কবিতা ও তার প্রেক্ষাপটঃ
পৃথিবীর পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়ের পরিবর্তন। পরিবর্তন প্রকৃতির সমাজের, মানব জাতির, নদীনালা,খালবিল পাহাড় পর্বতের। গ্রাম্য জীবনের জীবন যাত্রা। মানুষের খাবারের তালিকা। গ্রাম্য বাংলায় আজ আর দেখা পাওয়া যেমন বিভিন্ন পাখিদের তেমনি নানান সময়ে নানান খাবার। গ্রামের খাল বিল আর পুকুরে আর মেলে না মাছ আর পশুপাখিদের দেখা। এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে হলেও নজরে পড়ার মত। কিছু দেখা পরিবর্তন নাড়া দেয় হৃদয়ে। আর এই থেকে রচনার সৃষ্টি। আমার এবং অনেকের কবিতা গুলি লিখার পিছুনে কিছু না কিছু  ঘটনা থেকেই যায়।  


     ঘটনাঃ সেদিন ছিল রবিবার। একেবারে সকালে কবি “পূর্বাভাস” সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক কবি ও সাহিত্যিক আবুল কালাম মহাশয় ফোন-
সম্পাদকঃ -মোমিন,আজ একটা সাহিত্য আড্ডা আছে। খুব সকালে চলে এসো। অনেকে আসছেন।


আমিঃ - চেষ্টা করবো।অনেক কাজ আছে।


সম্পাদকঃ- কোন কাজ নয় আজ শুধু আড্ডা। এসো কেমন। বলেই ফোন কেটে দিলেন।
আমি বাড়ির কাজ সেরে সম্পাদক  মহাশয়ের পূর্বের কথা অনুসারে  কিছু লিখা ও ব্যাগ কাঁধে   বেরিয়ে পড়লাম। সেদিন ছিল কবি সাদ সামীন হোসেনের আহ্বানে নিজ গ্রামে বাগিরা পাড়ায়। সেদিন আমি অনেক আগেই সেখানে আবার আগেই পৌছে গিয়েছিলাম। গ্রামটি খুব ভালো লেগেছিল। সবুজে ঘেরা গ্রামটি বিহারের ছোটো নাগপুর মালভূমি আগত দ্বারকা-ব্রাহ্মণী দুই মিলিত নদীর কোলে। মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানার রসুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। সরল সাদাসিদে পলু চাষ, ধান চাষ,পশু পালন ও নদী মাছ ধরা এই সব জীবিকা। এঁকে এঁকে বিভিন্ন স্থান কবি সাহিত্যিকরা এলেন। এই সভায় এসেছিলেন কবি সাহিত্যিক গবেষক(বিষয়-নদী খাল বিল দীঘি পুকুর নিয়ে)ডঃসূর্যেন্দু দে মহাশয়। উনার গবেষণা মূলক অনেক লিখা অনেক প্রতিকায় ম্যাগাজিনে বিভিন্ন সময় দেখতে পায় যায়। সাহিত্য আড্ডা শেষে উনি একা একা সবুজ ঘাসের চাদর পরানো ধান গাছ ঘেরা আল পথ ধরে চলেছেন। আমি সাথ নিলাম। পিছুনে ফিরে তাকিয়ে বললেন-


উনিঃ- এসো ঐ সামনের মাঠটা থেকে একটু ঘুরে আসি।


আমিঃ- কেন স্যার?


উনিঃ- আমি তখন তরুণ যুবক। আমারা গবেষণার বিষয়-নদী খাল বিল দীঘি পুকুর নিয়ে। তিরিশ পরে এখানে এলাম ।চলো দেখে আসি খাল বিল দীঘি পুকুর কেমন আছে।


আমিঃ- মনে হয় তারা আজ বেছে নেই।


উনিঃ-কেন?
আমিঃ-ঐ যেন ধানের জমি দেখছি।


একটু গিয়েই মাথায় দিয়ে,চিন্তায় ভাবতে লাগলেন। আর কি যেন বলতে লাগলেন।


আমিঃ কি হল স্যার? কি ভাবছেন?


উনিঃ- আমি সেই দিনই এই স্থানগুলি পরিদর্শন করার সরকারকে লিখিত আকারে জানিয়েছিলাম। দ্বারকা-ব্রাহ্মণী নদীর বাকা পথ ফেলে আসা শাখা। একদিন বিলুপ্ত হবে। নদীতে কত ছেলে মেয়েরা খেলা করত। মাছ ধরতে। আজ সব স্মৃতির পাতায়। তুমিও কবিতা লিখার আগে গাঁয়ে গ্রামে ঘুরে কি সব লিখতে তাই না।


আমিঃ- হ্যাঁ স্যার, ঠিকই বলেছেন। আমি গাঁয়ে গ্রামে ঘুরে লিখতাম গ্রাম সৃষ্টির প্রাচীন ইতিহাস। আমি সেদিন পেয়েছিলাম একটি মাঠের নাম “নৌকা ডুবি” । আমি কেন এই নাম হল খুঁজতে চেষ্টা করি। যে ইতিহাস পেছিলাম তা হল মাঠের ঐ অংশ ছিল “বিল পাটনের” অংশ সেখানে “রাজা চাঁদ  সদাগরের” নৌকা ডুবেছিল। এ রকম পেয়েছি শাহ চাঁদ ডাঙা, খোঁজার ডাঙা ইত্যাদি মাঠ।পুকুরের নাম অনেক পেয়েছি। কিন্ত বর্তমান সমাজের ছলেমেয়েরা জানে না।  


উনিঃ- তুমি ঠিকই বলেছে। আগামী দিন আরও অনেক কিছু বিলুপ্ত হয়ে যায়ে। লিখিত ইতিহাস থাকবে। মুখে প্রচালিত থাকবে এবং এক সময় সেটাও থাকবেনা। ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে। চলো সন্ধ্যা হয়ে এলো ফিরে যায়। পারোতো গল্প কবিতা আকারে কিছু একটা লিখো ।


আমিঃ-হ্যাঁ স্যার, ঠিকই বলেছেন। চলেন । সবাই চলে গেছেন।
উনিঃ- আরে না না, ঐ যে আবুল কালাম মহাশয়।


সম্পাদকঃ- আরে বাড়ি চলুন। নদী খাল বিল দীঘি পুকুর থেকে জমি। আর জমি  থেকে পাকা বাড়ি। পড়াশুনা নেই। বাইরে গিয়ে টাকা রোজগার। আর জলের উপর বাড়ি।


বাড়ি ফিরে এলাম বার বার একটাই চিন্তা। এত দ্রুত পরিবর্তন।
ঘটনাটি লিপিবদ্ধ করলাম ও স্যারের কথামত লিখলাম কবিতা। কেমন হয়েছে জানিনা তাই পড়েই ছিল।মাননীয় এডমিন ও সরদার সাহেবের লিখায় উৎসাহিত হয়ে আলোছনার পাতায় দিলাম এই কবিতা-


হারিয়ে যাওয়া নদী
     মহঃসানারুল মোমিন


ঐখানে ছিল বিল,
     ছিল প্রেম পিয়াসী নদী।
শৈশবটা সাথী হত,
     এখন পেতাম তারে যদি।


আসত সেথা নানাপাখি
     করতো খেলা কোলাহল।
সারা দিনটি ঘোলা হত
     স্বচ্ছ কাজল আঁখি জল।


সেই জলেতে কাচত কাপড়
     আমার প্রিয়াজন দাদী।
ঐখানে ঐ থাকত যদি
     প্রেম পিয়াসী প্রিয় নদী।


বক পানকৌড়ি নানাপাখি,
      কোথায় হারিয়ে গেছে।
কাজলজলে থাকতো ভরে,
      নানান প্রজাতির মাছে।


নদীর জলে কোলাহলে,
     কাটত সুখে সারাদিন।
কোথায় তারা হারিয়ে গেছে
     রেখে গেছে শুধু ঋণ।