যুদ্ধ কখনো সীমান্তে থেমে থাকে না। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে হিজাবে ডেকে রাখা কিংবা সিঁথীর সিঁদুরে রাঙিয়ে রাখা নারীর কপালে,
শিশুর খালি পাতে, বৃদ্ধ বাবার ওষুধ ফুরিয়ে যাওয়া দিনের নিঃশব্দ আর্তিতে।
যুদ্ধ বোমা ফেলে শহরে,
আর কাঁপিয়ে দেয় গ্রামে রাখা সেই পুরনো ট্রাঙ্ক,
যেখানে সারা জীবন গুটিয়ে রাখা ছিলো একজন শ্রমজীবী মানুষের স্বপ্ন, সংসার, স্বজন।
যুদ্ধ ঘোষণা দেয় তারা, যারা নিরাপদ বাংকারে বসে মানচিত্র টানে।
আর মৃত্যু আসে সেই মানুষদের জন্য,
যারা হাতের ক্যালাস পুঞ্জ করে ঘর বানায়,
যারা প্রতিদিন সকাল ছিঁড়ে ঘাম ছড়িয়ে দিয়ে পেট চালায়,
যাদের কোন যুদ্ধের ভোটাধিকার ছিল না, তবুও লাশ হওয়ার অধিকার জুটে গেছে।
একটা ক্ষেপণাস্ত্র যখন আকাশ ছিঁড়ে নেমে আসে,
তা ভেঙে দেয় শুধু ভবন নয়,
ভেঙে দেয় বুকের ভেতর গোপনে বাঁধা রেখে দেওয়া এক টুকরো ঘরের স্বপ্ন,
যেখানে বৃদ্ধ বাবা একটু রোদ পোহাবে,
সন্তান বই খুলে আগামী গড়বে,
আর মা হাঁসের ডিম ভেজে বিকেলের গল্প বলবে।
যুদ্ধ কেবল প্রাণ নেয় না,
যুদ্ধ ছিনিয়ে নেয় ইতিহাস, পরিচয়, ভালোবাসা-
একটা পরিবারের সমগ্র বেঁচে থাকার অধিকারকে
গুঁড়িয়ে দেয় মুহূর্তেই।
কারা লড়ছে, কিসের জন্য লড়ছে--
তা জানে না পাঁচতলা ভাঙা সেই ছেলের স্কুলব্যাগ,
যেখানে খাতা আর রঙপেন্সিলের বদলে এখন জমেছে ধুলো,
রক্ত, এবং অজস্র অনুচ্চারিত কান্না।
এই যুদ্ধ বিজয়ের জন্য নয়,
এই যুদ্ধ কেবল ধ্বংসের উৎসব।
এ এমন এক নিষ্ঠুরতা -
যেখানে রাজনীতির মুনাফা হয় বুলেটের গর্জনে,
আর সাধারণ মানুষের জীবন হয় ইতিহাসের ‘সহযোগী ক্ষতি’।