সোনায় মোড়া মুকুট পড়ে, ভাবছেন বসে রাজা,
রাজ্যে কোনো অন্যায় হলে, হবে কঠিন সাজা।
যেই না ভাবা, সেই না কাজ, গেলেন রাজা মাঠে,
মাঠের মানুষ কেমন আছে, কেমন তারা খাটে।
খাটুনি দেখে রাজার বুকে, উঠলো জেগে দরদ।
শ্রমিকের সাথে অন্যায় হলে, শাস্তি হবে গারদ।
রাজার সেপাই সকাল সন্ধ্যা, করছে সেবা প্রজার।
জুলুম হলে শাস্তি হবে, হুকুম আছে রাজার।
রাজা আবার হুকুম দিলেন, খাজনা যেন আসে,
খাজনা ছাড়া রাজ্য না-কি, পড়বে শেষে ধ্বসে।
দেড় বিঘেতে পঞ্চ কড়ি, রাজসভাতে খাজনা হলো ধরা,
বিঘে প্রতি পঞ্চ কড়ি, মন্ত্রী এসে খাজনা উঠান কড়া।
হিসেব তার সোজাসাপটা, রাজার হুকুম আছে,
পঞ্চ কড়ি নিতে হবে, না হয় চাকরি যাবে পাছে।
সেপাই দিয়ে লোক পাঠিয়ে, খাজনা হলো আদায়।
মন্ত্রীর হলো পকেট ভারী; রাজাও খুশি বেজায়।


কদিন বাদে রাজা এলেন, দেখতে প্রজার মুখ।
রাজার রাজ্যে সকল প্রজা, করছে কেমন সুখ।
বাজারে এসে রাজা মশায় বললেন হেকে হেকে,
❝আমার রাজ্যে কারো প্রতি অভিযোগ দিবে কে কে?
কারো কোনো কথা থাকলে, বলতে পারো আমায়,
মন্ত্রী আমার ঠিক আছে কি? ঠিক আছে কি সেপাই?❞


হরিপ্রসাদ হাত উঠালো, অভিযোগ দিলো বলে,
❝খাজনা কেন বিঘে প্রতি পঞ্চ কড়ি, দেড় বিঘের স্থলে?❞
রাজা বলেন, ❝শুনছি একি? মন্ত্রী, হিসেবে কেনো ভুল?
সঠিক হিসেব বুঝিয়ে দিও, না হয় থাকবে নাকো চুল।❞
পরের দিনই হরিপ্রসাদ, রাজ্য থেকে উধাও।
অনেক হলো খোঁজাখুঁজি, পাওয়া গেলো না কোথাও।
হরিপ্রসাদের বউ-বাচ্চা, করছে হা হুতাশ।
হরিপ্রসাদ নিখোঁজ দেখে, গ্রামটা বড় উদাস।


পরের বছর খাজনা নিতে, আসলো সেপাই রাজার।
রাজার ভান্ডার ভরলে পরেই, সেবা হবে প্রজার।
দেড় বিঘেতে দশ কড়ি, খাজনা আদায় হলো।
এমন ধনী রাজ্য আর কোথায় পাবে বলো?
নিয়ম করে আবার রাজা, দেখতে এলেন গ্রাম,
কেমন করে কৃষক শ্রমিক, ফেলছে গায়ের ঘাম।
সভা মঞ্চে রাজা বলেন, ❝অভিযোগ আছে কি কারো তরে?❞
উঠলো না হাত কোনো প্রজার, নিখোঁজ হওয়ার ডরে।
কারো কোনো অভিযোগ নেই, যোগ্য রাজার আভাস।
সগৌরবে বলেন রাজা, ❝শাবাশ মন্ত্রী শাবাশ।❞