সেদিন কাল বৈশাখী ছিল...
গলির মোড়ের চায়ের দোকানে রুদ্র;
নিকোটিন জ্বলছে ঠোঁটের কোনায়...
আমায় দেখে দু-কাপ গরম চায়ের অর্ডার দিলো,
হাতে রাখা ভালোবাসার খতিয়ান বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


সূর্য এখনো উঠেনি শহরের আলসেমির কোলে...
ঘুম ঘুম জড়ানো চোখে আমি দেখলাম;
রবী ঠাকুর দুলছে বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে...
আমাকে কাছে এগুতে দেখে হাত ইশারা দিলো,
আমি কাছে যেতে গীতাঞ্জলী হাতে দিয়ে হাওয়ায় মিলে গেলো...
বইটা খুলে আমি দেখলাম তার ভেতরে লেখা-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


আসমানির বাসার সামনে যেতেই তারা আমাকে বরণ করলো...
রসুলপুরের ছোট বাড়িটায়;
আমি তাদের শুধালাম আসমানিরা আজ কোথায়!
ঘরবাড়ি শূন্য কেনো?
জসিম উদ্দিন থলে থেকে বের করে দিলো নক্সশি কাঁথা...
গোটা কাঁথা জুড়ে সুতোর বুননে লেখা-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


আমি দুঃখ বেঁচে বাড়ির পথে দু-পা বাড়াতেই...  
চার রাস্তার মোড়ে দেখা হল নির্মলেন্দুর সাথে;
আমাকে শুধলেম ঢাকা ১০০০ কারওয়ান বাজার কি এটাই হবে?
আমি হ্যা বলতেই আমার হাতে তুলে দিল দুঃখ করো না বাঁচো...
চিরকুট পেলাম বইটার ভিতরে তাতে লেখা-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


রমনা পার্কের বেঞ্চিতে বসে বিকেল দেখছি...
আমার পাশে এসে বসলো মহাদেব সাহা;
চুল দাড়ি দেখে কিছুটা অবাক হলো...
তারপর উঠে চলে গেলো,
ইচ্ছা করেই ফেলে রেখে গেলো ডায়েরিটা...
আমি হাতে তুলে নিলাম পৃষ্ঠা উল্টাতেই চোখে পরলো...
বড় বড় অক্ষরে লেখা-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


সন্ধ্যার শহর দিনের থেকেও রঙিন...
সোডিয়ামের জোচ্ছনা গায়ে মেখে হাঁটছি ফুলার রোডে,
রাস্তার পাশে কষ্টের কেনাবেচা চলছে...
একটা মানুষ চুপ করে বসে আছে কাছে গিয়ে দেখলাম হেলাল হাফিজ;
আমাকে দেখে বলল- "আয়..."
বুক পকেটে রাখা চিঠির খাম ছিড়ে দিয়ে বলল পড়...
পৃষ্ঠাটা মেলে ধরতেই ভেসে উঠলো লেখা-  
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


বনলতারা দলবেঁধে চলে শহরে...
একদল বনলতা হেঁটে যাচ্ছে পাশ দিয়ে...
আমার ধাক্কা লাগলো চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখি জীবু দা;
আমাকে শুধালো কিরে কলম কেমন আছে?
"এই শহরে মানুষ উড়ে সাদাবক চলে গেছে।" -আমি বলে উঠলাম...
হাহা করে আট্টো হাসি দিলো কিন্তু চোখের কোনে জল...
আমাকে হাত বাড়িয়ে বলল এবার নে ধর,
ধরলাম আমি একটা শাড়ি...
খুললাম তার ভাঁজ...
ব্লক প্রিন্টে পুরো শাড়ি জুড়ে লেখা-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


লাইব্রেরিতে ঢুকতেই চোখ আটকে গেলো...
টেবিলে বসে বই পড়ছে জয় গোস্বামী;
আমাকে দেখে নড়েচড়ে বসে বলেন-
"লাইব্রেরিটা এখনো আগের মতোই আছে পাহাড় নদী..."
আমি নির্বাক শ্রোতার দলে যোগ দিলাম...
টেবিলের ওপর রাখা বই এগিয়ে দিয়ে বলল পড়,
আমি বইটা খুলতেই গোলাপের মরা পাপড়িগুলো পরে গেলো...
আমি হাত দিয়ে সরালাম কতগুলো...
পাতা উল্টাতেই ভূমিকায় লেখা-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


কপোতাক্ষের পাড়ে দু-পা জলে ডুবিয়ে জল আর বাতাসের সুর শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম...
হঠাৎ করে দেখি মাইকেল মধু সুধন;
আমাকে বলল না কিছু শুধু ঠোঁট দুটো নাড়ালো কয় একবার...
হৃদয় বুঝে নিলো আমাকে কি বলতে চাই...
আমি চোখ খুলে ধরফর করে উঠলাম...
হৃৎপিন্ড বলে উঠল-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


ফাক্স মেশিন অন করতেই ফাক্স এসে হাজির....
ওপার বাংলা দিয়ে পাঠিয়েছে সুনীল দা;
কেমন আছিস ভালো তো?
তারপর অনেকগুলো সাদা জায়গা একবারে শেষের দিকে লেখা-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"


ডাকহরকরা এসেছে দুয়ারে বস্তা বস্তা চিঠি নিয়ে...
সব চিঠিগুলো খুলে দেখি...
তোমারই নামপরিচয়,
শব্দগুলো গেঁথে আছে মগজে..
তারাও বলে যায়-
"আমি যেনো তোমাকে ভালোবাসি।"