এদিন থেকে শত বছর আগে
(মুজিব বর্ষ )


এক লৌহ মানব জন্ম নিল
বসন্তকালে যামিনীর প্রথম ভাগে
এদিন থেকে শত বছর আগে।


সুফি সাধক বংশধরে
রত্নগর্ভা এক মাতৃক্রোড়ে
সবুজ শ্যামল ছায়ায়
নদীর কল্ কল্ ধ্বনি স্নিগ্ধ সমীরে
শান্ত সুন্দর টুঙ্গিপাড়া গাঁয়
পল্লি বাংলার অপরূপ আধারে।
প্রথম তনয় খোকা আদুরে সোহাগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।
গোপালগঞ্জের মধুমতি স্রোতের টানে
আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে একখানে—
মিশে গেছে উপনদী বাইগার,
পাল তুলে ছুটে চলে নৌকার সারি
দূর থেকে শোনা যায় ভাটিয়ালি সুর
প্রকৃতির রূপ অনুভবে হৃদয়ে
রাখাল ছুটে পথধূলি উড়ি
ঘুঘু পাখির ডাক বাঁশির সুর
নড়ে চড়ে ওঠে নিঝুম দুপুর
নদীর ঢেউয়ের ন্যায় মনোহরি।
রিনিঝিনি শব্দ বৃক্ষ পাতার
থির থিরে ওঠে সমীর অনুরাগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


ঐতিহ্যের গৌরবে সৌরভে
সম্ভ্রান্ত বর্ধিষ্ণু পরিবারে
গরিব দেশের সংগ্রামী নেতা ওঠে বেড়ে,
উৎসর্গীকৃত জীবন তাঁর মানুষ তরে
ছিলো কষ্টের সংগ্রামের
দুঃখের বেদনার
এক সময়ে নিখাদ বিজয়ের।
বৃক্ষ শেকড় রূপ মাটির গভীরে;
কোমল সাহসে ভরা চেতনায় উদ্দীপ্ত
অগ্নিকণার মতো উত্তপ্ত
উজ্জল বর্ণময় এক ছবি– মানবের
সকল তরে হৃদয়ে তাঁর টান লাগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


আকাশের মতোই উদার
নদী স্রোতের মতো বহমান,গভীর
অনাবিল আনন্দে খোকার
কাটে শৈশব কৈশোর
সাঁতার কাটার বক্ষ প্রিয় বাইগার
বরষার জলে ভিজে বৃক্ষ ছায়ায় ঘুরে
অগাধ ভালোবাসা প্রতিটি প্রাণি তরে
অবহেলা অসহন বিধাতার ধরিত্রী নীড়ে।
বিহগে কূজন স্রোত ধ্বনি শুনে
গাছের পাতায় দুরন্ত সমীরে
ছুঁয়ে যাওয়ার দৃশ্য দরশনে
গভীর আলোড়িত যৌবনের রাগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


জ্বলে প্রতিবাদের অগ্নিশিখা-
ফুটে উঠে স্কুল জীবনে
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে
গুরু হামিদ মাস্টার এক কর্মী রণে
ভাবশিষ্য খোকা অন্যায়ে সোচ্চার
ষড়যন্ত্রের জালে পড়ে গ্রেপ্তার,
ভবিষ্যত নেতৃত্ব বীজ
অংকুরিত কিশোর প্রাণে,
খাদ্য মন্ত্রী অবিভক্ত বাংলার
স্কুল পরিদর্শনে একদা খোকার;
দৃপ্ত পদে সম্মুখ পানে
পথ নাহি ছাড়বার,
নির্ভিক কন্ঠে শুধান সমস্যার
প্রধান শিক্ষক ভায়ার্ত– অস্থির
হতবাক সবে মন্ত্রীর সমাধানে।
হোস্টল ছাত্ররা পরিত্রাণ দুর্ভোগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


এমনি প্রতিবাদী কন্ঠস্বর
খাঁটি বাঙালি হয়ে ওঠেন বাংলার
স্ফুরিত অগ্নি চেতনা
আকুলতা সৃষ্টি স্বাধীনতার,
চুকালেন পাঠ প্রবেশিকার
পাড়ি জমালেন কোলকাতায়
বাহির ক্ষিতি সঙ্গে ঘটে পরিচয়
ইসলামিয়া কলেজ,হোস্টেল বেকার
কাব্য মালায় রূপ কথার গল্প হার
জিএস মুকুট ওঠে শিরে
বিনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
সবার প্রিয় মুজিব ভাই
প্রাণবন্ত যুবক,টগবগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


ছিচল্লিশ ইতিহাসের এক অর্থবহ ক্ষণ
মুসলিম প্রধান প্রদেশ নির্বাচন
যুবক মুজিব দায়িত্ব সীমানা চষে বেড়ান
বিজয় পুষ্পে রঙিন সব আসন
দাঙ্গা বিধ্বস্ত কোলকাতা-বিহারে ছুটেন
তুচ্ছ মায়া নিজ প্রাণ
পূর্ববঙ্গে সিলেট যুক্তে-
গণভোটে ভূমিকা চির অম্লান।
সাতচল্লিশে ব্রিটিশের প্রস্থান
ভারত আর দু'টি খন্ড
পূর্ব-পশ্চিম নিয়ে গড়া পাকিস্তান
জন্ম হলো নতুন এক শোষণ বঞ্চন।
রাজনীতির কবি হৃদয়ে শঙ্কা জাগে—
এদিন থেকে শত বছর অাগে।


গনতান্ত্রিক যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য
নিজ হাতে(মুসলিম)ছাত্রলীগের রূপায়ন,
প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন
ভাষা থেকে মুক্তি সংগ্রাম
নেতৃত্বে ছিলে প্রাণপণ
বঙ্গবন্ধুর গড়া সংগঠন।
শাসকের বিষ নজর
পড়েছে বারবার–ললাটে কারাগার
প্রচেষ্টা অধিকার রক্ষার
আইন অধ্যয়ন তাঁর অবসান।
কারারুদ্ধ মুজিব ভয়ঙ্কর
আরো শক্তিতে বলীয়ান
বঞ্চিত মানুষের প্রাণের স্পন্দন
বন্দিশালে দফায় দফায় কাটে জীবন,
ভাষা আন্দোলনে মহাকবির অনশন
ভীত শাসকগণ, অবশেষে মুক্তির ফরমান
দেশময় ইথরে ভাসে এক নাম
সে অমর কাব্যের কবি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দুর্বার গতি তাঁর,
যুক্তফ্রন্ট ঐক্যে বেগবান
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তখন
নব এক আওয়ামীলীগ গঠন।
দলের ভিত দৃঢ়ে নিবেদিত নেতা মন্ত্রিত্ব ত্যাগে–
এদিন থেকে শত বছর অাগে।


সোনার বাংলা শোষকের ভূম
ন্যায্য অধিকার হায়! ধূলিত মিশে
পাক শাসকরা রক্ত চুষে
সামরিক জান্তা জেকে বসে।
অমর কবি হাঁকলেন এসে
ছিষট্টির ছয় দফায় সঞ্জীবনী আসে,
বীজবুনে তাতে স্বাধীনতা তরে
মুক্তির সনদ গাথা শোষিত অন্তরে
গ্রেফতার আগরতলা ষড়যন্ত্র শিকারে।
বিচার নামে মঞ্চায়নে প্রহসন
রাজপথে গগন বিদারী স্লোগান
শত শহীদের রক্তে যায় ভেসে।
গণ অভ্যুত্থানে ভয়ার্ত শাসক প্রাণ
'বঙ্গবন্ধু' উপাধি লাভে কবি মহান
বাঙালি জোয়ার সত্তরের নির্বাচন।
অভাবিত সাফল্যে পূর্ব বাংলা জাগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


ক্ষমতা বদলে গড়িমসি নানা টালবাহনে
বিজয় নস্যাতে ষড়যন্ত্রে শাসক গোপনে
নতুন বছর একাত্তর আসে–
নব আশে নব উল্লাসে
উদিত এক নব ভাস্কর বাংলার আকাশে
প্রতিবাদী শপথ রেসকোর্স ময়দানে
নতুন মঞ্চ সাজে নৌকার গড়নে
ভিড় জমায় লক্ষ লক্ষ জনতা এসে
মধ্যভাগে বঙ্গবন্ধু দু'ধারে নির্বাচিতগণে
পাঠে মুজিব সবে তাই উচ্চারণে
'আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি'
সূচনা কবি গুরুর দেশ-মাতা গানে
সমবেত কন্ঠে"জয় বাংলা" সুর-তানে
বাঙালি হৃদয় হরষে ওঠে নগে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


উর্দি শাসক ইয়াহিয়ার বশ্যগণে
তিন মার্চের সভা বন্ধকরণে
বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাঁধভাঙ্গা ঢলে
বাংলার আনাচে কানাচে দাবানলে
বন্ধ কোর্ট-কাছারি স্কুল কলেজ অফিস ছাড়ি
পাক শাসক পড়ি-মরি
হরতাল অবিরামে
পল্টনে জন স্রোত নামে
রাজপথ প্রকম্পিত শ্লোগানে স্লোগানে
উদ্দীপ্ত সব,মুকুটহীন সম্রাটের আদেশ
আসে কখনে।
পূর্ব বাংলা কাব্যের নতুন সর্গে—
এদিন থেকে শত বছর আগে।


(চলবে)
—রচনাঃ১৬/০৩/২০২০