি প্রাণ।
কালজয়ী সে ভাষণ আত্ম পরিচয়ে
দিশেহারা জাতি মিলে নব দিশায়ে
জয়বাংলা চিরকালে গ্রোথিত হৃদয়ে
ইথরে ভাসে সে ভাষণ দিগন্ত পেরিয়ে
হানাদার গোষ্ঠী ওপর পড়ে ঝাঁপিয়ে
ছাত্র-জনতা সবে এক হয়ে।
স্বাধীন তরে প্রস্তুত প্রাণ মায়া ত্যাগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


দিনে দিনে শহিদ জ্যামিতিকে বাড়ে
স্বাধীনতা সিঁড়ি হ্রাসে রক্ত পথ ধরে;
পঁচিশ মার্চ রাত্রি মধ্য প্রহরে
পাকসেনা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি ওপরে
রক্তগঙ্গা বহে প্রতি ঘরে ঘরে
রক্তে সিন্ধু ডুবায় পাক হানাদারে
স্বাধীনতার ঘোষণা আসে বাঙালি তরে
কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা পিতা পাঠান বেতারে।
ছাব্বিশ মার্চ যামিনীর প্রাক ভাগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


বন্দি জাতির পিতা পাক কারাগারে
বঙ্গবন্ধুর ডাকে প্রাণ পায় দেশ মুক্তি তরে
পিতৃ কষ্ট কাঁদন মাতৃর অসহিষ্ণু বেদন
ভগ্নির নির্যাতন ভ্রাতার যন্ত্রণা মরণ
সব ভুলে সব ছাড়ি উৎসর্গীকৃত প্রাণ
দেশ মাতা মুক্তি আশে হানাদার সংহারে।
কতেক কুচক্রী বনে রাজাকার পাক দোসরে
সাড়ে সাত কোটি বাঙালি জীবন মরণে
এক আত্মা এক প্রাণ অংশীদার  বেদনে
মানবেতর দিন যায় বাঙালির জীবনে
লড়াই চলে সর্বত্র পাকসেনা নিধনে
কোটি প্রাণের ঠাঁই হয় ভারত শিবিরে।
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরাস্ত হানাদার
মুক্ত বাতাস বহে ষোল ডিসেম্বর
শ্যামলীময়ে উঠে রক্ত লাল প্রভাকর
মুক্ত দেশে আহা!কী স্বাদ স্বাধীনতার!
সার্বভৌম রাষ্ট্রে উড়ে জনতা মুক্ত খগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


চরম অর্ঘে পাওয়া এ স্বাধীনতা
লাখো শহিদের রক্তকথা
লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানি গাথা
হৃদয়ে মর্মরে জাগানিয়া ব্যথা
ধ্বংশ যজ্ঞ বাতাসে লাশের গন্ধ হেথা
তবুও বাঙালি মাঝে খুশির বারতা
সব হারিয়েও সবে একতায় জাগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


বাহাত্তরে দশ জানুয়ারি
ঐতিহাসিক দিন কভু ভুলতে নারি,
রাষ্ট্রপতি পিতা পৌঁছেন হৃদয়ের দেশে
মৃত্যু দুয়ার থেকে ফিরে বীরবেশে
'জয় বাংলা' ধ্বনিত আকাশে বাতাসে
উদ্যানে জনস্রোত মিশে
জন সমুদ্র রচে নিমিষে নিমিষে।
মঞ্চে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি
কাঁদলেন কাঁদালেন অশ্রুভেজা সকলি
তবুও আনন্দ সাজে সব প্রাণ মাঝে
হৃদয়ে সুর বাজে–উথলি
"আমার সোনার বাংলা-
আমি তোমায় ভালোবাসি''
নদীতে সারি সারি নৌকা সমুদ্র ভরা জলরাশি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি
ওঠোনে সোনার ধান রাশি রাশি
বাঙালি হৃদয় দোলে সুখ সাগরে ভাসি।
জন্মেছি মা তব ক্রোড়ে সুখ স্বর্গে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পঙ্গু অর্থনীতি
ভাবলেন নেতা পুনর্গঠনে নাহি গতি
দিবা নিশি নাই যতি
ক্ষেত-খামারে জোয়ার স্রোতঃস্বতী
সোনার বাংলা গড়ার জনক প্রীতি
শিক্ষাঙ্গনে তপন জ্যোতি
শিল্প-কলে নব সাজ নব রীতি
বৈরিতাহীন বিদেশ নীতি
ধর্ম বর্ণ বিভেদহীন সবাই বাঙালি জাতি
সব চিন্তনে বঙ্গবন্ধু বাংলার স্থপতি।
সমধিকার ভোগে সবে কেউ নয় দুর্ভগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


স্বাধীনতার সোনালি অরুণ
সকলে মিলে করবো যতন
কুচক্রীরা খুঁজে দিন ক্ষণ
পাক প্রেতাত্মাদের হয়নি মরণ।
কালের চাকা থমকে যায় ক্ষণতরে
হৃদয়ে বেদনার ঢেউ আছড়ে পড়ে
পৈচাশিকতা ঘটায় নিষ্ঠুর বর্বরে
নির্মমতা চলে স্থপতির ওপরে!
স্বজনের স্তব্ধ প্রাণ বত্রিশ নম্বরে,
এমন নিঠুরতা ইতিহাসে আর নাইরে!
ঘাতকেরা এই মাটি জলে ওঠে বেড়ে!
কী করে সাজে! পিতৃহত্যা স্বপরিবারে
পাষন্ডতা শিশু রাসেল পরে!
স্রষ্টার আরশ নড়ে।
পরাস্ত নিন্দিত হাসে মুজিবের দেশে!
ধূসর ইতিহাস রচে বিশ্বাস নাশে
ঘৃণায় অশ্রু গড়ে পাষন্ড উল্লাসে
মীর জাফরের বংশধর ঠাঁই নাই এই দেশে।
এমন মহান নেতা নাহি জন্মে যুগে যুগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


(চলবে)
রচনাঃ১৬/০৩/২০২০