বাড়ির উঠোনে যে পাথর বিছিয়ে দিয়েছিল
ভোরবেলা হাঁটতে যেন পা না কাটে—
সংসারের বড় ছেলেটা।

নামের আগে কোনো উপাধি নেই,
কোনো পদবি নেই,
তবুও পরিবার নামক রাজ্যটির
সবচেয়ে নীরব রাজা তিনি।

সেই ছোটবেলায়
যখন খেলনা চেয়েছিল অন্যরা,
তাঁর হাতে ছিল বাজারের থলে,
চোখে ছিল  সবার চিন্তা,আর
কাঁধে ছিল সংসারের হিসাব।

বোনের নতুন জামার রঙ ছিল তার স্বপ্নের ছায়া,
ভাইয়ের সাফল্যে সে হয়ে যেত দীপ্ত মানিক,
মায়ের মুখের হাসিই ছিল তার ঈদ—
নিজের জন্য কিছু চায়নি কখনো।

তারপর জীবনের আরেক মোড়,
নিজেই একদিন ঘর বাঁধে,
ভাবছিল—এবার বুঝি নিজের জন্য
একটু রোদ মেখে নেওয়া যাবে,
কিংবা সন্ধ্যার খোলা বারান্দায়
চুপচাপ বসে থাকাটা  অপরাধ হবেনা।

কিন্তু জীবন তো বড় কঠিন খাতা,
যেখানে তার নামের পাশে বরাবরই লেখা
“দায়িত্ব”।

বউয়ের অসুখ,
সন্তানের স্কুল,
বাড়ি ভাড়া,
প্রতি মাসের বাকি হিসাব—
আর শরীরে একেকটা রোগ
চুপিচুপি ছুরির মতো গেঁথে যায়।

ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে
সে অপেক্ষা করে না,
কারণ মনে মনে ভাবে—
“এই টাকাটা থাকলে ওদের জন্য কিছু কেনা যাবে।”

অবসরের ভাতার কাগজে
স্বস্তি নামে না,
সেই টাকাও চলে যায়
বাজারের ব্যাগে,
ফোনের বিল আর কিস্তিতে।

এখন সে ফের চাকরির সন্ধানে,
পাকা চুলে
বুকে গুঞ্জন তুলে ফিরে আসে—
“বয়সটা একটু বেশি,
তবু আমি কাজ জানি,
তবু আমি সংসার চালাতে চাই।”

এই মানুষটিকে তুমি দেখো না,
কারণ সে কাঁদে না কখনো,
কোনো দিন অভিযোগ করে না,
শুধু রাতের নিস্তব্ধতায়
তার নিঃশ্বাস একটু ভারী হয়ে ওঠে।

সে মানুষ,
সে ভাই,
সে ত্যাগের গল্প—
যে নিজের জীবনের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে
তোমাদের জন্য সোনালী গল্প লিখে দিয়েছে।