কবিতার কথা মনে পড়ে পরিচিত বর্ণ খচিত কবিতা
আবদুল গাফফার চৌধুরীর একুশের কবিতা
আজকের দিনে মনে পড়ে ভবানী প্রসাদ মজুমদারের
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না কবিতাখানি!
ভুলিনি, আল মাহমুদের প্রভাত ফেরীর কবিতা
কিংবা মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর-
'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি' কবিতাটি
আমার মনে পড়ে, উচ্ছ্বাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সব কবিতা।
বুকের রক্তে, চক্ষে নামা অশ্রুর কবিতা
বাংলা ভাষার প্রাণের ঢেউ, ত্যাগ কতটা জানেন কেউ?


আমি ভুলতে পারি না , বাংলা পুঙক্তিতে লেখা রক্তাক্ত কোন কথামালা
প্রভাত ফেরীর বাহান্নের সেই সব কবিতা।


বাহান্নের কবিতার বয়স বিকেলের সমান
অথবা হতে পারে গোধূলির ওপার
বেশি হলেও হতে পারে, রাত্রি হলেও হতে পারে বয়স তাঁর।


কবিতাগুলোর বাম চোখে ক্ষতো ছিল, ছিল রক্তের দাগ
ডান চোখে হায়েনার গুলির আঘাত! সুরঙ্গের মতো
অ-আ-ক-খ বর্ণ হয়ে ছিঁড়ে গেছে- দু’চোখ তাঁর!


ভাষার বর্ণ তাজা প্রাণ পেলো রক্তে ভিজে তরুণের বেশে
পূর্ণিমার আলো ছড়ালো
এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচ'শ সত্তর বর্গ কি.মি.
ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশন-মায়ের ভাষার বিশ্বায়ন!
দেশে দেশে শিক্ষাঙ্গন, উন্মুক্ত প্রাঙ্গন।
নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, পালা-গাথা-স্বাধীনতা
কিংবা ভাটিয়ালির জন্যে
হয়তো, এই কবিতার জন্যে রক্তে ভিজে গেছে কৃষ্ণচূড়ার তলা !


সালাম-রফিক-জব্বার-বরকত ফাঁসির দাবি নিয়ে যদি না যেত!
কবিতার বর্ণ-ভাষা পাদদেশে-পাদদেশে ঠিকানাহীন হতো না!
শিয়াল-কুকুর বর্ণ খেতো না!
ও কী লজ্জা! পূর্ব-পুরুষ জানতো না!
হায়েনার নির্লজ্জ আঘাতের পূর্বে তাঁরা এ কথা জানতো না?
বিষধর সাঁপের মতো ছোবল দিবে! মায়ের মুখের বর্ণে-ভাষায়-কথায়!
ও কী লজ্জা! পূর্ব-পুরুষ জানতো না!


ইশ! সর্বনাশ হতো না!
সালাম-রফিক-জব্বার-বরকত, তাঁরা যদি না জন্মাতো
রক্তজবার মতো অক্ষরগুলো কী করে রাঙা হতো!
বাহান্নে লেখা কবিতার পুঙক্তিরমালা কী করে রক্ষা পেতো?
কলমের কান্না হতো পেন্সিলের লেখা, ওরা ইচ্ছে হলে মুছে দিতো
ইচ্ছে হলে পক্ষে নিতো।


আমি চারিদিক দেখি, বিচলিত দেখি
দূর্বাঘাসের বুকে সালাম-রফিক-জব্বার-বরকতের রক্ত দেখি
হীরে জহরতের মতো রক্তাক্ত সাজনে তলায় দাড়িয়ে থাকা
মায়ের মুখ দেখি।
মূক ও বধির দেখি,  আমিও শেষ রাতের সমান বয়সী
কবিতার নোট খাতা, খসড়া বুকে চেপে পথ হাঁটি
তাঁরা ছিল ভাষার-খুনি সংস্কৃতি আগ্রাসী, আমি কী হালকা সাক্ষী!


আজকের দিনে বাঙলা বর্ণে লেখা কবিতার কথা মনে পড়ে
বাহান্নে লেখায় কত-শত প্রভাত ফেরী!
আবারো দেখি, বারবার দেখি তুতলানো মুখ তবুও হাসিখুশি।


ভবানী প্রসাদ বাবু, বাংলা লেখা কম কী? ঘাটতি তারুণ্যের দীপ্তি!
না, না! না! না!
ইংরেজরাও ডিবেট করে, পড়াও চলে!
বাংলায় গান গেয়ে যায় সুযোগ পেলে, আমরা আন্তর্জাতিক বাংলাটাই ফাস্ট ল্যাংগুয়েজ।
ইংরেজীটাই ঘ্যানঘ্যানে, শুনতে লাগে প্যানপ্যানে
শুনুন বাবু, আমার ছেলে ইংরেজীতে পড়ে না,
মায়ের ভাষায় বেঁচে থাকলে ভিনদেশি প্রয়োজন পড়ে না ।


হাজার সালাম জানাই একুশে, শহিদের বেদিতে!
শব্দেরা কথা বলে, বিনম্র শ্রদ্ধা শহীদের তরে।


প্রাণ থেকে প্রাণ মিশে যাক শহিদ মিনারে
সকল কবির ভালোবাসা মিশুক- বর্ণে-শব্দে-কবিতায়-মাতৃভাষায়
শ্রদ্ধায় মাথা নত হোক
গ্রামে-শহরে-টিলায়-ক্ষেত-খামারে-ক্যাম্পাসে-সকল দ্বারে
কবি ও অ-কবি চলে এসো প্রভাত ফেরীর প্রাণের মিছিলে।