আমি এক চাপরাশি ॥
মা আমার একজন সাধারন গৃহিনী,
গৃহ লক্ষ্মী, এ সংসারের শান্তি সুখের খনি,
যে ঘরে রাত এসেছে তবে কভূ আঁধার দেখিনি,
মোর প্রবল শক্তি সাহস উৎসাহ প্রেরনার সচল ধমনী,
শত গুন সম্ভার ও অনটন পরীক্ষার মহা র্ধয্যশীলতার বিজয়ী রমনী,
পাড়ার গাঁয়ের সব বয়সী মহিলার ঢল নিত্য সারাদিন আসিত বেধে দল,
পিড়িতে বসিত গল্প করিত পান খেতো আর বুদ্ধি নিতো পেতো অসীম মনোবল,
পাড়ার গাঁয়ের যত হিন্দু মুসলমান কিশোরী,
যূবতী কুমারী বিধবা বন্ধা ষোড়ষী, প্রৌড়া ও বৃদ্ধা নারী,
কন্যা বধূ মাতা স্বেচ্ছায় সব বয়সী,
আকূল শ্রদ্ধার ভার কেউবা হতে চাহিত তার ক্ষনিকের সেবা দাসী,
জড়ো হতো তাই এসে তার ঐ র্জীন জড়া উপচে পড়া দীনতার ঘরে আসি ॥
মনের যত হিংসা ক্রোধ,  
করিত রহিত তা হতো আপনি রোধ,
নহে ব্যাবধান সবাই সমান জাগ্রত এই মহান বোধ,
আর কি কেউ পারে যখন বিবেকের কাছে হারে নিতে প্রতিশোধ,
আঘাত নহে বক্ষে বহে সবার তরে মমতার ঢল,
বলো আর দেবোনা, করোনা মানা কারেও নহে ছোবল,
যে সান্নিধ্যে এসে, সব ক্ষেদ অবশেষে যেতো হাওয়ায় মিশে নিমেষে হতো তল,
তার বচন বশে যে পরশে দীক্ষা লয়ে,
সবাই যেত আসল মানূষ হয়ে শ্রদ্ধা বিনয়ে,
চরন ছুয়ে করত প্রনাম সবাই তাকে, ভক্তি ভরে আমার মাকে বলত মাসী ॥  
আর বাবা আমার ছিল এমন একজন,
বেশ ভূষন যার ছিল অতী সাধারন ও পূরাতন,
দেখতে মনে হতো যেন গোবেচারা হাবা, আসলে তা নয় সকল বিঞ্জ বাবার বাবা, হেন গহীন গভীর ও উঁচূ ছিল তার মন,
সত্য ও সততার অটল পাহাড়, সিদ্ধপূরুষ লোকের পরম শ্রদ্ধাভাজন,
যেন দীক্ষা গুরু পূরোহিত পূরো নহে কারো পর, নেই ছোট বড় মন তার সমতার সবার আপন,
কে পক্ষে কেবা বিপরীত নেই ভাবনায় কভূ তা মাখেনা গায়, এমন সাধনায় ব্রত লয়ে রত রয়েছে যেজন,
এলাকার মান উঁচূ যার হয়েছে সাধন,
এমন সমজদার মাতব্বর সরদার গুরুজন,
পাঁচ গেরামের প্রধান, হেন এক র্আদশ র্বগা চাষী ॥
আমি চাকরী করি,
একটা আধা সরকারী,
বানিজ্য ও বিপনন কারবারী,
কত গুদাম, অফিস ও অগনিত গাড়ী,
দায় টুকু মোর, ভাবি হতেই ভোর কেমনে দেই অবহেলে ছাড়ি,
সাত সকালে ভাই,
আমি তাই নিত্য অফিসে যাই,
যতই হয়, র্সদ্দি জ্বর ও আমাশয় কিবা হাঁচি কাশি ॥
নিত্য ভোরে শয্যা ছেড়ে,
ডোবার জলে নাওয়া সেরে,  
রাতে রাধা জলে ডোবা ভাতে,
কিছু ডাল র্ভতা ভাজি ঢেলে দিয়ে তাতে,
উদর র্পূন করি,
যাই থাক ঘরে বাসন ভরি,
সারাদিনের শক্তিবল, দেমাগ ঠান্ডা নাড়ী শীতল, লোকে যারে বলে পান্তা বাসী ॥
হতাম যদি একজন নারী,
হলফ করে আমি তা বলে দিতে পারি,
কত ছল করে সোহাগ ভরে,
টেনে নিতো ওড়না কিবা আঁচল ধরে,
জানি হয়ত শেষে মাতাল নেশার রেশে মোরে দিতনারে ছাড়ি,  

১৩
সুযোগ পেয়ে পশুর নেশায় মাতাল হয়ে,
না করে সুযােগের অবহেলা, জানি তারা আমায় লয়ে,
করত খেলা হেন টানাহেঁচড়া ও কাড়াকাড়ি, কেমনে যেতাম আমি সয়ে,
পাঁচ জনে মিলে, যেন ছোট্ট মুরগী ছানা ধরেছে ক্ষুর্ধাত চিলে,
জানি তারা খেত আমায় মজা করে, বেহুষের মত একেবারে আস্ত গিলে,
যেজন এমন মজার সুযোগ পায়,
হেন র্ফূতির দশায় বলো সে কি কভূ ফিরে যায়,
কি হতো তার দুএকটা আমার চড় ঘূষি কিবা লাথি কিলে,
জমানার হালে, হাত দিত গালে, নানা কায়দা কিবা ছলে কৌশলে,
নিত ফায়দা তুলে একটু ভূলের সুদাসলে, বানাতো মোরে সবার সেবা দাসী ॥
করে সবে শুধু হুকুম জারী,
সবাই চায়, যা তার দরকার যেন এখনই পায়, অতী তাড়াতাড়ি,
আজ আর ভয় নেই,
যা বলে তা নিমেষে করে দেই,
শত ফরমাশ যত ছোট ছোট কাজ এক রাশি ॥
পায়ে রাবারের জুতো, ছাতা একখান হাতে,
খানা কয়েক আটা রুটি কাগজেতে মুড়ে নিয়ে সাথে,
অফিসে এসে, সময় পেলে ক্ষনিকের তরে একটা টুলে বসে,
সারাদিন, আমি যেন একটা মেশিন, কাজ করি ঘড়ী ধরি সকলের পাশাপাশি ॥
কেউ নাম ধরে ডাকে,
কেউবা হায়দরি হাক হাকে,
কেউ বলে ভাই,
কার কি নাই, যার যা চাই,
যাই হোক, হুকুম আর কাজের শেষ নাই,
কারোবা মেজাজ এমন, সামান্য ভূলে,
কিবা একটু বিলম্ব হলে, যেন এখনই মোরে দিয়ে দেবে ফাঁসি ॥
আমি চা বানাই,
গ্লাস ধূয়ে পানি খাওয়াই,
কোন কাজে আপওি বা অনীহা নাই,
নিয়ে টেবিলে রাখি কিবা হাতে তুলে দিই যে চাহে যাই,
সবার ধারনা তাই,
বুঝি আমি বিশ্রাম পাই,
ওজু করে নামাজ পড়ে কিছুটা ক্লান্তি নাশি ॥
ধূলি বালি যত ময়লা সাফ করে,
চেয়ার টেবিল তোয়ালে কাগজ কলম নথি,
বেসিনে হ্যান্ড সোপ আর টয়লেটে টিস্যু যার যেখানে থরে থরে,
ভাজ ভাজ করে সব সাজাই,
মিছেই এই ভেবে হাফ ছাড়ি, বুঝি মোর এখন আর কোন কাজ নাই,
সবাই ডাকে, বড় বাবু ছোট বাবু,
ধমকের ভয়ে হাটু কাপে, কাজের চাপে হয়ে যাই কাবু,
কলিং বেলের র্ককশ আওয়াজের কাছে যেন আমি একজন অসহায় হাবু,  
ছুটে গিয়ে কাতরেতে দাড়াই, তবু যেন মোর মাফ নাই,
জানিনা কোন দোষে, বকুনি খেয়েও শেষে, মৃদু করে আমি হাসি ॥
কি হবে রেগে,
তাই আমি চলি বাতাসের বেগে,
যাব কোথায় ভেগে, সারা অফিসে যদিও আমি একজন,
যাই বলো টি বয়, অফিস বয়, মেসেঞ্জার আরদালী কিবা পিয়ন,
যেন শুধু বলতে বাকী,
সটান দাড়িয়ে করজোড়ে চেয়ে থাকি,
চোখের পলকে ছুটে গিয়ে যাকে বলে আনি তারে ডাকি,
এদিকে ওদিকে ছুটোছুটি করি, বারবার আসি যাই,
মাঝেমাঝে কোন কামড়ায় কি নাই,
কি লাগে কি চায় উঁকি দিয়ে চাই,
আছে নাকি আর বাকী কারও কোন ফরমান,
দিয়ে হাসি, সে হাসি কষ্টের ও অভিনয়ের নহে তবে অভিমান,
না জানি কি হয়, আগামী মাসেই মোর হবার কথা আছে প্রমোশান,
মেঝ সাব ছোট সাব কেরানী যত সবারে সালাম ঠুকি,
একপাশে সরে গিয়ে দাড়াই ভক্তি জানাই,
মেট্রিক পাশ করা ও টাইপ জানা, আছে সমূহ সুনাম,
আশা বয়ে বেড়াই, সুযোগ ও সম্ভাবনা কেরানী হতে পারি আমি তাই,

১৪
বিনয়ে মোর সম কেহ নাই, করি সবারে হেন সম্মান,
তবে এ নহে বড়াই, তা ভেবে অনূভবে তৃপ্তি পাই ও খুশীতে ভাসি ॥
এই মোর চাকরীটার,
বড় বেশী ছিল রয়েছে দরকার,
মাস শেষে একমুঠে বেশ কিছু টাকা পাই,
সবারে খাওয়াই পড়াই, দায়দেনা নাই, সামান্য জমাই,
নাহলে নিশ্চিত,  মোর মা বউ ছেলেমেয়ে হয়ত রহিত উপবাসী ॥  
সবার শেষে যাই আমি আর, সবার আগে আসি,
সাহেবদেরে যেমনি আমি অফিসটারেও তেমনি ভালবাসি,
নাইবা থাকুক তেমন বিওবেসাত ধন, ভালবাসে যারে দশজন,
বাবামায়ের মতন আমিও তেমন, জীবন যার সাদামাটা অতী সাধারন,
ছিল আমার জীবন,
এমন একটা আজব চাদরের মতন,
মোখ ঢাকিলে যার বারবার উদোম হয়ে যায় চরন,
কালো টাকা নাই, বাম হাতের কামাই, নাই যার চুরি সুদ ঘূষ,
লোকে বলে আমি নাকি একজন সফল মানূষ, নাহয় হলাম ইবা এক চাপরাশি ॥
সকলের ধারনায়,
বিও ধনের এই দুিনয়ায়,
আমি নাকি এক পরাজিত সৈনিক,
আমি বলি না, তাদের ঐ উক্তি ধারনা নহে সঠিক,
বুক ভরা আমার সুখ, তাদের চেয়েও শান্তি অনেক অধিক,
ধিক তাদেরে ধিক, যদিও সিড়ি বেয়ে তড়তড়িয়ে উপড়ে উঠার হিড়িক,
মম কাগজ কলম মন্দ ভাল উওম ও অধম শানিত লেখনীর,
প্রসন্ন বদন, অটল হৃদয় মন, তীখ্ন নয়ন ও চীর উন্নত মম এই শির,  
হেন মনের রোগ পেতে আরও ভোগ বিনোদন খেতে বারো মজা নই অধীর,
নেই বাসনা মম কাড়িতে কারো ধন কিবা হতে তাদের সম, আমি এক বিজয়ী বীর,
এ দেহে সব সয়,
নাই তাদের মতন অযথা অমূলক অকারন ভয়, জীবনে অংকিত আবৃত শত কালো চিড়,  
নেই কোন অনটন,
যাদের পাহাড় সমান ধন,
তবু কেন অতী তুচ্ছ ক্ষুদ্র মন, শ্বেত পাথরে বাঁধা তাদের বিলাসী কুটির,
তারা ইতো নিরব র্দশক শ্রোতা, মানবতা হয়েছে ভোতা অসহায় মূক বধীর,
কিসের মানূষ সেজন,
কেন এ জীবন, কে করিল মানূষ সৃজন,
দিলো বিওবেসাত ধন, প্রিয়জন ও ভোগ বিনোদন,  
যার নাই তৃতীয় নয়ন দূর দরশন,
জানা এ জীবনের ভেদ কারন, মরনের ইবা ছিল কি প্রয়োজন,
নিজে খায়না পরকে খাওয়ায়,
রাজা হয়ে প্রজার কাছে যেন কি চায়, তা ইবা শোনতে লাগে কেমন,
আসা যাওয়া পাওয়া না পাওয়া কিবা হারিয়ে যাওয়া,
কি লাভ কি ক্ষতি হলো কি র্অজন সাধন দিয়ে কি বির্সজন ॥  
হৃদয় যাদের হয়েছে পাষান কঠিন,
অজানায় প্রতিদিন হায় বাড়িছে ঋন, যদিও সপ্ত রঙে জীবন রঙীন,  
মহা পন্ডিত বিদ্যান,
জেনেশুনে দেখি করে বিষ পান,
কবে ভাংবে ভূল যারা মোহে বিভোর ভোগে মশগুল, মিথ্যা মন্দের হবে অবসান,
ঘরে ঘরে নিরব কান্নায় ধুকেধুকে মরে, অসহায় ঐ সব মানূষের তরে কি তাদের রয়েছে অবদান,
চোখ থেকেও দেখেনা,
তৃতীয় নয়ন নেই বলে তারা কানা,
যেন সব জানা আসলে আবু হকে বলে মূল্য তাদের র্মূখের সমান ॥  
তবুও তারাই সেরা,
ভাবিছে চৌদিকে তাদের নিরাপদ প্রাচীরে ঘেরা,
টানিছে র্দূবলের নাঁকে লাগিয়ে রশি,
শীতল গাড়ী, আফিস আর বাড়ীতে বসি,
ঠিকানা তাদের সাড়ে তিন হাত ভিজা মাটির জায়গা,
সোনার বাটি সোনার চামচ সোনার থালা যতই হোক সোনায় সোহাগা,
তাদের এমনই কপাল ওরে এমনই শুভ রাশি, পেলো তারা অঢেল সুখ ও মজা দুদিনের এই দুনিয়ায় আসি ॥
কোন দুঃক্ষ নাই, খুউব ভাল আছি ভাই, নাহয় হলাম ইবা আমি একজন অতী সাধারন চাপরাশি ॥