অনুষ্ঠিত হলো বাংলা কবিতা ডট কমের আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলন-২০২০। হ্যা, আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলনই। যেহেতু ভারতীয় সম্মানিত কবিদের পাশাপাশি সূদুর অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন সেহেতু এ সম্মেলন আন্তর্জাতিকতার স্বীকৃতি পাওয়ার দাবীদার। এ সম্মেলনকে ঘিরে বসেছিল কবিদের মিলনমেলা। শ্রদ্ধেয় কবিদের আন্তরিকতায় আসর পরিণত হয়েছিল এক প্রাণ এক সুরে। এই সম্মেলনকে ঘিরে সামান্য একটু দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে শতবার পরম প্রভূর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলাম। অনুষ্ঠান কেমন হয়েছে তা বলবেন সম্মানিত উপস্থিত কবিবৃন্দ এবং অতিথিবৃন্দ। সম্মেলনের প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায় থেকে শেষ পর্যন্ত থাকার সুযোগে আমি কিছু গল্প শেয়ার করতে চাই আসরের পাঠককূলের সাথে, যে গল্পগুলোর সৃষ্টি এই আসরকে ঘিরে। আর এই গল্পের কিছু প্রকাশিত, কিছু অপ্রকাশিত।


বাংলা কবিতা ডট কমের বদৌলতে আমার কবি পরিচয়ের প্রাপ্তি। অনেক নিখাঁদ ভালবাসা পেয়েছি এই আসরের কারণে। তাই সবসময় বাংলা কবিতার আসরের প্রতি এক ধরণের কৃতজ্ঞতা এবং ভালবাসায় ভরা দায়বদ্ধতা অনুভব করি। এলাম, খেলাম, চলে গেলাম এই বৈশিষ্ট্যকে জীবনের হাফ সেঞ্চুরী পার করেও আয়ত্ত করতে পারি নি, আর পারবো বলে মনেও হয় না। অবশ্য আমি তা পারতেও চাই না। যাকগে ভূমিকা বড় না করে মূল গল্পে চলে আসি। 


অনেকদিন ধরেই কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল এরকম একটি আসরের কথা ভাবছিলেন। কিন্তু সেই ভাবনার ডালপালা ছড়াতে পারছিল না। উনার এই ভাবনা সম্পর্কে আমিও অবহিত ছিলাম, কিন্তু চারপাশ থেকে তেমন জোরালো কোন সম্মতি না পেয়ে আমিও নীরব দর্শকের সারিতে নাম লেখাই। কবি সোহাগ আহমেদ যাকে আসরের চাঁছাছোলা কবি নামে সবাই চেনেন তার সাথে কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের সার্বক্ষণিক একটা যোগাযোগ ছিল। কবি সোহাগ আহমেদ অর্থাৎ কবি চাঁছাছোলার সাথে আমার আবার কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে কাজ করার সুবাদে যোগাযোগ ছিল। তিনি আমাকে কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের ভাবনার সাথে সম্পৃক্ত হতে এবং নীরব দর্শকের গ্যালারি ছেড়ে সরব দর্শকের গ্যালারিতে বসতে উদ্বুদ্ধ করেন। সত্যি কথা বলতে কী জীবনে ঝুঁকি নেয়ায় আমার এক ধরণের নেশা থাকলেও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সাথে থেকে অযৌক্তিক ঝুঁকি কিংবা পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে একটু সতর্কতাই অবলম্বন করতাম। কারণ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আমাকে শিখিয়েছে জীবনে ব্যালেন্স করতে। ব্যালেন্সহীন জীবনে প্রাপ্তির খাতা সাদাই থেকে যায়। 


কথায় বলে না, কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না! আমারো হলো তাই। কবি চাঁছাছোলার দ্বারা এমনই অনুপ্রাণিত হলাম যে, কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের বাসায় কবিদের মিটিং এ কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের সাথে জোরালোভাবে ঘোষণা দিয়েই ফেললাম, আসর করতেই হবে। তখনই চারপাশ থেকে আসর করতে করণীয় বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসলেও দায়িত্ব পালনে কেউ তেমন একটা কথা বলছিল না। ঠিক মনে পড়ছে না, কেউ একজন একটু খোঁচার সুরেই বললেন, ভেন্যু খোঁজার দায়িত্ব মিলি আপা নেন। আবারো সেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের শিক্ষা ভেতরে জেগে উঠলো। দায়িত্ব নিলেই উপায় বেরিয়ে আসে। বললাম, আল্লাহ ভরসা। মনের ভেতর একটা বিশ্বাস ছিল এই, কোয়ান্টামে হাজার মানুষ নিয়ে প্রোগ্রাম হয়, যারা অত্যন্ত সুপরিকল্পনায় দক্ষতার সাথে এ সব প্রোগ্রামের দায়িত্বে থাকেন তাদের কারো কাছ থেকে নিশ্চয়ই কোন সহযোগিতা পাবো। মিটিং থেকে ভেন্যু খোঁজার ইস্যু মাথায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম।


মাথার ভেতর একটাই ভাবনা ভেন্যু, ভেন্যু, আর ভেন্যু। বলছিলাম, দায়িত্ব নিলে উপায় বের হয়ে আসে। হঠাৎ কেন জানি কবি ফারহাত আহমেদ এর কথা মনে হলো। ওনার সাথে কালেভদ্রে আলাপ হয়। প্রকৃতিই বোধ করি ওনার কথা মনে করিয়ে দিলো। খুব যে ভরসার সাথে ওনার নাম মনে করেছি তা কিন্তু নয়। ভাবনাটা ছিল এমন, উনি আসরের একজন কবি আবার প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা; দেখি আলাপ করে! 


ওনাকে ফোনে বিষয়টি জানালাম, পাশাপাশি ভেন্যুর জন্যে প্রয়োজনীয় শর্তাদিও উল্লেখ করলাম। সব শুনে তিনি বললেন, আচ্ছা দেখছি। আধা ঘণ্টা পরেই কবি ফারহাত আহমেদ এর কাছ থেকে ফোন পাই। তিনি জাতীয় জাদুঘরের একজন কর্মকর্তার ফোন নম্বর দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। যথারীতি ফোনে কথা বলে কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলসহ কবি চাঁছাছোলাকে সাথে নিয়ে ছুটলাম জাতীয় জাদুঘরের উদ্দেশ্যে। সেখানে যেয়ে পাই অপ্রত্যাশিত সাড়া। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনের অগ্রীম পরিশোধ করে বেরিয়ে এলাম। কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের মুখে সম্মেলনের প্রথম পদক্ষেপের সাফল্যের খুশী দেখে খুব ভাল লাগছিল আমার।


কবি ফারহাত আহমেদকে সবিস্তারে জানিয়ে ধন্যবাদ দেই। কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলও কবি ফারহাত আহমেদ এর সাথে কথা বলেন। এরপর কবি ফারহাত আহমেদ এর সাথে আমি, অনিরুদ্ধ বুলবুল, হুমায়ুন কবীর, কবি মোজাম্মেল হোসেনসহ আরো কয়েকজন কবি দেখা করি। তিনি আসরকে সফল করার জন্যে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েই ক্ষান্ত হন না, আর্থিক বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেন। তখনো আমাদের ফান্ড নিয়ে তেমন একটা অগ্রগতি না থাকায় তিনি হলভাড়াসহ সকল কবির মেমেন্টোর দায়িত্ব নিয়ে নেন। এবার  সম্মেলনের প্রস্তুতির পাখায় হাওয়ার গতি বেড়ে গেলো। 


সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে মাননীয় মূল এডমিন পল্লব আশফাকসহ এডমিন-৩ কবীর হুমায়ূনের নের্তৃত্বে দফায় দফায় মিটিং হতে থাকে। সবার মনোযোগের বিষয় একটাই ১৫ই ফেব্রুয়ারির কবি সম্মেলন। কবি ফারহাত আহমেদ ঢাকা থেকে অনেক দূরে নোয়াখালীতে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত । কিন্তু এই সময়টা তিনি যেন পুলিশের চাইতে কবি সম্মেলন নিয়ে ছিলেন বেশী ব্যস্ত। অনিরুদ্ধ বুলবুল প্রোগ্রাম নির্বিঘ্ন করার ব্যাপারে মাঝেই মাঝেই শঙ্কিত হয়ে পড়েন। কবি ফারহাত আহমেদ তাকে সবরকমের আশঙ্কা থেকে দূরে থাকতে বলেন। মজার বিষয় হলো আমি কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল আর কবি ফারহাত আহমেদের মধ্যে কো-অর্ডিনেটরের একটা বেতন বিহীন চাকরি পেয়ে যাই।


কবি ফারহাত আহমেদ এর আন্তরিক অনুপ্রেরণায় কবি হুমায়ূন কবীর, কবি মোজাম্মেল হোসেন, কবি চাঁছাছোলা, কবি জাহিদ হোসেন রঞ্জু, কবি উত্তম চক্রবর্তী, কবি নায়ার সুলতানা লাবণী যেন বেপরোয়া হয়ে উঠলো। তারা ভুলে গেলো দিন আর রাতের পার্থক্য। তাদের জীবনের মিশন এবং ভিশন হয়ে উঠলো ১৫ই ফেব্রুয়ারির কবি সম্মেলন। আর ঠিক এই সময় প্রকৃতি এক নির্মম রসিকতা করে বসে আমার সাথে। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লাম।


কবি ফারহাত আহমেদ তার ভাষায় তার  Unsung Hero দেরকেও পিছনে ফেলে ছুটতে থাকেন। তিনি আমার অসুস্থ্যতার কথা বিশ্বাসই করতে চান না। তিনি ধরেই নেন আমি দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করার জন্যেই অসুস্থ্যতার কথা বলছি। তিনি আমাকে বেশ খানিকটা রূঢ় কথাও শুনিয়ে দেন। পরবর্তীতে অবশ্য কবি জাহিদ হোসেন রঞ্জুর মাধ্যমে তিনি আমার অসুস্থ্যতার কথা জানতে পারেন এবং ফোনে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।


আসলে ফারহাত আহমেদ আসরটিকে শতভাগ সফল করা নিয়ে এতটাই আন্তরিক আর আবেগী ছিলেন যে, কবি নায়ার সুলতানা লাবণী তাকে দশ বছরের বালক অভিহিত করতে বাধ্য হন। কবি ফারহাত আহমেদ এর অনুপ্রেরণায় ভুলে যাই শারীরিক সীমাবদ্ধতার কথা। ঝাঁপিয়ে পড়ি আবার কবি রঞ্জু আর লাবণীর সাথে। আসলে এই দুটো মানুষের ভালবাসাও আমাকে শক্তি যোগাচ্ছিল। আর ওদিকে কবি হুমায়ূন কবীর, (নীরব কর্মীর এর চাইতে বড় উদাহরণ আমি এখন পর্যন্ত দেখি নি) নীরবে সেই গাজীপুর থেকে অফিসের ফাঁকে ফাঁকে ছুটে এসেছেন আসরের দায়িত্ব পালনে। কবি মোজাম্মেল হোসেন, কবি উত্তম চক্রবর্তী নীরবে তেল হয়ে পুড়েছেন আর বাংলা কবিতার আসরের সম্মেলন আলো হয়ে চারপাশ করেছে উজালা।


মূল এডমিন পল্লব আশফাকের ভূমিকা দেখে বিস্মিত হয়েছি। একটা মানুষের কতটা ভালবাসা আর ধৈর্যশক্তি থাকতে পারে তা এবার বুঝলাম। প্রতিটি কর্মীর সাথে তিনি দীর্ঘসময় নিয়ে কথা বলেছেন, অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছেন, দিয়েছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।  সত্যিকারের Unsung Hero হলেন তিনি। আর আমাদের সবার প্রিয় দাদাভাই যিনি এডমিন-৩ এর দায়িত্বে আছেন তিনি শুধু বটের ছাঁয়ার মতো আগলেই রাখেন নি, আসরের নিয়ম নীতি যাতে লঙ্ঘিত না হয় সে ব্যাপারে ছিলেন সদা তৎপর। 


এডমিন-৩ কবীর হুমায়ূন দাদাভাইয়ের সম্মতিসাপেক্ষে চলতে থাকে আসরের প্রস্তুতি। সব কাজের ফাঁকে ফাঁকে সঞ্চালনার জন্যে একটু রিহার্সেলের ব্যবস্থা রাখা হয়। কবি জাহিদ হোসেন রঞ্জুর নের্তৃত্বে রিহার্সেল হয় একদিন। আসলে সবার কর্মব্যস্ততার মধ্য থেকে সময় বের করাটা ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। শুনতে পেলাম কবি ফারহাত আহমেদ এই আসরের জন্যে ছুটি নিয়ে ঢাকা চলে এসেছেন। আমাদের না জানিয়েই তিনি চলে এলেন রিহার্সেল স্থলে। এই মানুষটি বোধ হয় সবাইকে অবাক করতে পছন্দ করেন। আমরা যখন রিহার্সেল নিয়ে ব্যস্ত তিনি তখন মাটিতে বসে আমাদের একের পর এক সংশোধনীতে ব্যস্ত। রিহার্সেল শেষ হতেই ফোনে জানতে পারি ভারতীয় কবিগণ পৌঁছে গেছেন। রিহার্সেল শেষ করে আমরা যার যার বাড়ীর পথ ধরবো, এমনটাই ছিল সিদ্ধান্ত। কিন্তু কবি ফারহাত আহমেদ তাতে বাগড়া বসালেন। অতিথি বাড়ীতে এলে তার সাথে দেখা করা জরুরী বলে তিনি তার গাড়ীতে আমাদের তিন জনাকে নিয়ে ছুটলেন হোটেলে।


হোটেলে পৌছেই তিনি আগত মেহমানদের যাবতীয় খোঁজ খবর নিয়েই ক্ষান্ত হলেন না, তাদের নিরাপত্তায় যাতে সামান্যতম বিঘ্ন না ঘটে তার জন্যে লোকাল থানার কর্মকর্তাদের ডেকে নির্দেশনা দিয়ে রাখলেন। তারপর আরো কিছুক্ষণ ভারত থেকে আগত কবিগণের সাথে সময় কাটিয়ে পরের দিনের প্রোগ্রাম মাথায় নিয়ে যার যার বাড়ীর পথ ধরলাম। বাড়ী ফেরার পথে এবং ফেরার পরেও তার তদারকী চলমান।


পরের দিন যথাসময়ে জাতীয় জাদুঘরে উপস্থিত হলাম আমরা। পরিপাটি সাজানো ফুলে ঢাকা মঞ্চ মুহুর্তেই মনটাকে ভালো করে তুললো। এর পুরো কৃতিত্ব কবি জাহিদ হোসেন   রঞ্জুর একার। আমি আর লাবণী তাকে ফুল পছন্দ করতে অল্প কিছু সময় সঙ্গ দিয়েছিলাম মাত্র। তিনি একাই ফুল সংগ্রহ থেকে মঞ্চ সাজানোর শেষ অব্দি তদারকী করেছেন। কবীর হুমায়ূন দাদাভাই আগত কবিসহ মেহমানদের অভ্যর্থনায় ব্যস্ত। কবি মোজাম্মেল ভাই নাম রেজিষ্ট্রেশনের জন্যে বসে পড়েছেন, তাকে সহযোগিতায় রত আরেক নীরব কর্মী হুমায়ূন কবীর। উত্তম চক্রবর্তীও তার দায়িত্ব পালনে শতভাগ আন্তরিক আর সোহাগ আহমেদ তো ছোটাছুটিতে সবাইকে হার মানিয়েছে। কারণ সকালের নাস্তা থেকে দূপুরের খাবারের সামগ্রিক দায়িত্বে ছিলেন তিনি। আমি ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোর ভুমিকায় লাবণীকে সাথে নিয়ে সঞ্চালনায় সহযোগির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো বললাম এই কারণে সঞ্চালনার জন্যে আসলে যে যোগ্যতার প্রয়োজন তা আমার নেই, আবার তেমন কাউকে পাওয়াও যাচ্ছিল না।


কবি ফারহাত আহমেদ এসেই পুরো অনুষ্ঠানস্থল চক্কর দিতে লাগলেন। তিনি আগেই বার বার বলছিলেন, তাকে যেন কোন চেয়ারে আবদ্ধ না করা হয় কারণ তিনি অনুষ্ঠানটি তদারকীতে থাকতে চান যাতে অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়।  নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে অনুষ্ঠান শুরু করা হয় যা অনুষ্ঠানের জন্যে মোটেও কাম্য নয়। ভবিষ্যতে সময়ের ব্যাপারে আমাদের আরো অধিকতর যত্নবান হতে হবে।


পুরো অনুষ্ঠান কেমন হয়েছে তা আসলে উপস্থিত সম্মানিত কবি এবং মেহমানগণই ভালো বলতে পারবেন। ভুলত্রুটি অবশ্যই ছিল যার পুরো দায়ভার আমরা যারা দায়িত্বে ছিলাম তাদের। এই ব্যর্থতার পেছনের গল্পটুকু বলে নিজেকে দায়মুক্ত করার ব্যর্থ প্রয়াস চালাবো না। শুধুমাত্র সবার সাথে শেয়ার করতে চাই কতটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে আমাদের চলতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানের মূল পরিকল্পনা আর তা বাস্তবায়নের যাবতীয় দায়িত্ব ছিল কবি জাহিদ হোসেন রঞ্জুর উপর। পরিবারকে উপেক্ষা করলেও তিনি তার পেশাগত জায়গাটিকে উপেক্ষা করতে পারেন নি। পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে তিনি পুরো অনুষ্ঠান পরিকল্পনা তৈরী করে আমাকে মেইল করে দেন শুধুমাত্র প্রিন্ট করার মতো সামান্য একটু দায়িত্ব দিয়ে। আমি ওনাকে নিশ্চিন্তে থাকার জন্যে বলে দেই।


অফিসে যেয়ে কাজ শুরুর করার খানিক পরেই হেড অফিসে ডাক পড়ে। ভাবলাম কতক্ষণ আর লাগবে? হেড অফিসে যেয়ে আমি গেলাম আটকে। বেমালুম ভুলে গেলাম রঞ্জু ভাইয়ের দেয়া দায়িত্বের কথা। নিজ অফিসে যখন ফিরে এলাম তখন বাজে প্রায় পৌনে পাঁচটা। আমার ছুটি পাঁচটায়। ঠিক তখন মনে হলো মেইলের কথা। গাড়ীর ড্রাইভার ফোন দিচ্ছে নামার জন্যে, তাড়াহুড়ো করে প্রিন্ট কমান্ড দিয়ে আমি অফিস সহকারীকে সেগুলো গুছিয়ে একটি খামে ভরে দিতে বলি। তারপর দম বন্ধ করে দৌড়ে গাড়ীতে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ি। ভাবলাম যাক কাজটা হলো।


কিন্তু কাজটা কী হয়েছে তা বুঝলাম পরের দিন রিহার্সেলে বসে। কাগজের সাইজ বদলে যাওয়ায় প্রতিটি পাতার অর্ধেক প্রিন্ট হওয়ায় বোঝা মুশকিল কোনটার পরে কোনটা। আমার তো মাথায় হাত! কবি জাহিদ হোসেন রঞ্জু কানার হাতি দেখার মতো হাতড়ে হাতড়ে রিহার্সেল শেষ করে ভারত থেকে আগত কবিদের সাথে দেখা করার ফাঁকে কোন একটা দোকান থেকে প্রোগ্রাম সিডিউল প্রিন্ট করে যখন আমাদের হাতে দেন তখন বাজে রাত এগারোটা। পরের দিন প্রোগ্রাম!!


পর্যালোচনাঃ ০১/ প্রোগ্রামটি করতে যেয়ে বেশ খানিক সময় অপচয় হয়েছে কিছু প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করতে যেয়ে। তাই ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে প্রস্তুতি নেয়ায় আন্তরিক হতে হবে।০২/ যে কোন প্রোগ্রাম করার আগে একটি কার্যকর কমিটি করে জবাবদিহিতার আওতায় রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিলে প্রোগ্রামগুলো আরো সুন্দর এবং নিখুঁত হবে।০৩/ এবারে যেভাবে মূল এডমিন পাশে ছিলেন ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলার পথ মসৃণ হবে।


পরিশেষেঃ মেহেরবানী করে শুধুমাত্র সমালোচনার জন্যে সমালোচনা না করে ১৫ ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি ভুলত্রুটি নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা ভবিষ্যতের দায়িত্ব পালনকারীদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।