পর্ব - ০১


তোমার ঘর-বাড়ী, গাড়ী নাই,
ঐকথা শোনে একদিন চাচি জেঠিরা বলেছিল সবাই,
অ বেটি তোমার সমান,
যেমন স্বামী ঠিক তেমনই দামী সব সন্তান,
সবায় কি পায় খোদার এত মূল্যবান দান, সারা গাঁয়ে এমন একজনওতো খুঁজে নাহি পাই ।
হাটতে গিয়ে পাড়ায়,
শুনেছি হামেশাই নাকি বলাবলি করছে সবায়,
যে যেভাবে বেশী করে চিনে, ভালমানুষ ছিল অমুকের বউ কিবা তমুকের মায়,
মোখে মোখে সর্ব লোকে বলে, তুমি নাকি আসলে ওগো বড়ই ভাগ্যবতী ।
স্বামীর হাতে পেয়েছো কবর,
প্রায় রোজই দুএকবার আসে কেমন আছো নিতে খবর,
হয়তো এই তার সেই পুরস্কার, বিনা হাহাকার জীবন করেছ পার রেখে ধরে সালাত ও সবর ।
দুপায়ে পারায়ে দিয়াছে মাটি,
হলেও ঢের কষ্টের ভালবাসার সে চিরবিদায় পরম সত্য ও খাটি,
পরম সোহাগে গাছের ছায়ায়,
পবন তার শাখা পল্লব দুলায় দুলায় সারাক্ষণ মধুর পরশ বুলায়,
এমনইতো হয় মাটি আবার বুকে টেনে লয়, হয়ে মায়ের মমতার মত বিছায় তার বিশাল শীতলপাটি ।
দিবসে নিশিথে সুখের ছড়াছড়ি,
ঘুমের ঘোরে ঐ আয়েশে এপাশে ওপাশে গড়াগড়ি,
সাঁঝের বেলায় জোনাকিরা পিদিম জ্বালায় আর ঝিঝিরা বাজায় তাদের বিষাদের বাঁশরী ।
দুই প্রহরের পর ব্যাঙ, কচ্ছপ ও ডাহুকের ডাক,
এসে ঐ পরিবেশে যত অশরীরী নিশাচর হুরপরী দলবেধে একঝাক,
গহীন রাতের নিঝুম নিরবতায় কোন সাড়া নেই যখন মানুষের, তা দেখে বিমুগ্ধ অবাক,
হয়ে দিলখোশ মতি উঠে মেতে সকলে হরষে অতি,
নাঁচন করা ফড়িং ও প্রজাপতি, গানের পাখীদের মধুর কলতানে নিমেষের যেথা নাই বিরতি ।
মনেহয় কভু সে ভুলে যাবেনা,
চরণ পাশে বেলীফুল আর শিয়রে তার একখানা হাস্নাহেনা,
সে ইতো পরম আপন ও বন্ধু চিরতর,
কাছে কি দূরে জীবনে ও মরণে ভুলে যায়না কিবা হয়না কভু পর,
লাগিয়ে চারা দিয়ে চারদিকে ঘেরা বাঁশের বেড়া, দেখতে বড়ই চমৎকার সাজানো তোমার ঐ মাটির ঘর ।
দুচোখে তার তপ্ত গড়িয়ে পড়া জল,
সেতো খাটি ভালবাসা ও তোমার করা ঢের পুণ্যেরই ফসল,
যে যাই বলুক তাতে কি আসে যায় সমাজের যত মিথ্যাবাদী, গুনাহগার ও নিন্দুকের দল ।
তা যেন বিশাল এক ঝুড়ি ভরা,
দরবারে খোদার দুহাত তোলা তোমার ঐ স্বামী বেচারার হৃদয় উজার করা,
হয়তো মাফ হয়ে যাবে স্ত্রীর গুনাহ সকল,
ঐ দোয়া পরিমল, বলো কেমনে যাবে তা বৃথা কিবা হবেরে বিফল,
খোদার আরশে যদিরে উঠে একবার, তার মাগফেরাত আর ঐ মহাকরুণার একটুখানি ঢল ।
হেরিলে বলে সাদামন,
সে যেন বড় দুঃখী ওরে ঠিক এমনই মানুষ একজন,
সহজ, সরল, নাই কুমতি গরল, পানির মতই তরল ও কোমল, সত্যবাদী ও সাদামাটা সাধারণ পুণ্যবান অতি ।
কেমনে এমন হয়,
বিশ্বাস যেন তা হবার মতই নয়,
ওরে নিশ্চয় সে এক পরম পাওয়া ও দূর্লভ বিজয়,
সত্য বলা, সুপথে চলা আর বিধাতায় রহে যার অপার বিশ্বাস, মান্যতা ও ভয়,
ভালকথা, ভালকাজ ও সামাণ্য দানই দাতার মন ভরান, অতি ভালবাসেন ও সদা তাই চাহেন মহান খোদা করুনাময়,
বাহারি বেহেস্তী সাজ হয় যার প্রতিদান ও পুরষ্কার, কেউকি বলো তা এমনিতেই পায় না হলে পুণ্যবান ও সতী ।


পর্ব – ০২


ছিল কত সাধ বাসনা,
দিতে পারিনি আমি তারে কোন সোনার গহনা,
থাক বিলাসিতার গাড়ী কেনা,
হয় নাই মাথা গোঁজার ঠাই, তার লাগি বাড়ী করা শুধু একখানা ।
আজও হায় রয়ে গেছে অনাদায় তার মোহরানা,  
হিসাবেতো পায় যদিরে তা সে আখেরাতে চায়, তবে কেমনে কবে শোধ হবে ঐ দেনা,
সবাইতো মধুভরা বধূয়ার দেহ ও মন ষোলআনা দুটোই পেতে চান,
গোপন সে খবর রয়ে যায় অজানা, কেউ পায় আবার কেউ তা পায়না, হয়তো আমিও পেয়েছি শুধু তার একখান ।
তবু আজ নাই মোর ওগো কোন অভিযোগ নাই,
শুধু তোমার লাগি ঘুম হতে জাগি বিধাতার ক্ষমা ও তার সেরা পুরষ্কারটাইতো বারবার চাই,  
ভালবাসার আশাযে হয় তাই,
যদিগো কোনদিন তোমার কাছে আমার ঋন হতে মুক্তি পাই,
মোর জীবনের সব দীনতা দোয়া হয়ে আজ তাই, দিচ্ছে সদা এখন তোমার পুণ্যের ঝুলিটা ভরাই,  
নাহলে কি উপায় তবে কঠিন ঐ আখেরাতে হবে, বুঝি অজ্ঞতা ও অবহেলায় করেছি আমি নিজেরই ক্ষতি ।
হয়তোবা পাওনি বলে তুমি ঢের বিত্তধন,
পরম ঐ সুখটাকেও তোমার হয়নি কখনও করা তেমন উপভোগ ও মূল্যায়ন,
জানো কি তোমার স্বামী,
কত নেককার, পরহেজগার ও কেমন দামী,
কেমনে তা রটেছে পাড়ায় জানিনা, বলিনিতো সেকথা কখনো কাউকে আমি ।
কিসের আবার বয়সের বালাই,
যেজন সুস্থ্যতা ও সততায় ভরা তারতো পৌরুষের সীমা নাই,
যাদের ঘরে এখন স্বামী নাই, অকপটে সাহসে তারা কানেকানে বলছে আপন বিয়ের কথা ঐ সবাই ।
কিসের সরম,
ক্ষুধা ও পিপাসা যখন চরম,
সেকি সত্য নয়, নিভৃতে হয়যে মাথাটা গরম,
একা ঘরে রাত দুপুরে, ঘুম ভেংগে তাড়নায় বন্ধ হয়ে যেন আসে দম,
অন্ততঃ এটুকু সুখতো চাই ই চাই, হোক নাহয় তাতে অন্য সবকিছুই আমার ভাগে একেবারে কমকম ।
মাটির এ দেহটার,
রয়েছে পিপাসা ও ক্ষুধা ভালবাসার,
যতই বলো যায় কি করা, হয় কিবা রয় মন থেকে কভু জুদা তার ।
এ জীবন, জগত ও সংসার,
সখে নয়, প্রয়োজনে হলেও তা বারবার,
গুনাহের চেয়ে বিবাহ বেহতের, কি ক্ষতি যদি বিয়ে তার হয় আবার ।
জীবন নহে বন, ভিনদেশে এক কারাগার,
সুখ, দুঃক্ষ-বেদনার মাঝে অনেক কাজের সমাহার ও দায়ভার,
রাজার সনে দলিলে ধরা প্রজার আকাশে গোপনে করা, জমিনে এসে ভুলে যাওয়া সব অংগীকার,
ইচ্ছে করে আহারে ডেকে এনে আমি সব দেই তাহারে, বলো কার নেই দরদ ও সহানুভূতি কোন ভাল মানুষের প্রতি ।
হোক সত্য, ভাল ও পুণ্যের জয়,
ভাল কাজে কিসের সরম, কেনরে হয় হবে এত অমূলক ভয়,
বাহিরে রঙের ঘের,
ভিতরে লুকানো রয় কুটিল পঙ্কিলতা ঢের,
নাই ভাবনা কি হবে শেষে ফিরে গেলে দেশে, পাপ যদি পূরে হয়ে যায় একসের ।
মন্দের শাসন ও দমন আর,
আদর, কদর ও যতনে লালন করা সত্য ও ভালটার,
ফুটবে আলো ও ভালোর চোখ,
সুজনের সুনাম ও সম্মান ফিরে পাবে যত মন্দ ও দুষ্টলোক,
ভাল কাজে লাগবে যক্ষের ধন, কবে হবে সচেতন যত অচেতন লোক, এ নষ্ট সমাজের জাগরণ ও সুমতি ।


পর্ব – ০৩


বলো কে নহে সুখের কাঙাল,
মাথার উপরে নাই ছায়া যার ও ভেংগে গেছে যেন সব ডাল,
ভাল মানুষের ভাল চাই,
এ জগতে আসলে যার কেউ নাই আর কিছু নাই,
পতিহারা নারীর পতি ছাড়া আর নাই কোন গতি,
তাই সতী নারীর নিরাপদ শান্তি-সুখে ও সুনামে বাঁচার ঠাই হয়যে শুধু তার পতি,
বড় অসহায়, নিজেই যেন নিজের বোঝা ও সমাজের দায়, কেমনে কবে তাদের হবে শুভ মতি ও একটা সদগতি ।
খাই বা না খাই,
কোনকিছু আমি পাই বা না পাই,
নিশ্চয় জীবনে হয় সংগীর প্রয়োজন যার কোন বিকল্প নাই,
আর কিছু নহে স্বামী রুপে আমিযে ওরে তাই, একজন খাটি ভালমানুষই শুধু পেতে চাই,
জীবনের লাগিইতো ধন, কত বধূয়া তার স্বামীকে পালে হয়ে প্রিয় স্বামীরই মতন, করে ব্যয় তার নিজের কামাই ।
বন্ধু কিবা দাসী হবো,
সংগী হয়ে আজীবন তার পাশেই রবো,
হয়ে ভিজা বসনের মতই যার তাই,
সারা দেহমনে রহিব অদেখায় আমি অতি গোপনে লেপ্টে জড়াই,
এ কোন অসীম কুদরতি খোদার, প্রতিযোগিতায় হতে চায় দুহাত পাতি দরবারে তার, এখন সবে পুণ্যবতী আর জান্নাতী ।
এক নয় দুই নয় দীর্ঘ পঁচিশটি বছর,
মাথায় নিয়ে নানা পেরেশানি, তাড়না ও সকল বাদল-ঝড়,
ঐ গরীব বাবামায়, বুড়োকালে কেমনে ওরে হয়ে যায় পর,
তারা কি করেনি আজীবন সব সন্তানেরে লালন-পালন, দিয়ে বুকের সবটুকু ভালবাসা, যতন ও আদর ।
দুদিনের এ জীবন,
বাবার ঔরস আর মায়ের জঠরের ধন,
রক্ত আর নাড়ির সুনিবিড় ঐ সে মমতার চির বন্ধন,
ঘরে তোলার পাকাধানে কে দিলো হঠাৎ এসে মই, কেনরে হলো এমন,
জানা হলোনা আপনের নকল বেশে কোন্ সে দুষমন,
মুখোশের অন্তরালে শেষে, বুঝি লোভ ও বর্বরতা এসে, তাকে কোন ফাঁকে গোপনে করেছে হরণ ।
কেনযে আমার শুধু মনেহয় এমন,
জীবন্ত কারা যেন আচমকা তড়িৎ করেছে দাফন একটা তরতাজা জীবন,
অভিশাপ নয়রে তা বিধিরই বিধান যা চিরন্তন,
কর্ম্মের ফল নয়রে মিছে কভু যায়না বিফল, সাধ্য কার যাই হোক তার শাস্তি-পুরস্কার তা ফিরায় না করে গ্রহণ ।
রয়েছে সবারই তার নিজের করা হিসাবের পাওনা পাপ-পুণ্যটার পরকালে যার হবে নিখুঁত সঠিক পরিণতি ।
কেনরে বুঝিলনা বিদ্যান মন,
এখন নাহয় মুখ লুকানো সুচতুর তারা যে কয়জন,
নাই পথ যতই চায়, পালাবে কোথায় তারা মহাজালেতে সবাই ধরা পড়বে যখন ।
উঠিল সে কোন হিংস্রতায় মাতি,
আরো অনেক বেশী পেতে ও খেতে বিশাল এক সোনার ডালা পাতি,
সুখ নেই, পুড়িয়ে মারে দেখেছি কত প্রাসাদ,
যখন তারা পড়বে ধরা হবে কাল তাদেরই সে পাতানো ফাঁদ,
হাতে হাতকড়া ও পায়েতে বেড়ি লয়ে পড়ে গেলে পরের তরে করা নিজের খাদ,
কে তড়াবে তাদেরে তখন, ঝাপটে ধরবে যখন নানান আপদ, নিদান, দুঃক্ষ, যাতনা ও কষ্ট-বিষাদ,
এ কেমন জিঘাংসা চতুর প্রহসন ভালবাসার, কেন রইলো বাকী তা জানার কত ভয়ংকর, বীভৎস ও কেমন আত্মঘাতি ।
ওগো তুমি ভালো থেকো,
আমারেও আমারই মতন ভালবেসো ও মনে রেখো,
ওগো ক্ষোভে রাঙা অভিমানি,
পাশে বসে যে কারণে ভাত বেড়ে তুমি খাওয়াওনি,
না খোদার ঘরে না কোন লোকের কাছে আমিতো কোনদিন সে নালিশ করিনি,
আমার দেওয়া অনাম ধরে যতই আজ আমি ওরে করিনা ডাকাডাকি, আরতো ফিরে তুমি আসবেনা জানি ।


পর্ব – ০৪


খোদার করুণা বিনা কিছু কি হয়,
তাই দীনতা ও অক্ষমতার দোষে আমি ওরে অপরাধী নয়,
তোমার ভুল ভাঙাতে না পারাটা ছিল আমারইতো বিশাল এক ব্যর্থতা ও পরাজয় ।
হেথা তুমি খুউব ভাল আছো জানি,
তোমার নামে চিরস্থায়ী মালিকানার মহারাজার কুটুমবাড়ীখানি,
আহা দেখতে বড় মনে চায়, কে দেবে ঐ সময় আমায়, একটু এগিয়ে এসে কে নেবে হাতধরে টানি ।
কোন কাজ নেই কাননে ঘুরে বেড়াও,
যত চাও ছড়ানো অপার সহস্র নেয়ামত খাও আর শুধু ঘুমাও,
হেলাফেলা নয় তুমি মহারাজার কুটুম,
এখন তোমার ভোগ-বিলাস, বিনোদন আর বারো মজার হরষের ধুম,
কার সে সাধ্য কিবা দুঃসাহস, কভু ভাঙে গভীর আরাম ও শান্তি-সুখের তোমার ঐ বিভোর নিদ্রাখানি ।
আলোচনায় তুমি আমি দুইজন,
মোখে মোখে এলাকায় নাকি তাই শুধু চলছে এখন,
সুনাম, সহানুভূতি ও দোয়ার যেন এক নিরব উৎসব ও তোমার বিদায় শোকের মাতন ।
না আমি তা চাইনা,
ষোলাআনা সবটুকু তার তোমারইতো পাওনা,
বুকে লয়ে ঐ রহস্য জানার নিদারুণ আকুতি, উৎসর্গ করা রইলো যা ওগো তোমার প্রতি ।  
তারাইতো পরম ভাগ্যবান ও ভাগ্যবতী,
লোকের মোখে বলে যদিও তা কারো গায়ে লেখা নাই সৎ ও সতী,
দুনিয়ায় যারা পায়, মহান খোদার শ্রেষ্ঠ দান, নেককার সন্তান আর পুণ্যবান পত্নী ও পতি ।
আখেরাতে বেশী পাবার আশায়,
বিশ্বাসীগণ, অন্তহীন জীবন ও তার নায্য পুরস্কার পায়,
সত্য বলে ও সুপথে চলে, আপন বীজতলায় যতনে বীজ ফেলে ও পুণ্যের চারা লাগায়,
দুনিয়ার সব ধন-জন বাড়ী-গাড়ী ফেলে রেখে ছাড়ি, মহারাজার খাস কুটুমের ঝিল-বাগানের বিশাল প্রাসাদ বাড়ী ।
পঞ্চরসি মধুস্বাদে কড়া,
ষোড়শী রূপসী সখা-সখীতে ভরা,
চোখ জুড়ানো আর দেহ ও মন পাগল করা,
শত ফুল-ফল ও পাখীর কুজনে যেন একেবারে ঠেসে ভরা,
মহারাজ রুচিতে ও তারই পছন্দে সপ্ত শুচিতে মনের মত করে সাজানো ও গড়া ।
একজনের ঐ বিশাল বেহেস্তখান,
ঐ প্রাসাদ ও সবকিছু তার যেন মনেহয় কেন শূন্যে ভাসমান,  
আঁকাবাঁকা ভিতরে বাহিরে চৌদিকে ঘেরা নীল-সবুজের অপরুপ মনোহর ঐ সে ঝিল-বাগান ।
লুকোচুরির ঐ পরাণ যেন ছটফট আনচান,
তারা সবে সমবয়সী যেন সখা-সখী একে অপরের প্রিয় মেহমান,
প্রসন্ন বদন, হরিণ নয়ন ও আলতা রাঙা চপল চরণ যেন সবে গুনগুন গাহিছে গান,
হয়ে রবে অসংখ্য হুরগণে, ঐ বান্দা কি বান্দির খেদমত, তাবেদারি কিবা সম্মান প্রদর্শনে নিবেদিত প্রাণ ।
ঐ সব মহান পুরস্কার, নেয়ামত ও দান,
মেহেরবান খোদার অংগীকার ও অপার করুণার প্রমাণ,
ঐ সবই বেহেস্তীগণের প্রতিজনের তরে তাদের দুনিয়ার কাজের পাওনা প্রতিদান,
শুধু ভোগ দখলেরই অধিকার, করা যাবেনা হস্তান্তর কিবা মালিকানার স্বত্ব প্রদান ।
নেশায় ভরা ঐ ভোগ-বিলাস,
যেমন খুশী বিনোদন ও হরষের নিরব মাতন ও উল্লাস,
নেই কোন নিঃসরণ, ক্লান্তি ও অবসাদ কিবা বিষাদ আর অবাধ বিচরণ, মধুর মিলন ও বসবাস ।
সারাক্ষণ শুধু পানাহার,
যার যত ইচ্ছা, রুচি, পছন্দ কিবা তার চাহিদার,
মওজুদ কিবা পরিবেশনের নেই কোন কমতি বা সামাণ্য ঘাটতিও তার ।
নেই কোন অবজ্ঞা, অবহেলা কিবা বেশী টান,
কেউ নহে কারো পর সবাই সবার প্রিয় সমান, বেশী সুন্দর কোন্ সে মুখখান,
যাদুর ঐ মহাজগত ঘর যেন এমনই ঐ আদর, আপ্যায়ন ও আতিথেয়তা যা অনন্য, অতুলনীয় ও অফুরান ।  


পর্ব – ০৫


নহে রঙচটা কিবা রঙ মরা,
সহস্র নেয়ামত যেন উপচে গড়িয়ে মাটিতে ঝড়ে পড়া,  
সবুজ মখমলের চাদরে মোড়া নহে পুরাতন, কারুকাজ করা ও সেরার চেয়েও সেরা,
সদ্য পরিপাটি হেন ঐ আয়োজন, মন ভুলে যায় হয় স্মৃতির বিস্মরণ, শত দুনিয়ার চেয়েও বড় ঐ বসুমতি ।
হে কুড়ে ঘরের রাণী,
টের পাইনি, আমি বুঝতেও পারিনি,
কখন কেমনে কবে, ওগো তুমি হয়েছিলেযে অনন্য এমন,
সহসা চলে গিয়ে তোমার সাজানো এ সংসার, করেছো যেন তা বিজন বিরান মরুবন ।
কেন আজ তাই যেন ভুবন আমার,
অনটন আর দীনতার মাঝেও মধুর সুর ছিল যার,
নেই কেনরে কদিন আগের নীল সবুজের ঐ ঝিল-কাননের সমাহার,
যেথা বুকভরা নেই দম, আহার ও ঘুম সবকিছু কমকম যেন অদৃশ্য হেন এক অশ্রম দুঃসহ নির্মম কারাগার ।
আমার হাতেই চাবী যার,
রয়েছে খোলা তার সব কয়টি জানালা ও দুয়ার,
কত ভেবেছি ও খুঁজে দেখেছি কেন তবু যেন কোন পথ নেই আমার কোথাও পালাবার ।
তিরোধানে তুমি শুধু একজন,
আর কারো বোঝা নয়, কোন ভাবনা কিবা জ্বালাতন,
সবকিছু আজ মনেহয় যেন আবর্জনা, কেন একেবারে মূল্যহীন ও নিস্প্রয়োজন ।
চুপচাপ কতযে না খেয়ে থাকি,
বলো গিয়ে বলবো কারে, কিবা কারে করি ডাকাডাকি,
কি বলবে লোকে কে ধরবে নিন্দুকের মুখে, কেজানে কোন সুযোগে কে দেয় গায়ে কোন্ কলঙ্ক মাখি ।
এ যেন এক উৎকট নতুন জ্বালাতন,
মাঝেমাঝে মনেহয় তা বোঝার উপর একটা শাকের আঁটির মতন,
আমিইতো পারি, যখন চাহে কিবা ভাল থাকে মন করতে রন্ধন, তা যেন হরষের একজনের বনভোজন ।
ভারী নয় সেতো অতি হাল্কা কাজ,
তবু কেন জানি ওসব এখন আমার ভাল লাগেনা আজ,
একটু ঝামেলার কথা মনে হতেই আমার, মাথায় যেন পড়ে ভেংগে একটা মস্তবড় বাজ,
কূটাকাটি ও ধোয়াধায়ি সে যেন আর সহেনা আমার গায় কিবা একেবারেই তা গছেনা মন ।
মানুষের জীবনটাই এমন,
জোড়ায় জোড়ায় চলে কার বলে সকল জীবের এ ভুবন,
ইনসান শ্রেষ্ঠ সবার সারাক্ষণ আজীবন তার, একজন সংগীর হয় বড় বেশী প্রয়োজন ।
বিয়ে মানে ভাল কাজ,
কেন তাতে এত দ্বিধা, ভয়, জড়তা ও লাজ,
দুটি চোখ কিবা দেহ ও মনের পরকিয়া নয়,
মিথ্যা ও মন্দের কাছে কেন হবে হার মানা কিবা ওরে পরাজয়,
তা কভু না যেন হয়, মিথ্যে নহে তাইতো বিবাহ করা অতি জরুরী ও অতিশয় পুণ্যময় ।
ভাল কাজের কেন এত নিন্দা, দ্বিধা, দন্দ ও দোষ,
সেতো উন্নয়ন আর প্রগতি নয়, জলন্ত এক অবক্ষয় পুড়ে যা ছাই হয়, নষ্ট চিন্তার রাহুর রোষ,
মুখে লাজ পেটে থুয়ে ক্ষুধা,
ওরে মনটাকে কারো দেহ থেকে যায় কি কভু করা জুদা,
মন্দ মনন, বচন ও কাজ তা কেমনে হয়, নহে নিশ্চয় হতে পারে তা কোন ভাল মানুষের পরিচয় ।  
মিথ্যা সেতো নয়,
আছে কিছু খোঁচার বচন কিবা খোটার ভয়,
তাতে কি যায় বা আসে কার,
এ জগতে বলো কে কার খায় বা ধারে কোন্ ধার,
দেবে তারা মুখে ছাই, স্বজন ও পাড়া পড়শির কানাঘুষা ও সমালোচনা কিবা নিন্দার ।


পর্ব – ০৬


তার রয়েছে উত্তম পুরস্কার,
পারলে হতে ঐ জীবন নদীটা সবরে পার,
মাটির এ দেহ-মনটার স্বাভাবিক চাহিদা ও নেক বাসনার,
আছে লুকানো তার ভিতর, অদেখা কত ঝাপটা-ঝড় কিবা ভাটা ও জোয়ার ।
নিশ্চয় ওয়াজিব লাগি তার,
যেজন মাঝরাতে উঠে জাগি আর ঘরে নাহি সংগী যার,
সত্য কোরআনে কহে নিশ্চয় এ বিষয়টা নহে কোন ভয়, ভাবনা কিবা কাজটি গুনার ।
কে নিবে কার দায়ভার,
খোরপোষ কিবা ভরণ-পোষণ কে দিবে কার,
ভালবাসার দেনা-পানার দায় ও অধিকার, হতে পারে হয় স্বামী-স্ত্রীতে সমান দুজনার ।
রিজিকের মালিক এক আল্লাহ,
তার হাতেই সব দান, নেয়ামত ও বরকতের দাড়িপাল্লা,
মূল্য কত একদিনের ঐ ভালবাসার,
যে জানে তার আরও উদার ও সদয় হবার রয়েছে খোলা দ্বার,
ক্ষতি কি যে পারে দেয় ও দেবে, সংগীকে তার আরেকটুখানি বেশী সহযোগিতা কিবা ছাড় ।
খোদ খোদা হয়েছেন তার,
সকল সৃষ্ট জীবের লালন পালন ও রিজিকের জিম্মাদার,
আজীবন চিরকাল, দিয়েছেন কোরআনে তার ঘোষণা ও করেছেন ঐ উদার মহান অংগীকার ।
কেমনে বলো আমি করিব তা অস্বীকার,
সংগীহীন স্বামী কিবা স্ত্রী সবার, শুধু মিথ্যা বলার ইচ্ছা নাহি যার,
ভালবাসার সকল খাবার, বিছানা ও দেহ-মন,
মনেহয় অনেকেই চায়, তাই বলে সে কি দেওয়া যায়, কারেও তোমার আসন,
হোক কারো বিবি চারজন, অন্তরের গোপন ভালবাসার অদেখা যে সিংহাসন কভু সমান ভাগ হয়নাযে তার ।
হয়না মানুষ সব বিদ্যান,
কেউ কেউ রয়ে যায় অন্তরে পশুর সমান,
লেখাপড়া করে মুখে মুখোশ পড়ে, যতই ফিটবাবু হয় তা আসল নয় তারা বর্বর, নিষ্ঠর ও পাষাণ ।
ভুলে যায় তার স্রষ্টা ও দাতা মহান,
আছে ঐ দাতা ও পিতা-মাতার কাছে ঋন, দায় তার দান-প্রতিদান,
সমাজের লোকের চোখে ও মুখের ভাষায় তারা অমানুষ, অকৃতজ্ঞ, মূর্খ, নিমকহারাম ও বেঈমান ।
ডাক্তার করেছে কন্ঠ রোধ,
বুঝি ভোতা হয়ে গেছে মানবতা, কারো কারো বিবেক ও বোধ,
ধোকা, প্রতারণা ও মিথ্যায়,
জানিনা তারা কি পেতে চায়, কিবা আসলে দিন শেষে কি পায়,
কেজানে তা প্রতিহিংসা নাকি কারো হিংস্র জিঘাংসা, ক্রোধ ও ক্ষোভের প্রতিশোধ ।
সবার বাবামায়,
বার্ধক্যের নির্ভরতা ও আস্থাহীনতায়,
নিরব চোখের ভাষায়, পারেনা তবু কি যেন এমন তারা বলিতে বা বুঝাতে চায় ।
হয়তো একটু সুখ, আরাম, শান্তি, সম্মান ও আদর,
পায়ের তলে একটুখানি মাটি আর সামাণ্য ছায়া তার মাথার উপর,
অনটন অসচ্ছলতায়, কিবা কারণে অকারণে হায় সন্তান যদি কখনও হয়ে যায় পর ।
নহে নির্বাক তবু যেন ভাষাহীন,
নাই কোন পিছুটান কিবা দায়-দেনা ও ঋন,
তবুও কেন মনের ভিতর বহে কোন্ সে অজানা ভয় ও অনাগত দুঃসময়ের দূর্ভাবনার ঝড় ।
একটা সময় যদিওবা  মনেহয় জীবনটাকে দায়,
না তা ঠিক নয়, মহারাজার রাজ্যে কেউ নহে আসলে অসহায়,
বিত্তধন কিবা তেমন সহায় সম্বল থাক বা নাথাক তবুওতো একমতে দিন চলে যায়,  
ওগো তুমি এত ভেবোনা, যাদের সন্তান ও সম্পদ নেই কেমনে তারা বাঁচে খায়, বলো হয়ে কার উপর নির্ভর ।


পর্ব – ০৭


কেমনে তুমি তা জানিলে,
বারবার কেন বহুবার ঐ একই কথা বলতে চেয়েছিলে,
দয়া করে সবারে দিও তুমি ক্ষমা করে, ওগো কোন কষ্ট বা অভিমান না রেখে তব দিলে,  
তোমার হয়নি ক্যান্সার, তা যাই হোক তা তোমারে দেয়নি ছাড়, রয়ে গেল বুকে আমার ঐ রহস্য জানার আকুল আকুতি ।  
আমি একাকি এখন,
রয়েছি পড়ে ও সইছি নানান জ্বালাতন,
সেকথা বলবো কারে আর বুঝিবে তা বলো এখন কোন্ সে জন,
সঠিক সময়ে সটকে পড়েছ করেছো পলায়ন, বুঝিলাম আজিকে আমি আসলেই তুমি বড় বুদ্ধিমতি ।
নিত্য আমারে করে তোলে পীড়িত বা ক্লান্ত,
পাইনা খুঁজে দিকের শেষ, কত বড় রাজ্য আর কোথায় তার অন্য প্রান্ত,
তবে আমি কি করিতাম, কেজানে কি পরিণতি হতো,
আমি যদি মালিক ও রাজা হতাম তার, আর প্রজারা আমার কোন আদেশ যদি নাহি মানতো ।
সারাক্ষণ অনুভবে ও চেতনায়,
মোর পঞ্চ রিপু আর সপ্ত ইন্দ্রিয়ের ছোট্ট আয়নায়,
অন্ধকারে থেকে মোর, বলে হয়েছেতো ভোর আকুল আলোর তৃষায়,
তাই বলে আর আমারে দলে নিয়ে চলে, অদৃশ্য ঐ তৃতীয় নয়ন যা দেখিতে, শুনিতে, জানিতে ও বুঝিতে পায় ।
মাথার ভিতরে শুধু ঘুরে আর ঘুরপাক খায়,
আমারে ঝাপটে ধরে, কেবলই দোষারুপ করে ও খুউব বেশী জ্বালায়,
বারবার শুধু ওরে সে আমারে শুধায়,
তবে আমি লেখিনা কেন, জবাব তার দেই যেন, তাই সে আমার কাছে জানিতে চায় ।
বলে তোমার হাতের কাছে,
দেখছি কাগজ, কলম ও সময় সবইতো মেলা আছে,
সবাইকে বলো যেন ভাবে, নাহলে নিদানে পড়ে যাবে, অনন্ত যে জীবন পড়ে রয়েছে পাছে ।
কাজ করে যা, তা নিয়ে না ভাবি,
না’ও যদিরে তুই চাস, সেইতো বিশ্বাস মূল্যটাতো পাবিই পাবি,
বাকীতে হলেও ওরে কোন ভুল নাই, উচিৎ মূল্যই পাবি যখন ফিরে মহা রাজদরবারে যাবি,  
বিধাতার দান একটু জীবন সময় বড়ই মূল্যবান, দম ফুরালে পুণ্য করার আকাশে প্রাসাদ গড়ার সুযোগটাই   হারাবি ।  
কোরআনের কথা বলছি আবার ফের,
মন্দ-ভাল সকল কথা ও কাজের শাস্তি ও পুরস্কার রয়েছে ঢের,  
শেষ না হওয়া যত যেন পানির মত সহজ ও দামী কাজ,
যদিরে এমন হয় কেন নাই কারো ভয়, আমার ভিসার মেয়াদই শেষ হয়ে যায় আজ ।
অনাদায় সব দায়,
অদেখায় বিশাল বোঝা হয়ে পড়ে রয়েছে এ ছোট্ট মাথায়,
যা একদা করুণা করে মোর দুটি হাত ধরে, এ দুহাতে তুলে দিয়েছিল মহাজগতের মহারাজায় ।
কোথা হতে কেন এসে,
কি কাজ কার, আর ডাক দিলে যাবো কোথায় শেষে,
অচিন অরূপ মনোহর,
জানা হলোনা যার আজও কোন ভেদ খবর,
কারো চোখে রঙীন, আবার কারো চোখে তা মলিন ও ধূসর,
কিবা রয়েছে তারপর, এমন এক দেশে মুসাফির বেশে, স্বল্প মেয়াদের আজব মজার ঐ একই সফর ।
ওরে মন আমি কার,
আর ভাবো কেবা আসলে আমার,
কোন্ নায়ে চড়ে পড়তে হয় পরে বেসামাল দরিয়ার ঝড়,
অথই অচিন এক পারাবার, বড়ই দরকার ছিল জানার, হেথা কে আপন আর কেবা পর ।
এক জীবনের আদ্যোপান্ত,
মানব জীবন যার নাই মরণ, কোথা হতে শুরু আর কোথা তার অন্ত,
সবসময়ই হয় আমার কলম,
মোর চোখ ও মনের অদেখা যত বিষময় ক্ষতের মলম,
আমার মনোযাতনার সাথী, গহীন আঁধারের বাতি ও ছোট হয়ে আসা একটা প্রশস্ত দম,
সে অনেক কথা, অনেক বলা, অনেক ব্যথা ও অনেক লেখা, না হলে শেষ যেন কিছুতেই হতে চায়না সে ক্ষান্ত ।
জীবনের চোখ,
তার আছে কি নাই ভাবে কি কোন লোক,
তৃতীয় নয়ন কারটা খোলা কার বন্ধ,
যার নাই কিবা বন্ধ বাহিরের দুটি থেকেও ভাই যেন সে অন্ধ,
যতই বিদ্যান কিবা ধনবান, থাকলে জ্ঞান হলে বুদ্ধিমান বুঝিবে সে কত ভাগ্যাহত ও কপাল মন্দ ।
মোহ ও ভোগেতে মত্ত বিভোর,
ভিতরে ঘন অন্ধকার বাহিরে হলেও আলোকিত ভোর,
এমন হতেও পারে, ইচ্ছে করেই আহারে, যেন তারা হয়ে আছে বিবেকের চোর,
তাদের কবে কেমনে কাটিবে ঐ টাকার নেশার ঘোর, খুলবে মনের সকল বন্ধ জানালা ও দ্বোর ।
কতজনে গাছের মরা ঝড়া পাতা কুড়ায়,
বনের গহীনে পাতা কুড়াতে কুড়াতেই একদিন রতন খুঁজে পায়,
এত প্রিয় স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন কিবা এত আপন বাবামায়,
দিন নেই গভীর রাতে, কেউ নেই কিছু নেই হাতে কিবা সাথে, কঠিন ঐ আখেরাতে কেউকি নিবে কারো দায় ।