শুনিতে ব্যাকুল ছিলাম,
কিন্তু কেউ মন থেকে বলতে এলো না ভালবাসি,
চল্লিশটি বসন্ত পেরিয়ে গেলো, কেউ এলো না!


কৈশোরে সহপাঠিনী পারু-
বইয়ের ভাঁজ থেকে আচমকা একটা
নীল রঙা খাম বের করে বলেছিল
প্রবেশিকা'র পর এটা তোকে দেবো।
চলে যাবার আগে মনের কথাটি বলে যাবো!


তারপর কত প্রবেশিকা এলো গেলো,
মনের কথা বলতে পারু আর এলো না।
কোন এক ডাহুক ডাকা পড়ন্ত বিকেলে
হাওয়াই জাহাজে চড়ে বিলেতে উড়াল দিল।
চল্লিশটি বসন্ত পেরিয়ে গেলো! কেউ এলো না!


এক সময় বলিতে ব্যাকুল ছিলাম
পারু থামিয়ে দিলো, আর বলা হলো না কিছু।
অন্য কেউও আর শুনতে এলো না,
মনের গভীরে থাকা গুপ্ত-সুপ্ত কথাটি,
চল্লিশটি বসন্ত পেরিয়ে গেলো, কেউ এলো না।


গাঁয়ের মাষ্টার মশাই বলেছিলেন-
আগে লেখাপড়া তারপর নড়াচড়া।
শিক্ষাদীক্ষা থাকলে অন্নোপার্জনের জন্য কর্ম ভিক্ষা করতে হবেনা, কর্ম নিজেই  ধরা দিবে!
গুরু বাক্য শিরোধার্য মেনে অবিরাম লেখাপড়া'ই করেছি নড়াচড়া করিনি।
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কর্মশক্তি বিনাশ!
কোন কর্মকাণ্ডে আর নিযুক্ত হতে পারলাম না।
মাষ্টার মশাই আর কত বিদ্যা ধরলে
কর্ম আমায় আপসে ধরা দেবে?
বয়োঃবৃদ্ধির চাপে এখন আমি লগ্নভ্রষ্ট!
চল্লিশটি বসন্ত পেরিয়ে গেলো, কেউ এলো না।


সৌভাগ্যক্রমে একান্নবর্তী পরিবারের বাসিন্দা,
বাপের জমিজমা ছিল প্রচুর,
সোদরগণও ছিলেন রোজগারে,
তাই উদরপূর্তির চিন্তা তেমন ছিলো না
প্রাচুর্য একসময় কাল হলো।


আহা মরি কোন স্বাদ আহ্লাদ ছিল না কখনো
মাসোয়ারা যা পেতাম তা ব্যয় হতো -
কর্ম ভিক্ষা মঞ্জুরি'র ফেরত খাম আর
নিয়োগ বোর্ডে যাতায়াতের পথ খরচে,
চা পানিতে নিজেকে বেশি জড়াতে না পারলেও
হর্তাকর্তাদের হা করা মুখে ঢেলেছি বিস্তর।


মেসের রুম মেট এক বড় ভাই পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন
আশাহত হোসনে ভাই,
দেখিস স্বর্ণমৃগ একদিন ঠিকই ধরা দিবে!
স্বর্ণমৃগ ধরার নেশায় যে যার নিশানায় দৌড়লাম অবিশ্রাম।
ব্যস্থ শহরের অলিগলি কত খুঁজলাম।
জানি না সে বড় ভাই আজ কোথায়?
স্বর্ণমৃগ কি তার করতলে?
পেলে জিজ্ঞেস করতাম।
আমি যে ব্যর্থ শিকারি সেটিও তাঁকে জানাতে পারতাম।
চল্লিশটি বসন্ত পেরিয়ে গেল, কেউ এলো না!


শৈশবের পারু এখন -
দুইয়ে দুইয়ে সাত আর আমি দুইয়ে দুয়ে পাঁচ,
পারু এখন সাত সাগর তের নদীর ওপারে।
আমি মরে যাওয়া নদী পাড়ের
সবুজ বন-বনানী ঘেরা পথের পথিক,
নিজ গণ্ডি ছাড়তে পারলাম না এখনো
তাই পাকদণ্ডি গ্রাম্য পথে হাঁটি কিংবা
কাজে-অকাজে  স্কুটারে চড়ি,
বৈচিত্রময়তাকে সাথী করে এখানে ওখানে
আর আনমনে আঁকিবুকি করি
এ ছাড়া আমার আর তেমন কাজ-কর্ম নাই।


কর্মই জীবনের ধর্ম --
এ আপ্তবাক্যটি জানা থাকলেও মানা সম্ভব হয়নি,
সে সুযোগ আমায় কেউ দেয় নি।
রাষ্ট্রীয় আমলা, সমাজপতি'র দোয়ারে বাধা
সোনার হরিণে আমি তীর নিক্ষেপ করতে পারি নি।
আমার কেবল ঝুলি ভরা শিক্ষা রইলো
কর্মে দীক্ষা আর হলো না।
চল্লিশটি বসন্ত পেরিয়ে গেলো, আর কেউ এলো না।