এক নির্জন সন্ধ্যায় এক কলঙ্কিনী রাধা,
ব্যস্ত শহরের নগ্ন কোলাহলের ভিড় পেরিয়ে,
এক সিঁথি কালের লাল টুকটুকে অভিসপ্ত সিঁদুর রাঙিয়ে
,দৈনের দায়ে দেহ বিকিয়ে তোমাদের কাপুরুষত্বে প্রশ্ন ছুড়ে
আমাদের সভা, রুচিশীল সমাজের বুকে ধর্ষণের শেষ পেরেকটি ঠুকে,
আত্মহূতি দিয়েছে আমার বিবেক বারুদের গোপন কারাগারে।
কতকাল তো তোমাদের রঙিন বইয়ের পাতায় পড়লাম,
এই রঙহীন, বিবর্ণ, বর্বর, নিষ্ঠুর, পাষণ্ড, পিশাচী সভ্যতার ইতিহাস!
কখনো কবিতা, কখনো গান, কখনও-বা গল্প হয়ে আমার অন্তর আত্মার,
বিবেক বারুদের সুপ্ত অস্ত্রাগারে তবে কোনদিন কোনো স্পর্শ দিয়ে যেতে পারেনি!
পারেনি কোনো কলঙ্কিনী রাধার মতো রানীকে আমায় উপহার দিতে।
চিরকাল মনে হয়েছে লাল, সবুজের মাঝে তোমরা সেলাম ঠুকে,
নিজের সতন্ত্র কবি সত্বাকে কোথাও যেন দিনে দিনে বিকিয়ে দিয়েছো,
আর বিনিময়ে নিয়েছো জমকালো, ঝলমল, ব্লুটিং পেপারে সাজানো গরীবের রক্তলিপি,
তাতে বড়বড় করে, ধর্ষিতার সিরামে স্বর্ণাক্ষারে লেখা আছে,
তোমাদের পারদর্শীতার মিথ্যাে সাজানো ব্রজবুলি।
অথচ চিরকাল বোকা পাঠকের দল তোমাতে আকন্ঠ ডুবে,
হাতড়ে চলেছে সাম্যের সুর, সত্যের জয়গান কিংবা ধর্ষিত নারীর স্বপ্ন-সুখ।
মূর্খ চাতকের মতো তৃষ্ণার্ত হয়ে স্বচ্ছ সরোবর ছেড়ে বৃষ্টির জল চেয়ে,
একটা অকাল ভাদরের পায়ে মরা যৌবনের বসন্ত বেড়ী পরিয়ে চেয়েছে পুষে রাখতে,
আর ঠুলি পরা সমাজের চোখে কবিতা, গান, গল্পের মাঝে নিজেদের জ্ঞানী করে তুলতে,
পুঁথিগত শিক্ষার দুয়ারে তোমাদের ঠাঁই দিয়েছে, তবে আমি পাইনি এখনও!
নির্বাক দৃষ্টিতে অঝরে বৃষ্টি নামিয়ে আজও আমি দেখি পুঁথি সৃষ্টির ইতিকথা,
আসলে বৃষ্টি যে আমার দৃষ্টির সীমানায় স্রোতবিনী নদীর মতো বইছে,
মেকি ধর্ম, অপকর্ম, নৈরাজ্য, নৈরাশ্য আর লাল, সবুজের রজঃ-টিকা,
কলঙ্কীনি রাধার স্তনযুগলে শাসকের কালো হাত বুলিয়ে সংযমে লিপ্ত হতে চায় বারবার।
কালের কালকেতুর মতো ওরা গ্রাস করেছে না-জানি কত শতবার,
আরও ঢের বাকি আছে! -- একশত একুশ কোটিবার।
তারপর মুক্তি! -- বিপ্লব, নবজাগরণ, পরিবর্তন, বিবর্তন, অভিব্যক্তির পথ ধরে,
আবার একদিন এই নষ্ট নীড়ে ফিরবে শান্তি, ফিরবে মনুষ্যত্ব,
ফিরবে গভীর সুষুপ্তিতে ঢলে থাকা একটুকরো মনের সুপ্ত বিবেকের বারুদ!
আমি সেদিনও তোমার সাজানো-গোছানো কবিঘরে বসে লিখে যাব,
কিছু না পাওয়া কথার নির্মম, নিষ্ঠুর, বেদনার ইতিহাস!
আর শব্দের ঝংকারে ঝড় তুলে শতাব্দী পরে চাইবো নন্দিনীর প্রেম!
হে মানুষি যদি অবাঞ্ছিত ধুলিকণার বিষাক্ত রেণু হয়ে,
নাই জায়গা হলো তোমার পড়ার টেবিলের এক কোণে,
তবে কি লাভ বলো সাদা কাগজের বুকে রঙিন আঁচড় কেটে,
সমাজের দগদগে পড়া ঘায়ে বার্ণাল লেপে নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে,
আগুনঝরা দোয়াতে অঙ্গারের দেহ-মোম জ্বালিয়ে কবিতা, গান, গল্প লিখে যেতে ?