একটি ছেলে ছিল…


একটি ছেলে ছিল
নাম...
থাক, নামে কি আসে যায়?
মানুষতো তার ভিতরে বাস করে
ঠুনকো এক পৈত্রিক নাম
মানুষের মূল্যায়ন কি তার নামে হয়?


যতদূর মনে পড়ে
তার কপালে, হয়ত তার ভ্রুর একটু উপরে
একটা কাটাদাগ ছিল
তবে কোনদিন তার চুলকে এই দাগ
স্পর্শ করতে দেখিনি
যেমন স্পর্শ করেনি কোন ক্ষমা অযোগ্য পাপ
হয়ত কষ্ট স্পর্শ করেছে,
হয়ত স্পর্শ করেছে আঘাত বা আবেগ


হয়ত কেন?
বোকা ছেলেটি ছিল কিছুটা আবেগপ্রবণ
তাইতো ভালবাসাকে সে সার্বজনীন করেছিল
নারীভক্তি কতটুকু ছিল জানিনা
প্রাণীভক্তি ছিল অফুরন্ত
মনে পড়ে দু'টাকায় শ্যাম্পু এনে
তার প্রিয় কুকুরকে নিয়মিত স্নান করাতো।
আহ্, কি পবিত্র সে দৃশ্য...


ও, বোকা কেন বললাম জানতে চাও?
যে মানুষ অতি সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত
তাকে তো সবাই বোকাই বলবে তাই না?
আমাদের সমাজতো আর
বোকা আর সরল এর পার্থক্য বোঝে না, বুঝতেও চায় না
পাছে নিজেকে নিম্নস্তরের মনে হয়!


তারপরও সে আমার সম্মোহনীতে পরাস্ত হয়েছিল
সেই কথা আর নাইবা বললাম।
আচ্ছা, যখন সে বিয়ে করবে
তখন কি তার স্ত্রীকে সেই গল্পগুলো বলবে?
হয়তো বলবে, হয়তো না।
তবে তার বলা উচিত
কৈশোরের সেই নিষিদ্ধ কর্মকান্ডের সময়গুলোই তো
জীবনের অমূল্য সময় ছিল।


তারপর অনেকটা সময় গড়িয়েছে
জীবিকার তাগিদে সে চিরচেনা পরিবেশ থেকে মুক্ত হলো
জীবিকা যে পরম নিষ্ঠুর


মনে পড়ে...
কোন এক ধর্মীয় উৎসবে
তোমার বাসায় গিয়েছিলাম
তুমি গ্রাম দেখালে,নদী দেখালে
নদীতে ডলফিনের কালো পিঠের ঝলক দেখালে
আমরা ডুব-সাঁতার খেললাম
তারপর আবার তোমার বাসায়


সেদিন তোমার মাতৃদেবী
খুব সাধারণ কিন্তু অনন্য কিছু ব্যঞ্জন করে আমাদের খাইয়েছিল
ছোট মাছের চরকরিটার স্বাদ এখনো আমার মুখে লেগে আছে।
কে জানে হয়তবা মাতৃসম্পদায়ের হাতে জাদু থাকে।
তা নাহলে সব মায়ের রান্নাই এক হবে কেন?
সব মায়েরাই তাদের সন্তানদের একইরকমভাবে ভালবাসে তাই?


এখন তুমি সুদূর পরবাসে আকাশের তারা গোনো
ভেবো না তুমি একা, এটা শুধু তোমার অধিকার
এই সপ্তর্ষি, লঘু সপ্তর্ষি, লুব্ধক, কালপুরুষ
সবই তোমার মতো আমিও দেখি
হয়তবা সময়ের ব্যবধানটা আছে, এই যা।


বন্ধু, তোমার একবারও কি মনে হয় না
তুমি ভাল নেই
তোমার সবই আছে, তবুও কিছু নেই
তুমি যখন নিজে রান্না করে
খাবারের প্লেটটা হাতে নাও
মনে হয় না এক লোকমা ভাত
মায়ের মুখে তুলে দিতে
এই পূণ্যময় দৃশ্য এ পৃথিবীতে সত্যিই বিরল
আর এই বিরলদৃশ্য সত্যিই ঘাতক
জগতময় এ রোগের মহামারি কেন হয় না?


বছরখানের আগে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম
তোমার সাথে কিছুটা সময় কাটালাম
কিন্তু তোমার মায়ের মুখোমুখি হইনি
কিছু একটা বাধা ছিল, কিন্তু সেটা কি
আমি জানি না, জানতেও চাই না
থাক না কিছু রহস্য


একটা সময় আসবে যখন
আমার কথা তোমার মনেও পড়বে না
মনে করার সময়টাও থাকবে না
যোগাযোগ? সেটাতো সুদূর পরাহুত


তারপরও তুমি আমার কাছে
সেই তুমিই থাকবে
যেমনটা আছ কুড়ি বছর ধরে
কিছুটা সরল
কিছুটা বে-খেয়ালি আর বন্ধুপ্রতিম
আর আমি?
তোমার ড্রয়ারের শেষ কোনায়
বহু বছরের ধুলো জমা
ফটো অ্যালবামের রংচটা ছবি...


(কবিতাটি আমার খুব কাছের বন্ধু আরিফ-কে উৎসর্গ করলাম)