হাহাকার ছাড়া কারোর সাথে কথা নেই


কাব্যগ্রন্থ: চাদেঁর অন্ধকার
                        -মো. আব্দুর রাজ্জাক


ভোর বেলা থেকে ফোনটা বেজেই চলেছে!
বাজুক না! বাজতে থাক,
যদি সত্যি দরকার হয় আবার বাজবে
সত্যিকার হাহাকার যদি থাকে আবার বাজবে।


ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে খুব পরিচিত কণ্ঠস্বর
কেমন আছেন?
আমি বললাম, “ব্যস্ত আছি। আপনি ভালো?”
তিনি বললেন, জি খুব ভালো আছি।
আমি ফোন কল রাখতে চাইলাম, তিনি রাজি হলেন
আমি ফোন কল কেটে দিয়ে ফুসফাস করতে থাকলাম!


যারা ভালো আছে তাদের সাথে আমার কিসের সম্পর্ক?
আমার সম্পর্ক হাহাকারের সাথে!
আমার জন্য যার হাহাকার আছে তাঁর সাথে!
মানুষকে কেন শুধু ভালো থাকতে হবে?
তিনি কি ভেবেছিলেন,
তাঁর কথার গোলমেলে আমি ভেঙে পড়বো!
আমি কেন ভেঙে পড়বো?
যারা ভালো থাকে তাদের আমি কেউ না।


ভোর বেলার ফোন কল ঘ্রাণ নেয়া গোলাপ ফুলের মতো
তবুও আজকাল ভোর বেলার ফোন কল আমাকে টানে না,
আমি তাদের ত্যাগ করে চলি, আবার ব্যাকুল হই
আমার ব্যাকুলতা একটি কণাও কেউ টের পায় না।


কেউ কেউ সামনে দাঁড়ালে আমি বেঁচে উঠি
আমি কাউকে দেখতে চাই পাগলের মতো,
ফাঁসির আসামির মতো, কুষ্ঠরোগির মতো
মধ্যরাতের মাতালের মতো
দেখতে চাই,
বুকে হাহাকার নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়েছে।


আমার হাতে মহাকাল পড়ে থাকে
অন্তত সময় আমার চারপাশে ঘুরপাক খায়!
সময় ধার দেব,
তোমরা কেউ সময় নেবে, সময়….
সময় দিতে বা নিতে ইচ্ছে করে না, তবুও দেব!


হাহাকার যদি না থাকে, এসো না
জীবন নিজের, দেখতে হবে নিজেকেই
হাহাকার না থাকলে
অন্যর জন্য নতমস্তকে কেনো দাঁড়াবে?


ইদানীং হাহাকার শুনলে আমার ভালো লাগে
এমন হাহাকার শুনিনি কোনো দিন, শুনলেও ভুলে গেছি,
এখন পদ্মার ঝড়ের মধ্যে নৌকো ডুবে যাওয়ার
হাহাকার শুনতে চাই!
ইদানীং হাহাকার শুনতে ভালো লাগে
মনে হয় যদি সারাদিন হাহাকার শুনে যেতে পারতাম!


আমার জন্য কেউ কি হাহাকার করছে?
কতদিন হাহাকার শুনিনি!
আরো হাহাকার শুনতে ইচ্ছে করে!
আমি প্রবল নিবিড় অনন্ত বিষাদময় হাহাকার শুনতে চাই!
মনে হয় সারা দিন রাত হাহাকার শুনি,
আমার সারা দিন ভূমন্ডলের হাহাকার শুনতে ইচ্ছে করে।
আমি চাই, সূর্যটা এসে
পা’মুড়ে বসে পড়ুক!
ব’সে পড়ে হাহাকার করুক আমার সামনে!


হাহাকার কেন আমার ভালো লাগে?
কেন মানুষ হাহাকার করে?
হাহাকার করার আগে ভেবে দেখা দরকার ছিল না?
হাহাকার সহ্য করতে পারবে কী না!
জীবনে এতো হাহাকার করার কী আছে?


অন্যর সাথে দেখা হওয়ার নানা রূপ আছে
কোনো কোনো দেখা হওয়ায় কিছু যায় আসে না,
কোনো কোনো দেখা হওয়ায় জীবন বদলে যায়!
কোনো কোনো দেখা হওয়ায় মেঘ জমে জীবনে!
কোনো কোনো দেখায় সারাদিন কথা বলতে ইচ্ছে হয়
আবার কোনো কোনো দেখা হওয়ায়
হাহাকার নেমে আসে চারপাশে।


ফোন কলে অথবা দেখা করে সমাধান না এলে
চুপচাপ দন্ডটা ভোগ করাই উচিত,
আমি তো সেই কবে থেকে দণ্ড ভোগ করে চলেছি!
এখন আর কোনো হাহাকার নেই
এখন আর কোনো বুকফাটা কান্না নেই ।
তাঁর ফোন কলে হাহাকার দেখিনি, ফোন কল কেটে দিয়ে
ভেতরের হাহাকার শুনতে শুনতে আমি পাঠাগারে যাই,
বই খুঁজতে থাকি।
শেল্ফের ভেতর থেকে বইয়ের হাহাকার শুনতে পাই!
শুনে আমার সুখ লাগে,
শুনে আমার ঘৃন্না লাগে।


বইগুলো পড়েছিলাম ছোট বেলায়
পড়তে ইচ্ছে করে যেগুলো পড়ে কেঁপে কেঁপে উঠেছিলাম!
আমি ঘুমোতে পারি না, যেমন পারি জেগে থাকতে!
ঘুমও আমার, জেগে থাকাও আমার,
জীবন আমার, ভালো থাকা আমার, মন্দ থাকাও আমার।
আজ আমার, কাল আমার, বোশেখ আমার জ্যৈষ্ঠ আমার
হাহাকার আমার, বুকফাটা কান্না আমার
আমি মেনে নিয়েছি সব কষ্ট, বেদনা আর হাহাকারের ঝড়।


আমার কাছে একটিকে ছেড়ে আরেকটি শূন্য লাগে
একপেশে জীবন শূন্যগর্ভ মনে হয়,
তবুও ইচ্ছে করে পরখ করে দেখি না!
কত প্রকার হাহাকার আছে পৃথিবীতে!
হাহাকার দেখতে দেখতে
স্তব্ধ হয়ে যাই, যেন পৃথিবীতে কথা নেই, ভাষা নেই।


মহাকাল পড়ে আছে, তবুও কথা নেই
যারা ভালো আছে তাদের সাথে কোনো কথা নেই,
যারা ভালো আছে তাদের সাথে আমার কথা থাকতে পারে না!
হাহাকার ছাড়া কারোর সাথে আমার কথা নেই।


( তারিখ: ১৩/০৬/২০২০ খ্রি.)