যেদিন আমার জন্ম হয়েছিলো--
দিগন্ত ছোঁয়া নীল নীলিমার অস্তাচলে!
সকালের সোনা রবি পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়ে,
আমাকে স্বাগত জানিয়ে ছিলো!
শান্ত-স্নিগ্ধ ভোরের ফুরফুরে হাওয়ারা--
কেন জানিনা বারবার ঘুরে ফিরে এসে,
আমার নাভি, নিতম্ব, ওষ্ঠ স্পর্শ করে,
আমাকে বেঁচে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলো!
দূর থেকে ভেসে আসা প্রভাতি গানে,
আর পাখিদের কিচির মিচির কলাতানে,
সরলা ভোরের মায়াবী নিস্তব্ধতাকে কাটিয়ে,
একটি ব্যস্ততম দিনের সূচনা হয়েছিলো!
জানো তো কালপুরুষ,
আমাকে সেই দিন জন্মাতে হয়েছিল!
যে দিন, -- ঐ গগণ ললাটেই রূদ্রদেব,
প্রলয় হুঙ্কারে প্রখর তেজে জ্বলে উঠেছিলো,
সাহারা!  গোবি!  থর! -- কিংবা কালাহারি!
শুধু তাই কি ?  -- তাই নয়!
এই পৃথিবীর সমস্ত বালুকা রাশি,
যেদিন খুব করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো,
আমাকে সেই দিন-ই জন্মাতে হয়েছিলো!
কত সাধ করে আমার নাম রাখা হল " টগর "।
যদিও নামের সার্থকতা নিয়ে কোনদিন,
অবাক পৃথিবীর কাছে প্রশ্ন করা হয়ে ওঠেনি।
তবু জানো, -- আমি অবাক হই বারেবার!
তোমাদের শিষ্টাচারে কচি-কাঁচারা যখন,
আমার এই শান্তির নীড়ে ঢিল ছুঁড়ে মারে!
সদ্য কুঁড়ি ফোঁটা বিকশিত যৌবন যখন,
তোমাদের খাম খেয়ালিপনার কাছে শিকার হয়,
এক, দুই, তিন করে সহস্র আঁচড়ের দাগে যখন, আমার যৌবন জৌলুস ধূসর, বিবর্ণ হয়ে ওঠে,
সত্যি বলছি আমার তখন খুব কষ্ট হয়!
আচ্ছা কালপুরুষ, -- বলতে পারো,
ওরা কি পায় এই নিষ্ঠুর অনন্দ উল্লাসে ?
তবু দ্যাখো, -- সেই তো নীরবেই শতশত,
নিস্পাপ, চম্পা, চ্যামেলি, কিংবা করবীর মত,
আমাকেও একদিন অকালে ঝরে পড়তে হয়।
এরপরেও জানো তো কালপুরুষ,
আমাকে আবার জন্মাতে হয় বহুবার,,,
কখনো কামিনী, -- কখনো যামিনী,
কখনও বা জবা, শিউলি, জুঁই!
কখনও বা সন্ধ্যা মালতী হয়ে,
আঁধার গলিতে আমাকে দলিত হতে হয়!
যার সলিল সমাধি দাও,
তোমাদের ঐ পাচনের উন্মুক্ত পবিত্র মাটিতে।
জানো তো কালপুরুষ,
কখনো ওই মল্লিকার সাজে,
গোলাপ হয়ে প্রেয়সীর শাড়ির ভাঁজে,
নিথর, নীরব শরীরের প্রতিটি খাঁজে খাঁজে,
ঢেলে দাও - আত্মহ্যুতি-র অধি-বিষ!
তবু জানো তো কালপুরুষ,
তোমাদের বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানায়নি!
বারবার সাজানো ঐ শ্রী ঘরের কাননকে,
আমি যে বহুকাল ধরে শোভিত করে এসেছি!
দখিনা, মলয়া, চঞ্চলা, বাতাসকেও তো,
আমি সুবাসিত করেছি বহুবার!
কখনো তোমাদের-ই প্রয়োজনে,
মন্দিরের পুরোহিতের ফুলের ডালিতে!
কখনও-বা মসজিদের ঐ সিংহ দুয়ারে,
সজ্জিত আমি, - নিজেকে করেছি উৎসর্গ!
অথচ দ্যাখো আজ তোমরা'ই আমাকে,
" বাঁশি ফুলের " আখ্যা দিয়ে এড়িয়ে চল সর্বদা!
তবে এখন আর তেমন একটা কষ্ট হয়না !
সংসারে নারীরূপি জননীর মর্ম যারা বোঝেনা,
সামান্য এই টগরের করুণ আর্তনাদ,
তারা কেমন করে বুঝবে বলো ?
অবাক করা এই অন্ধকার পৃথিবীর বুকে-ই, আজও চেয়ে দেখো কালপুরুষ,
আমাকেই যেন বারবার জন্মাতে হবে!
সঙ্গে একবুক যাতনা আর মৃত্যু ভয় কুরে খাবে!