অবাক এই পৃথিবীর কাছে আজ আর কোন অভিযোগ নেই আমার!
নেই কোনো অভিমান, নেই কোনো অনুনয়, নেই কোনো অনুরাগ!
প্রার্থনা শুধু এই, -- অবসন্ন শরীরে জমতে থাকা কিছু ঘামের ফোঁটা,
আর পায়ের গোড়ালীতে খুঁজে নিয়ো কিছু শুকানো রক্তের দাগ!
খুঁজে পেলে বুঝে নিও, সারাদিন খুব করে খেটেছি!
রাজপথে পথে দলিত, ক্ষরিত, আলোড়িত, নিরক্ষর মানুষের ভীড়!
সেখানে রঙিন পোশাকের মোড়কে ঢাকা শরীর -- শুধুই একা !
আজ বড় প্রয়োজন একটা শান্তির ছায়া সু-নিবিড়!
তাই সভ্যতার বুক চিরে একা পথে বেশ হেঁটে চলেছি,
যানজটের পাশে পড়ে থাকা সু-বিস্তীর্ণ ফুটপাতের আয়নায়,
দেখেছি নরকঙ্কালের মুখে ধুলোর কলঙ্ক ! -- আর গুনেছি মৃত্যুর মিছিলে কাটা মুন্ডু!
মনুষ্যত্ব, বিবেক, বিচার-বুদ্ধি, -- সে-তো কবেই চাপা পড়েছে ধর্মের বাহানায়!
আর ক্ষুধা জ্বালা! -- সে-তো আজ নয়, বহু পুরনো অসুখ!  -- মানুষের অলীক খুঁত,
তাই ভুল করলেও বেঁচে মরার জন্য একমুঠো ভাত দিও আমারে!
যে ক্ষুধা গোপন থাকে, --  যাকে বারবার মেলতে চেয়েছি শূন্যে,
আর মিথ্যে ধর্মে বুঁদ হয়ে করজোড়ে কৃপা ভিক্ষে করেছি দু-হাত ভরে!
কিন্তু বিশ্বাস করো শান্তি পাইনি, -- তাই ক্লান্ত পায়ে তাড়া দিয়ে,
এগিয়ে চলেছি দূর থেকে দুরন্তে, নির্জন কোনো অজানায়!
যেদিন ত্বকে জেগেছিলো ভাতের ফ্যান! -- অপৃর্ব শহর সেদিন সেজেছিলো অগ্নিসারে।
তবুও প্রার্থনা ছিল এই -- বাবু, থালা ভরে ভাত দিও আমারে ! -- ক্ষুধা যে আমার পেটের ভেতর করে ভস্ম সম্ভাবনাময়!
অথচ রাজপথে বেড়ে ওঠা সামান্য ওই হোটেলের সামনে দেখেছি, - শত শত ক্ষুধার্থ মানুষের ভিড়,
আর ভাতমাখা আঙুলে! - ওমা একি ? -- ওসব কীসের ছাপ ?
ছাপ নয়! ছাপ নয়! ও তো কালশিরে পড়া সামান্য তুচ্ছ এক দাগ!
দেখো যেন ভীখারি বিবেক জেগে না ওঠে! -- নিতে না পারে শ্বাস-প্রশ্বাস !
ভয় নেই বাবু, শত নির্যাতনের পরেও কোনদিন কাঁদতে দেখবে না আমায়,
বিদ্রোহ, আন্দোলন, অনশনেও কোনদিন নামবো না দেখে নিও!
ওসব তো বাজে কাজ, পুঁজিপতি আর মালিকের কৌশল,
আমি তো সামান্য শ্রমিক, -- তাই রাত নামলে বাবু, শুধু দু-মুঠো ভাত দিও!
এই দেখো দুহাত আমার রেখেছি ঢালু, নিয়োজিত কারখানা কিংবা গৃহস্থের নুনে,
কোনো এক চুলার উপর উত্তপ্ত ডেগে আগুনের চুমুতে ফুটছে গো প্রার্থিত ফুলও,
ভাত দিও গো বাবু, -- আড়ষ্ঠ আঙুলে তুলে ধরা ভীত থালার উপর মন খুলে।
আড়াল মুঠিতে নিয়ে রক্ত মেপে, অফুরান ভাণ্ডার থেকে এক কণা আয়ু দিও:---
কোন এক ভেজা চামচে। -- তোমার সামনে নিচু হয়ে কত কেঁপেছি আমিও
শুধু ভাত দিও বাবু, হাতের তৈরী পাতালে এইভাবে ঢেলে দিও!
দেখো কব্জিতে খনিজ অঙ্গার চিহ্ন, -- আর মুখে বিবর্ণ আঘাতের সেলাই!
তবে আজ মৃদু ভেবে আমাকে উপেক্ষা করো না,! -- শ্রম লিখিত মুখে আমিও,
আজ লাইনে গিয়ে দাঁড়াবো! -- ছেঁড়া একফালি অপরিচ্ছন্ন শার্টে,
জীর্ণ পকেটের ভেতর থাকবে কিছু আশার আলোর বাসনা,
শহর ভ্রুণের লাল-সবুজ জরায়ুতে আমাদের ভাতের জন্য শুধু একটা জরুরি বৈঠকে,
সমস্ত মানুষগুলো একবার  জড়ো করো !--- দেখো পরিবর্তন ঠিক হবেই!
বাবু একমুঠো ভাত দিও ! -- আর ভাতের জন্য একটা বৈঠক উপহার দিও!
আর তারপর নাহয় স্বার্থ মতো ভাত-ঘুমে বিষ ঢেলে নিজের স্বার্থ বুঝে নিও!
তবুও একটিবার ভাতের জন্য সবুজের বুকে তোমারা বিপ্লবের ডাক দিও!
আর যদি সম্ভব হয় আমাকেও তোমরা সঙ্গে নিও -- বিপ্লবী দীর্ঘজীবী হোক !