অনটন - পর্ব


ভাতের বাসন সামনে ঠেলে,
খানা রেখে ফেলে, ক্রোধে উঠে যায় চলে,
প্রায়ই এমন করে, অশান্তির ঝড় বহে ঘরে, শেষে আর সে খায়না ॥  
দেখিলাম সহিলাম আজীবন,
নসিবের লিখন বুঝি আর না যায় খন্ডন,
প্রতিনিয়ত এত শত, অনটন আর টনোপোড়ন,
মোর বউ মেয়েছেলে, প্রায়ই আক্ষেপ করে বলে, এসব দেখতে আর ভাল লাগেনা ॥
এটা আছে তো ওটা নাই,
নিত্য কেন এই ইচার গুড়া শাক ভাজি ডাল শুটকি খাই,
গরীবের সন্তান আমার বড় ছেলে,
ক্ষোভে আক্ষেপে অভিমানে সে প্রায়ই শুনি বলে,
আমার বাপজান, সাচ্চা মুসলমান, নাকি সে সোজা পথে চলে,
দরদে প্রতিবেশী লোকে বলে, কি করবি বাপ, এমনইতো হয় হতভাগা হলে, সবারতো সবকিছু থাকেনা ষোলআনা ॥
সুদ ও ঘূষ,
যে যা বলুক ইহুদী খৃষ্টান চীনা কিবা রুশ,
কমে যায় জীবনের দাম,
রহ্মত বরকত কিসমত নেয়ামত সুখশান্তি আরাম,
হারাম হারাম তা দেমাগে দেওয়া ঠাই, হাতে নেওয়া কিবা ঘরে আনা ॥  
কেন তার দেখিতে নাহি পাই,
আর দশজনের মত চকচকে জীবন রমরমে কামাই,
ঐটুকু তৃপ্তি বা সান্তনা ছাড়া আমার বাবার আর কিছু নাই,
তবু হৈ চৈ করে বড় গলে, সে করে সদা হালাল রুজির বড়াই,
সারাটা জীবনই ফাঁকি, সবই যেন রলো বাকী, মাঝে মাঝেও কি বড় মাছ কিবা একটা মুরগী আনা যায়না ॥
সংসারে কত কিছু লাগে ভাই,
ছেলেমেয়েদের অতী দরকারি কত চিজ ঘরে নাই,
যখন বাবারে কিবা মারে জানাই, চুপ করে তাকিয়ে থাকে মোখপানে চাই,
যেদিকে তাকাই দেখি পথটা বাঁকা,
সোজা পথে লোক নেই, দেখি যেন বিজন ফাঁকা,
কোথা পাই আরও বেশী সাদা টাকা, যেন সে দূর্লভ লুকানো ঢাকা, নেইতো তা জানা ॥


উপার্জন - পর্ব


হাতে সময় নাই,
চাকুরী করি অল্প বেতন পাই,
পারিনা কারো মন ভরাতে,
অতী কাছের কুটুম্ব এলেও দিনে কি রাতে,
পকেটে টাকা নাই, ফেলি আমি খেই কিবা দিশে হারাই,
কেউ দাওয়াত দিলে কোন উপহার ছাড়া কেমনে হেথা বেড়াতে যাই,
কখনও দেখি টান পড়েছে তরকারি কিবা ভাতে, হিমশিম খাই এলে ঝি জামাই,  
যদি টাকা পেতাম, নাহয় একটা দোকান দিতাম, হতো তাতে কিছু বাড়তি হালাল কামাই,
সে কি নয় এক, চোখ আর আত্বার প্রতি অবিচার, সাধকে যে মেরেছে ওরে, গলা টিপে ধরে সাধ্যের সীমানা ॥
কতদিন আর বলো এভাবে চলবে,
আমি চুপ করে শোনব আর সবাই শুধু বলবে,
আলো আর ভালো কেন বলো মিথ্যা ও মন্দের কাছে টলবে,
সত্য ও সুন্দরের চাষ, এইযে সবরে বসবাস কবে সুফল তার ফলবে,
কি করিব তাও যদি হয়, নিশ্চয় তা হবার নয়, প্রভূ আর দাস করিনা বিশ্বাস একসাথে দুজনার হবে হার মানা ॥
বেশী টাকা ঘরে আনতে,
বাবা, তুমি যদি সে ফন্দিটা জানতে,
সুখটারে ঝাপটে ধরে, রশি দিয়ে ঘরে এনে বানতে,
আমাদের কষ্টটারে, ফেলে দিয়ে ধুয়ে মুছে ঝেড়ে, সবারে আরো কাছে টানতে, সবাই যা পারে তুমি কেন তা পারনা ॥
পারিনা যে কিছুতে আমি এ ব্যার্থতা মানতে,
কি যে কষ্ট বাবা, বুকেতে আমার, তা যদি তুমি জানতে,
কটূ কথা বলে বলে, দগ্ধ আমি পলে পলে, তোমারে বারেবারে আঘাত হানতে,
আমিও বাবা, বুঝেছি বড় বেশী মন্দ হয়ে গেছি তাই,
অল্প ভালোর, যেন সবটুকু মোর, আমি ফেলেছি হারাই,
অনূভবে চেতনায় কোন বোধ বিবেচনা কেন খুঁজে আর নাহি পাই,
কতদিন এই ঘরে, তুমি আমি দুজনারে ফেলেছি পর করে, কারো মোখে হাসিখুশী দেখি নাই,
কষ্ট নাকি বিদ্রুপের ছলে, এক ছেলে তার বাবারে বলে, তুমি কি বুঝনা বাবা, সে ওতো আমাদের এক চরম মরম যাতনা ॥
ধন আছে তো নেই মন,
কেন এমন, জানিনা কিবা তার কারন,
তার কেন এত ধন আসলে যার নেই কোন প্রয়োজন,
যেথা আছে সাধ আছে মন, সেথা দেখি শুধু অনটন আর অনটন,
দাড়িয়ে দূরে, বুঝি পুড়ে পুড়ে বিধাতায় যাচাই করে, আসল মানূষ কোন সে জন,
গোলাম ও মহারাজা মহাজন, কবে হবে ওরে অতিশয় আপন, দুজনায় দুজনারে, খুব ভাল করে চেনাজানা ॥


সাধনা ও সাধন - পর্ব


যখন আর কিছু্ই রবেনা,
কোন ক্ষোভ লোভ মোহ আক্ষেপ অনূশোচনা,
চাওয়া কিবা পাওয়া না পাওয়ায় কোন পেরেসানি তাড়না,
কেউ কারে ফিরাবেনা করবেনা কভূ মানা, গোলামে আর রাজায় চেনা জানায় রবেনা আর কোন ভূল ধারনা ॥
আমি মাঝে মাঝে ভাবি,
মনেরে প্রশ্ন করি ওরে মন এখন তুই কোন পথে যাবি,
এত টাকা তারা কোথা পায়, কেমনে কামায়,
ঝুড়ি ভরে নিত্য বাজার করে, এত খাবার কেমনে খায়,
ভোগ বিলাস উল্লাস বিনোদন, অকারন নিস্প্রয়োজন, কত টাকা দুহাতে উড়ায়,
বড় মাছ মুরগী কত দই মিষ্টি রকমারি ফল চায়নীজ মোগলাই খাবার তাদের ঘরে গড়াগড়ি যায়,
কব্জি ডুবিয়ে খায়, গাল বেয়ে কতনা পড়ে যায় আর যতনা খায় তার চেয়ে বেশী ফালায়,
শুনি হাওয়া খেতে আর কেনাকাটা করতে নাকি তারা সপরিবারে বিদেশে চলে যায়,  
দীনজনে দান করেনা, ভিনদেশে বাড়ী কিনে, তবু তাদের টাকায় দেখি ঘূনে ধরেনা, টান পড়েনা কভূ হয়না উনা ॥
কারো সুখধন রাখার জায়গা নাই,
দেখি আবার কারো নাই সামান্য মাথা গোঁজার ঠাই,
কতকিছু আছে তাদের কাছে একটা শুধু নাই আর তা হলো অনটন,
বড় বড় বাড়ী, বড় বড় গাড়ী, সব কিছু বড় বড় তবে তাদের ছোট শুধু মন,  
শুনেছি সুখ নাকি নাই তাদের ঘরে,
মন নাই, মনের ভিটায় নাকি তাই ঘূঘূ চড়ে,
তাই বুঝি তারা এত কৃপন, ঠিকমত কারা সনে কথা বলেনা,
টলেনা গলেনা ধার চাহিলেও পাওয়া যায়না, কাঙাল ভিখারীও হাত বিছালে ধমকে তারে করে দেয় মানা ॥
লোকের মোখে শুনেছি হায়,
সুখ পাখীটা নাকি বন্দি হয়ে তাদের খাঁচায়,
তাদের দায়গুলি বলো কবে তারা করিবে আদায়,
যাদের ধন লোহার ঘরে আছে পড়ে অন্ধকারের পোকায় খায়,
এ সমাজে যারা ন্বিঃস্ব অসহায়, কেন দেয় দেয় করেও সোনার সুখ পাখীটা কেনযে তাদের হাতে ধরা দেয়না ॥
আমি কেন করিতে পারিনা সত্য ও পূন্যের ক্ষেতি চাষ,
নানান হাহুতাষ আমারে করে দেয়, রাখে বানিয়ে উদাস,
কেন আলো আর ভালোতে নয় মোর বসবাস,
স্বপ্ন আর আশার মোহ বিলাস আমারে করেছে গ্রাস,
আমি কেন পারিনা হতে, তোমার মনিবের প্রিয় দাস,
ছিড়িতে পারিনা কেন আমি, হতে তোমার মতন দামী, বেশী ভোগ বিনোদন ও লোভ মোহটার নাগপাশ ও তার পেরেসানি তাড়না ॥
এইযে এত অনটন নিত্য সকাল সাঝে,
সারাক্ষন বিষের বীণার মতই মম মরমে বাজে,
পীড়া দেয় মোরে সব সময় সকল চিন্তা ও কথায় কাজে,
কতকিছু ঢাকি, কত কিযে বলা ও করা বাকী ছোট হয়ে থাকি সংসয়ে দ্বিধা ভয়ে লাজে,
তবু ওরে ভাই, ধন্য আমি তাই, করিতে পারি মানূষ হবার সামান্য বড়াই, কোন দুঃক্ষ নাই,
নাই কষ্ট বেদনা তাই, দরবারে তার অসীম অপার শোকর জানাই, খুলেছে যখন এই আমার তৃতীয় নয়ন খানা ॥