শুরুটা ছিলো ঘুমভাঙা শিশুর হাসিতে,
খেজুর গাছের ছায়া, আর নামাজের সুরভি বাতাসে।
তোমরা তখনো জানোনি, ইতিহাস হাঁটছে তোমার দিকে,
বুলেটের বুকে খোদাই করতে এক জাতির পরিচয়।
পাঁচবার আযানে মুখরিত শহর—
আজ শুধুই ধোঁয়া, আগুন আর ধ্বংসস্তূপের নাম।
এক সময় যেখানে কোরআনের আয়াত মুখে মুখে,
সেখানে এখন কাঁদে সন্তানের লাশ জড়িয়ে এক বৃদ্ধা মা।
তোমার আকাশে একদিন ওড়ে পায়রা,
আজ সেখানে উড়ে ড্রোন—বারুদের মরণ ডানা।
খেজুরের পাতায় রোদ নয়, ঝরে বোমা;
একটি শিশুর শরীরে লেখা হয় "নিখোঁজ ভবিষ্যৎ" নামা।
১৯৪৮—একটি তারিখ, এক শুরু,
যখন তোমার ভূমিকে ভাগ করা হলো গায়ের জোরে।
ছিন্নভিন্ন হলো জমি, স্মৃতি আর জাতি,
তোমার কান্না প্রথমবার পৌঁছালো কাবার দোরে।
১৯৬৭, ১৯৮৭, ২০০৮, ২০১۴, ২০২৩...
তারিখ পাল্টায়, ধ্বংসের ধরনও নতুন হয়,
কিন্তু অপরিবর্তনীয়—তোমার রক্তঝরা নিয়তি।
প্রতিবারই বিশ্ব শুধু দেখে, কেউ কিছু বলে না—চুপচাপ রয়।
তুমি প্রশ্ন করোনি, কেবল প্রতিরোধে থেকেছো,
একটি পাথরের খোঁচায়ও তুলে ধরেছো মর্যাদার ঝাণ্ডা।
তোমার ছিন্ন পা, রক্তাক্ত মুখ, পোড়া কুরআন—
সবই সাক্ষী, তুমি একটি জাতি নও—তুমি এক মহাকাব্য রচনা।
একজন বাবার লাশের পাশে বসে আছে তার শিশু,
সে জানে না, লাশকে কবর দেয়ার আগে খাওয়া যায় কি না।
একজন মেয়ের বিবাহের স্বপ্ন ভেঙে যায় ড্রোনের গর্জনে,
তার চোখে শুধুই শূন্যতা—যেখানে ছিলো কল্পনার বাসনা।
গাজা—তুমি আজ এক পবিত্র কবরস্থান,
যেখানে প্রতিটি কবর একেকটি বিপ্লবের জন্মদাতা।
তোমার কষ্ট স্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বমনে,
তবু দুনিয়া—নির্বাক, নির্বিকার, শুধু দেখে নিঃসঙ্গতা।
তবুও, হে গাজাবাসী, তুমি থেমে যাও না,
তোমার রক্তে জ্বলে আল-আকসার দীপ্তি।
তুমি মরো, আবার ওঠো—দশবার, শতবার,
তোমার মৃত্যুই তো আগামী প্রজন্মের প্রেরণা-বৃত্তি।
হে গাজাবাসী, তুমি কাঁদো—তবু দুর্বল নও,
তুমি পোড়ো—তবু ছাই হয়ে যেয়ো না।
তুমি হাওয়ার পুত্র—যার বিশ্বাস কাঁদিয়ে তোলে আসমান,
তুমি একাই দাঁড়িয়ে, একা হয়েও তুমি বিশ্বমানবতার একান্ত সাথী।
---
শেষ পঙক্তি:
"তোমার কবরের পাশে যে ফুল ফোটে, সে ফুলেও লেখা থাকে এক মহৎ ইতিহাস—হে গাজাবাসী, তুমি বেঁচে আছো, আমাদের সবার ভিতর।"