খোলা চিঠি
প্রনব মজুমদার


শৈশবে ভোর দুঃস্প্রাপ্য ছিল।মা ঘুম থেকে টেনে তুলতেন।
মুখ-হাত ধুয়ে চা-রুটি খেয়ে পড়তে বসতে বসতে পূর্ণ সকাল।এভাবেই কাটছিল শৈশব-কৈশোরের দিনকাল।বয়সের সন্ধিক্ষণে প্রথম প্রেমের মত প্রথম ভোর কে পেলাম কেননা ভোরেই প্রেয়সীর কলেজ টাইমিং।স্টেশন অবধি গিয়ে তাকে ট্রেনে চড়িয়ে আসা,ফেরতায় বাড়ি অবধি পৌছে দেওয়া নিত্যকার কাজ।উদ্দেশ্য সান্নিধ্যলাভ।যৌবনে চাকরীও সকালে কাজেই ভোরের সাথে পাক্কা মিতালি।ভোরের প্রেয়সী গিন্নী হয়ে ঘরে এল।তারপর থেকে ভোর আমাকে আদর করে ডেকে তোলে,আমিও সাড়া দিই,নিত্যকর্ম সেরে অফিস ছুট।তবে হ্যা রবিবারটা ভোরকে এড়িয়ে যেতাম জানি তার  মুখভার হবে,সোমবার কাকভোরে উঠে সেটা পুষিয়ে নেব।এইভাবে কেটে গেল অনেক বছর ,ভোর আর আমি যেন হরিহর আত্মা।কর্মজীবনে অবসর পেতেই ভোর কে ভুলে গেলাম,বাজার-দোকান এখন বিগ-বাস্কেট থেকেই সেরে ফেলি।গিন্নীর মহাপ্রয়াণের পর থেকে ভোর আরও বিরক্তিকর।মাঝেমধ্যে আমাকে বিরক্ত করে,আমি রেগে যাই মুখঝামটা দিই।আচমকায় একদিন ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ভোরের সাথে দেখা,দেখি সে আগের মতই অপরূপা।আমি বিভোর হয়ে তাকে দেখতে থাকি,আসলে প্রত্যেকটা  দিনে ভোরই তো নবজাতকের মতন শুদ্ধসুন্দর।
সেই তো প্রত্যেকের জীবনের আশ্বাস নিয়ে আসে।ভোরকে ভুলে যাওয়া তো আত্মবিস্ম্মৃতি।না না আর ভুল হবে না আমি আজ থেকে রোজ ভোরের প্রত্যাশায় থাকব।আপনার কি বলেন ভাই?