মহাকাব্য মোহাম্মদ ﷺ

পর্ব ১: আলো আসিল আরবভূমে


তিমিরে ঘেরা মরুভূমি, নৈতিকতায় মৃত এক কালে,
মানবতা হাহাকার করিত বিষাদ বিষন্ন জ্বালে।
নারীর ছিল না কোনো সম্মান, শিশুকন্যা পুঁতিত মাটিতে,
মিথ্যা, লোভ, আর অবিচার লুটিত সভ্যতাকে চাটিতে।

বিচার ছিল কূলে কূলে, শক্তির ছিল বন্দনা,
ধনী ও নিপীড়কের হাতে হারায় মানবতাভ্রাতৃত্বের গন্ধনা।
কাবার চারপাশে প্রতিমা ছিল, ছিল না তাওহিদের দীপ্তি,
আরবের বুক ছিল দহন, নিঃসাড় এক অন্তরদৃষ্টি।

উপসাগর জুড়ে ছড়িয়ে ছিল রক্তের শাসন,
ব্যবসা ও লোভের নামে চলিত প্রাণের নাশন।
কোনো নবীর পদধ্বনি ছিল না শতাব্দীর ধুলায়,
আকাশ ও পৃথিবী খুঁজিত এক শুভ্রতার বলায়।

কিন্তু আসমানের সিংহাসনে সাড়া পড়ে এক রাতে,
রব করিল ফেরেশতা, অদৃশ্য এক আয়াতে।
আলো প্রস্তুত, ধ্যানজাগ্রত, তৃপ্ত নয় গুহাবাসী,
হেরা পাহাড়ে নিঃসঙ্গ এক মানব আত্মবিশ্বাসী।

নবীর জন্মদিনের পূর্বক্ষণে ঘটে এক আশ্চর্য কাণ্ড,
অগ্নিমন্দির নিভে গেল, কেঁপে উঠিল পারস্যের জগৎভাণ্ড।
কিসরা হারাল প্রাসাদের চূড়া, অন্ধকারে এল পলক,
সব ইঙ্গিত করিল ঘোষণা—আসিতেছে শেষ নবী মহাশক্তি অলক।

মক্কার এক গৃহে, আমেনা নামের মা,
বহন করিতেছিল যিনি ভবিষ্যতের পরম আলোচমা।
বনি হাশিমের বুকে এলো এক শিশুর আলো,
যার চক্ষুতে ইতিহাস, যিনি জগতকে দিবেন ভালো।

রাত্রি ছিল গভীর, কিন্তু আকাশে উঠিল নতুন তারা,
দুলাল মোহাম্মদ এলেন, কাঁপিল মাটির ধারা।
জন্ম নিলেন যিনি—যাঁর মুখে সত্যের ভাষা,
যাঁর বুকে শুধু করুণা, যাঁর হাতে সত্যের আশা।

মা আমেনা বলিলেন, তাঁর গায়ে ছিল সুবাস,
বাতাস নড়িল ধীরে ধীরে, প্রকৃতি পেল নিঃশ্বাস।
আবদুল্লাহ ছিলেন না পাশে, কিন্তু নবীর ছিলো আলো,
যিনি ছিলেন এতিম, তিনিই আলোর প্রথম প্রভালো।

দুধ মা হালিমা যখন নেন তাঁহারে বক্ষে তুলে,
দেখিলেন আশীর্বাদের বর্ষণ, মরুতে উঠিল ফসল দুলে।
গরু দুধ দিলো বেশি, বকরির দুধে অতৃপ্ত নয়,
শিশু মোহাম্মদের আশীর্বাদ ছিল, আল্লাহর নিজস্ব জয়।

চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে কথা, এই শিশুর চাহনিতে রহস্য,
তার নিঃশব্দ উপস্থিতিতেও জগতের চলে সংশয়চ্ছত্র।
মরু জানে, পশু জানে, খেজুরগাছও পায় বাণী,
এ এক নবজাগরণের শুরু, এ এক ঈশ্বরের টানি।

যিনি এতিম, তিনি হবেন জাতির পিতা,
যার মুখে বলিষ্ঠ ন্যায়ের কথা, অন্তরে শান্তির জ্যোতিতা।
সেই শিশুর পা-ছোঁয়া বালু আজও রাখে স্মৃতি,
আলোর যে প্রথম দীপ্তি এসেছিল নিরব নিভৃতে।