ওগো, তুমি আসবে বলে,
তোমার আদরের মৌটুসি,
একটা বকুল ফুলের মালা গেথে রেখেছে তোমার জন্য।
যত্নের পুতুলটার বিয়ে দেয়নি
তুমি আসবে বলে।
জানো, ও আজ অনেক বড় হয়েছে।
দেখতেও হয়েছে বেশ।
সারাক্ষণ শুধু জিজ্ঞেস করে,'মা'বাবা কবে আসবে?
ওগো, তোমার সাধের হাস্নাহেনায় ফুল ফুটেছে।
গোলাপ, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকায় ভরে উঠেছে বাগানটা।
তোমার বাগানটাই যেন মৌটুসির প্রাণ।
অনেক যত্ন করে।
আমাকেও বারংবার সাহায্যের জন্য ডাকে।
পুকুরের কলমিলতাগুলোও দারুন লিকলিকে হয়েছে।
তোমার পছন্দের কচুফুলগুলো হলদেটে হয়েছে বেশ।
এবার মাছও হয়েছে খুব।
সজনে গাছটাও ডাটায় ভরে গেছে।
তুমি আসবে বলে।
তোমার অতি সাধের লালশাক,পালংশাক চাষ করেছি।
পিঠার চাল ভেঙ্গে রেখেছি তোমার জন্য।
ঔই যে,দুটি কোয়েল ছানা এনেছিলে,
এখন, কোয়েলে ভরে গেছে বাড়িটা।
কবুতরগুলো মুখিয়ে আছে
তুমি আসবে বলে।
তুমি আসবে বলে, পোষা বিড়ালটা আনন্দাশ্রু ফেলছে।
ময়না পাখিটা এখন কথা বলছে।
গাভীর বাচ্চাটাতো তোমার নয়নপুত্তলির খেলার সাথী।
তোমার মণিটা বাছুরটাকে দৌড়ে হারিয়েছে কয়েকবার।
তুমি আসবে বলে, আমি শুকোতি, শিদল বানিয়ে রেখেছি,
তুমি মজা করে খাবে বলে।
ওগো, তোমার সংসারটা আমি হাসিমুখে
অক্লান্ত পরিশ্রমে আগলে রেখেছি।
শুধু, তুমি আসবে বলে।
এইতো সেদিন! হঠাৎ দরজার কড়াটা বুঝি নড়ে উঠলো।
তোমার খুকিটা দৌড়ে গেল, তুমি এসেছো মনে করে।
কিন্তু একি!
খাকি পোশাকের খুব পরিচিত লোকটা,
খুকিকে একটা কাগজ দিয়েছে।
ও, এটাতো চিঠিই মনে হচ্ছে।
অনেক আশায়, যত্ন সহকারে খুলে ফেললাম।
পড়া শুরু করলাম চিঠিটা।
একি! আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কেন?
মনে হচ্ছে পুরো আকাশটা বুঝি আমার মাথায় ভেঙ্গে পড়লো।
কতক্ষণ জ্ঞানহীন ছিলাম জানি না।
নিজেকে আবিষ্কার করলাম- হাসপাতালের বেডে।
শুনলাম, কাকে বাচাঁতে গিয়ে নাকি,
তুমিই! পুড়ে ছাই হয়ে গেছো।
আমার হৃদয়টা বুঝি চৌচির হয়ে গেছে।
এমন পোড়া কপাল আমার!
তোমার মুখদর্শনটাও হল না,
শেষ বিদায়ের আগে।
তুমি মৌটুসির জন্য, একটা লাল ফ্রোক কিনেছিলে।
আরও হরেক রকম খেলনা।
আমার জন্য একটা নীল শাড়ি।
সোনার একটা নেকলেসও কিনেছিলে।
ওগুলো পেয়েছি গতকাল, তোমার বন্ধুটির সৌজন্যে।
মৌটুসি এখনো জানে না,তুমি আর নেই।
আমাদের ছেড়ে চলে গেছো, দূরে বহুদূরে।
ও এখনো ফুলগাছে আগের মতই পানি দেয়।
তবে,ফুলগুলো যেন আগের মত-
তরতাজা হয় না, বুঝি ঝড়ে যাচ্ছে।
বাছুরটার সাথে এখনো খেলে।
কবুতর, দোয়েলের যত্ন নেয়।
তবুও কেন জানি ওগুলো রোগা হয়ে যাচ্ছে।
মাছগুলোকে মুড়ি, গুড়ো এখনো দেয়।
ওর বকুল ফুলের মালাটি এখনো আছে,
তবে,আগের মত গন্ধ বিলায় না, যেন চুপসে গেছে।
তুমি আসবে বলে,
বাড়িতে যে খুশিটা ছিল,তা বুঝি উবে গেছে।
জানিনা কতদিন পরে তোমার খুকিকে বলবো যে,
তুমি আর নেই।
আর আসবে না কোনদিন।
ও,আর বাবা বলে ডাকতে পারবে না তোমাকে।
আচ্ছা, শুধু তো নিজের কথাই বললাম।
তুমি কেমন আছ? ভালো আছ তো।
তুমি কিন্তু আর রাত জেগে কবিতা লিখবে না।
ওখানে কি কেউ তোমায় চা করে দেয়?
চায়ের সাথে বিস্কিট না হলে তোমার চলতোই না।
তোমার শুকনো কাশিটা কি এখনো আছে?
আর কিন্তু ঠান্ডা লাগাবে না।
বুকের ব্যাথাটা কি সেরেছে?
আর,আমাদের জন্য চিন্তা করবে না।
আমরা ভালো আছি।
আমাদের জন্য আশির্বাদ করো।
ও, তোমার অনেক দেরি করে ফেললাম।
ঘুমুতে যাও। অনেক রাত হয়েছে।