বছর ষোলোর কিশোরী করিনা বায়না ধরল
আমি বিয়ে করবনা,পড়ব।


আমরা আঁধার চিরে আলোতে এনেছি
রক্ত থেকে নিংড়ে রসদ দিয়েছি,তাই-
ভালো মন্দের লাগাম আমাদেরই হাতে
অনেক শিখেছিস আর নয় এবার...।


না-না-না..
আমি বিয়ে করবনা, পড়ব।


কি ...! মুখের উপর কথা!
এত...সাহস !
অনেক তেল পুড়িয়ে রাজপথের এক ফালি চাঁদ হাতের মুঠোয় এনেছি
পাত্রটি সৎ,কর্মী,উপার্জনে সক্ষম


আগের পক্ষের মাত্র একটাই স্ত্রী;আছে দু-একটি ছেলে
গাড়ি বাড়ি ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের হিমালয়ে তার আবাস।
তুই গেলেই কদরের আলোয় ঝলসে উঠবি
আর এরপরেও যদি রাজি না হবি ..
তাহলে যে গাছ রোপন করেছি তার শিকড় তুলে...।


আমি পাত্র সম্পর্কে কিছু বলছিনা
আমার স্বপ্ন শিক্ষার জোছনায় আলোকিত হয়ে
অন্ধকার হৃদয় গুলোতে জোছনার কার্পেট বিছিয়ে দেয়া।


কি ...! মুখের উপর এত..বড় কথা...
সাহসের নজরানা তো তোকে দিতেই হয়
দড়াম দড়াম করে দরজা বন্ধ করে
জনক-জননীর মুক্ত মুখে তিক্ততার বান
কয়েক রাউন্ড কিল-চড়-ঘুষি...।


মা বাবার শানিত বাক্যবাণে বিদ্ধ হয়ে অসহ্য জ্বালায় জ্বলতে থাকে
তার শরীর,স্বপ্ন, সম্মান...।


তার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বিয়েটা সম্পন্ন হল
দিন দুয়েকের মধ্যেই করিনা জোড়ে ফিরে এল
কিন্তু মাথার ভিতরের স্বপ্নের লাল ঘোড়াটা
টগবগিয়ে রাজত্ব করতে থাকল তার ময়দানে।


করিনা মায়ের আঁচল ধরে
শ্রদ্ধার পাহাড়ে বসে আবদারের ক্যানভাস থেকে বলে
মা...আমি সংসার করব পরে; এখন পড়ব
মা-গো...মা...ও-মা...
আমার মনে স্বপ্ন, আমি পড়াব
আমাদের বস্তির ছেলেমেয়ে গুলোর অন্তরে
চাঁদ না বসাতে পারি,একটা করে তারা বসাব
ঘন কুসংস্কারে থুবড়ে পড়া মৃতপ্রায় প্রান গুলো
অন্তত একটু আলোর নিশানা পাবে।


হঠাৎ জীবনের আঙিনায় নিকষ কালো মেঘের ঘনঘটা
মা বাবার ডাকে ঘরে প্রবেশ করতেই
তালা বন্ধ ঘরে চলে চাবুক-চড়ের চরকি,
ঘরবন্দি তার স্বপ্ন-আশা-আবেগ ...।


ঘরের ভিতরে প্রতিবাদের পারদ চরমে
মরব তবু পড়ার পণ ছাড়ব না...
বাবা মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে জানালা খুলে দেখে
এক ফালি আলো চিরে বেরিয়ে আসছে প্রতিবেশিনী
হাত বাড়িয়ে করিনার কাতর আবেদন
"একটা কল করব মুঠো ফোনটা ...।
সহযোগিতার হাত বাড়তেই প্রশাসনের হাতে হাত
তারপরেই তার স্বপ্ন আশা আবেগগুলো
মানস সরোবরে কিলবিল করতে থাকল ।