আজরাতে তুমি নেই, নিখোঁজ অজানায়।
মাঝরাতে মাঝে মাঝে ভোগী হতাশায়।
পাল তুলা নাও খানি, ছোটে ঢেউ খেলে,
আসমানে চাঁদ দেখি, চোখ দু'টো মেলে।
নিশাচর উড়ে যায় কালো কালো ছায়া,
কর্কশ ডাক মুখে, বুক ভরা মায়া।
উড়ে এসে বসে গেলো, পাল বাঁধা বাঁশে,
সব কিছু ঠিকঠাক তুমি নেই পাশে।
হাল ধরে চুপচাপ ভাবনায় বসি,
কল্পনায় আসো তুমি, আসমানী শশী।
ভাবনায় ভাটা পড়ে, মেঘে ঢাকে চাঁদ।
অন্ধকারে ছেয়ে গেলো চন্দ্রিমা রাত।
পাখিটাও চলে গেলো, ভয় পেয়ে দূরে,
এলো মেলো বাতাসে, পাল খানি উড়ে।
আঁধারে বাতাস বহে, নদী ভরা ঢেউ,
ছোট্ট এক নৌকায়, পাশে নেই কেউ।
পালখানা খুলে দিলাম, হারিকেন জ্বেলে,
ঢেউয়ে ঢেউয়ে কলরব, নাওখানি দুলে।
ধুপ করে নিভে গেলো হারিকেন টাও,
আধারে আওয়াজ শুনি, ❝মাঝি কই যাও?❞।
ধুক করে উঠে বুক, কে কথা কয়!
এমন মিষ্টি গলা, মানুষের নয়!
জল হতে আলো এসে বসে নৌকায়,
দেহ ভরা সাদা আলোয়, নারী দেখা যায়।
রাত যেনো ভোর এখন, কিংবা বিকাল,
চারপাশ দেখা যায়; পানি টুকু লাল।
রক্তের বান বয়, আমি নৌকায়,
সামনেই পরী বসা, হাত বৈঠায়।
কোত্থেকে এলো জোর, ছোটে নৌকা,
রক্তের বন্যায়, আমি বড় একা।
একফোঁটা কথা কবো পরীটার সাথে,
পরীটাই বলে উঠে, ❝কোথা যাও রাতে?❞।
রক্তস্রোতে চলমান নৌকায় বসে,
ভাবনার তাড়নায় মাথা ঘুরে আসে।
ভয় নাহি পাই বুকে, নত নাহি শির।
যা হবার হবে পাছে, এখন আমি বীর।
মুখখানি ভার করে, পরী কে বলি,
❝ঐ পারে প্রেয়সী মোর, তার খুঁজে চলি❞
❝পরে খুঁজো প্রেয়সীকে, কিছু কথা শুনো,
গতরাতে খুন হলো, তার কিছু জানো?
রক্তের স্রোত ছিলো কন্ঠের কাছে,
লাশখানা নদী মাঝে ডুবে গেছে পাছে।
কমলার রক্ত রঙে লাল হলো জল,
লাল এক পরী এলো নদীর অতল।❞
আমি কিছু জানি নাকো, মরি চিন্তায়,
খুন হওয়া লাশ বুঝি মোর কমলা'য়।
হায়! হায়! একি হলো মোর কমলা!
কেন তুমি ছেড়ে মোরে হলে অবলা।
কৌতুহল মনখানি জানিবার চায়,
❝লাশখানি আসলে কি মোর কমলা'য়?❞
❝কমলা নাম তার এতোটুকু জানি,
চাও যদি মাঝি ভাই, তারে ডেকে আনি।
আমাদের দরিয়ায় সব কিছু আসে,
খুন হওয়া লাশটাও ডুবে ডুবে ভাসে।
সব লাশ পরী হয়, লাল হয় পানি,
চাও যদি মাঝি ভাই, তারে ডেকে আনি।❞
এই বলে জলপরী যাদু করে হাতে,
টুকটুকে পরী আসে, সাড়া পেয়ে তাতে।
লাল জামা পরে পরী লাল ঠোঁটে বলে,
❝এখন আমি মানুষ নই, আছি পরীদের দলে।
এখানেই ভালো আছি, মানুষের চেয়ে,
মানুষেরা রাক্ষস, যদি পায় মেয়ে।
কাল যখন ঘাটে আসি, কলসি কাখে,
দুই লোকে পিছু করে, রাক্ষুসি চোখে।
হাতদুটো ধরে মোর করে টানাটানি,
শুনশান ঘাট খানি, ঢেউ খেলে পানি।
আমি এক মেয়ে লোক, চিৎকার করি,
গলা টিপে ধরে তারা, এই বুঝি মরি।
মূর্ছায় শুয়ে আছি, নদী তীর ঘেষে,
নারী বলে আমি তখন ধর্ষিতা শেষে।
জ্ঞান যবে ফিরে এলো, ঘাটে নেউ কেউ।
শুনশানে কলরব নদী ভরা ঢেউ।
নারী আমি, আমি জানি হারিয়েছি কী!
বেঁচে থাকা বৃথা মোর, রটে যাবে ছি।❞
এরপর নিরবতা, ভাষা নেই মুখে,
ছোপ ছোপ  জল ভাসে, মোর দুই চোখে।
কোন স্বরে কথা বলি, জানা নেই মোর,
এরপর কী বা হলো, খুনি কতদূর।
বলি, ❝খুন তবে কবে হলে? কেন গলা কাটা?
কেনো এলো অসময়ে জীবনের ভাটা?❞
পরী বলে, ❝কমলার হুশ হলে, পড়ে চিন্তায়,
বুঝি সে আজ অবলা নারী, তাই অসহায়।
মাথা তুলে তাকালে দেখে, নোঙর গাথা।
খাঁচ কাটা তীক্ষ্ণ লোহার কতগুলো মাথা।
এতো ভারি নোঙর উঠাতে না পারে,
মরার লাগি কমলা কত কী যে করে!
গলাটুকু রাখে সে, তীক্ষ্ণ কাটায়,
সজোরে গাথে গলা, কাটার মাথায়।
রক্তের স্রোত বয়, লাল হয় নদী,
লাজ হীন নদী তবু, চলে নিরবধি।❞
কথাটুকু শেষ হলে পরী যায় চলে,
চাঁদ-রাতে ঢেউয়ে ঢেউয়ে নৌকাটা দুলে।
সব শুনে আমি মাঝি নির্বাক সত্ত্বা।
কমলা কি হলো খুন, নাকি আত্মহত্যা?
না! না! খুন একে বলা চলে, খুনি দুই লোকে।
সমস্ত আত্মহত্যাই খুন তবে, পৃথিবীর বুকে।