যদি বাঁচে প্রাণ আরও একদিন


যদি বাঁচে প্রাণ আরও একদিন।
ভোরের বিহগ কূজন
ঊষার রাঙা প্রভাত
মিষ্টি মুখর রবির কিরণ
দূর্বাঘাসে হীরক হাসা শিশির বিন্দু
দখিনা মৃদুমন্দ সমীরণ
কর্মব্যস্ত মানুষের কোলাহল
সবই বাড়তি পাওয়া দান।
যদি বাঁচে প্রাণ আরও একদিন।


একত্র বাসের আনন্দ নিয়ে পরিজন
গুরুজন সেবি হতে পারি পুণ্যবান
সুখ-দুখের সাথী স্বজনের
মুখোমুখি পারিবারিক অন্তহীন সমস্যার
মেনে চলা সামাজিক বিধি-বিধান
এ প্রাপ্তি অতিরিক্ত দাতা মহীয়ান।
যদি বাঁচে প্রাণ আরও একদিন।


রোদেলা দুপুরে ঘর্মাক্ত শরীর
ব্যস্ততা মধ্যাহ্ন ভোজের
বর্ষণ সিক্ত ঘুঘুর ডাক পল্লির প্রান্তর
বিকেলে পদব্রজে প্রবীণের বাহিরে গমন
খেলার মাঠে পদচারণায় শিশু-কিশোর
যুবদের নির্জন বা নদী তীরে ভ্রমন
সবই বাড়তি একদিনের অনুদান।
যদি বাঁচে প্রাণ আরও একদিন।


সন্ধ্যায় কর্মজীবী ঘরে ফেরার তাড়া
রাখাল চলে গোয়াল পানে
মাঠে কৃষক এদিনের পাট চুকান
ঘরে ঘরে সন্ধ্যার কর্মে ব্যস্ত নারীগণ
ধর্মমতে প্রার্থনায় লোকজন
বাড়তি একদিন অভিজ্ঞতায় নয়ন।
যদি বাঁচে প্রাণ আরও একদিন।


গগনে রাতের তারার মেলা
কৌমুদী ভুবনে আছড়ে পড়া
শিশু-কিশোরে লুকোচুরি খেলা
মায়ের চাঁদ মামা দেখানো খুলে বাতায়ন
জীবন পাতায় যুক্ত হলো আরও কিছু ক্ষণ।
যদি বাঁচে প্রাণ আরও একদিন।


কিছু সময় দেখবো পৃথ্বী জুড়ায়ে নয়ন
নিখিলের মনোহরা বৃক্ষরাজির দেয়াল
পুকুর-বিলে ফোটা শাপলা কুমুদ
নেবো বায়ু প্রাণ ভরে ওঠে গিরি চূড়ে
পাহাড়ের কান্না বারি গড়িয়ে পড়ে
শীতল জল ঢলে তটিনী জনম
তটে চামর দোলানো কাশবন
বক্ষে চলা নানা রঙের যান
পুষ্প সুবাস নেবো খুলে মন প্রাণ
মাখবো গায়ে কাল বৈশাখীর বরিষণ
আহা!কী মধুর সুনীল গগন।
এত পাওয়া একদিনের জীবন!


এমন জীবন নিয়ে কেন উদাসীন?
বিশ্বব্যাপী করোনার সাঁড়শি আক্রমন
নিমেষে নিভে যায় হাজারো প্রাণ
সকল রাষ্ট্র লড়ছে প্রাণপণ
আমাদের উপলব্ধির ক্রমশ পতন
নিয়ম ভাঙ্গার নিয়মই যেন মহত্ত্বের লক্ষণ
স্বজনসহ গৃহে সময় দেই কিছুদিন
পরিচ্ছন্নতার বিধি করি অনুসরণ
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি
দৃঢ় চিত্তে সাজাই যাপিত জীবন।


অঘোরে নিজ প্রাণ কেন করবো বলিদান
মানবো রাজ কথন সব বিধি-বিধান
মায়া যদি নাহি রয় নিজ প্রাণ;
তার নাহি অধিকার
এ সমাজ সংসার
সকলের ক্ষতি ডেকে আনিবার।
স্ত্রী পুত্র কন্যার নাহি হও ক্ষতির কারণ;
বাঁচানোর দায় আছে মাতা-পিতা স্বজন।


ভাবায় আহা!কত প্রাপ্তি একদিনের জীবন,
কর্ম হোক বাঁচুক সবে দীর্ঘদিন;
ধরিত্রীর এত রূপ এত শোভা করুক গ্রহণ।


—অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন
  রচনাঃ০৫/০৪/২০২০