পর্ব - ০১


প্রায় এক যুগের মত বয়স হয়েছিল যার,
গল্পটা বলছি টবে লাগানো একটা ছোট লেবুর চারার,
আত্মজীবন কথা, কত কষ্টব্যথা ও তার বিষাদভরা আর্তনাদ ও ফরিয়াদ ।
দিনাজপুর থেকে কেনা,
ঢাকায় বাসা বদলানোর সময় ভেংগে হলো দুইখানা ।
আবার কে পড়তে চায়,
নতুন মাটি যোগারের বড় সমস্যায়,
তাই গাছের জন্য নয় শুধু মাটি ও টবের মায়ায়,
অনাদরে ঐ টব ও লেবু গাছের গোড়াটা বহুদিন পড়ে রলো বারান্দায়,
উপরে আধ হাত পরিমান,
মাটির তলে লুকিয়ে ছিল তার প্রাণ,
ভগ্ন অভাগা লেবু গাছের ঐ মূমূর্ষ চারার গোড়াখান,
কোন্ হতাশায় কিবা ভরসায় চুপচাপ চারিদিকে চায় ক্লান্ত বিষন্ন ভীত ও পেরেশান ।
ছিল মাটির উপরে টবে,
হঠাৎ একদিন অবাক হয়ে দেখিল তা সবে,
নতুন সবুজ কত ডালপাতা তাতে কেজানে গজিয়েছে কবে,
মোটেও আশা ছিলোনা যার, তবুও যখন তার আবার একটা নতুন জীবন হবে,
সেই খুশীতে ভরিল সবার মন,
এবার শুরু হলো তার, পাওয়া আবার নিত্য জল, নিবিড় আদর ও যতন ।
তিন বছরে বাড়িল তিনহাত,
সাজিল ডালপালায় বললো সবায় হয়তো হবে ভালো কোন জাত,
একদা কোন্ কুক্ষণে আবার,
চার বছরের অতি আদরের নাতনী আমার,
কোন্ অবসরে কোন্ খেয়ালে ভাংগিল কতকগুলো নরম কচি ডালপালা তার ।
তারপর কি হলো,
কিছুটা পেয়ে রোদের আলো,
নতুন প্রাণে সে আবার কবে সবুজে গজালো,
কেজানে এবার আবার কি আছে তার কপালে মন্দ কিবা ভালো ।
বছর তিন কি চার,
কোন ফাঁকে আবার হয়ে গেছে পার,
বারান্দার এক কোণে নিভৃতে অনাদরে বসবাস ছিল তার,
কেজানে কোন্ কারণে বুঝি হতাশায় তেমন আদর ও যতন আর ভাগ্যে জুটেনি এবার ।
এত ব্যাস্ত ছিলেম আমরা সবাই,
তাছাড়া হতাশার মাঝে তার, ফুল-ফলের জীবন পাবার আশাটা ফেলেছিল হারাই,
চক্ষু মেলিয়া তা দেখিবার সময় আর কারো হয় নাই,
ধন ও ভোগ বিনোদন রেখেছে সবারে আজব এক নেশার জালেতে জড়াই,
সব হয়েছে সবই পেয়েছি, সুখে ও মজায় মজে রয়েছি, তবু কজনে আমরা বলো মানুষ হয়েছি ভাই ।


পর্ব - ০২


মূল গাছটা এবার বুদ্ধি করে,
কেমন করে অন্তরালে সকল চোখের অগোচরে,
চুরি করে চুপিসারে, বারান্দার লোহাড় গরাদের ফাঁক ফোকড়ে,
অনেকটা বেঁকে গিয়ে, তার ডালপালাগুলিরে সংগে নিয়ে চলে গিয়েছিল বাহিরে,
এতদিন যা চেয়েছে তাই যেন সে পেয়েছে, বেঁচেছে হতে যে শহর পাষাণ প্রাসাদ আর প্রাচীরে রেখেছে ঘিরে ।
লেবুর চারাটা ছিল কেনা মাত্র চল্লিশ টাকার,
দেখিলাম ধরেছে তাতে কলি কুড়ি ও বেশ কয়খানা ছোটবড় লেবুর সমাহার,
জানের উপরে আঘাত এসেছে যার তিন তিনবার,
যেমন মজা টসটসে রসে ভরা তেমনই খুশবো রয়েছে লেবুগুলি তার,
বহুদিন পরে বেঁচে থেকে সে যুদ্ধ করে, অবশেষে ঐ গাছটা দিয়েছে ঢের বেশী ফল উপহার ।
দুনিয়ার এ জীবন,
যদিও দুদিনের মাত্র কিছুক্ষণ,
খুঁজিলে পায় মন, সাধনায়ই শুধু ওরে হয় সাধন,
এসো একটা করে গাছ লাগাই, তার কাছে শিখি ও গাছের জীবন ভাই আমরা সবাই করি গঠন ।
ওহে মানুষগণ তুমি এক ইজারাদার,
আছে কি স্বরণ, কিছু্ইযে তার নহে তোমার,
এ দেহের প্রাণ ধনজন ষোলআনা সবখান দুদিনের ধার,
হলেও সাধ কিছু করিবার, সীমানা বাধা সক্ষমতা ও সাধ্যটার,
চাইলেই পায়না, যায়না কেড়ে নেওয়া কিবা তা কারেও দেওয়া ধার,
জানো কি সে কত বড় আর, শক্তি-ক্ষমতা কতখানি তার ঐ করুনার সমাহার,
আজও পায়নি খুঁজে কভু পাবেওনা মানুষ তার,
প্রান্তখানা মনেহয় যা ওপাড়ার বাড়ীর পিছে মাটিতে নেমে আসা ঐ প্রথম আকাশটার ।
আবু হকে বলে,
কভু তার ইচ্ছে করুণা হলে,
নিমেষে গড়েন ধ্বংস করেন এমন কত অজানা আকাশ-মাটি ও প্রাণের জগত রয়েছে তার,
কেন এ জীবন ভ্রমণ,
জেনে লও, করো মন বসে তা গবেষণ,
কি চায় বিধাতায়, সে থাকেবা কোথায় অন্বেষণ করো ঐ ঠিকানাটার,
বাহাদুরী ছাড়ো করো সমর্পণ, চাহিলে বিজয় ক্ষতি নহে শুধু লাভ ও সাধন, এখনই তার মেনে লও গোলামীর বশ্যতা ও হার,
পোষ্য গোলাম হয়ে, এত দাদনের দায় মাথায় লয়ে, সে দাসখত অংগীকার কোন্ দুঃসাহসে করিছ অস্বীকার,  
ধনজন শান্তিসুখ ভোগ বিনোদন এ জীবন বাঁচন ও মরণ সবইযে তার, অপার নেয়ামত ও দান উপহার করুণার ।
যদি দাতায় ইচ্ছা করে,
মরা গাছেও ফুল ফুটে ও ফল ধরে,
ইশারায় তার নিখুঁত পরিপাটি ও বিনাশ হয় সব,
যদিও আপন সৃষ্টির মাঝে লুকিয়ে থেকে রহে সে গহীন নিঝুম ও নিরব,  
তার এ জগত সংসার,
যতনে সাজানো এ বিশ্ব জুড়ে বাস করে তার বিশাল পরিবার,
বিচরণ বানিজ্য চাষ নিরাকার কুদরত কেরামত বাহাদুরী পূরোটাই ঐ দয়াময় বিধাতার ।


পর্ব - ০৩


শুধু ঐ মূল্যটুকু যে দামে ঐ লেবুর চারাটা হয়েছিল কেনা,
ফলের মূল্য ধরে হিসাব করলে যদিও আমরা লাভে তবুও তার কাছে ঢের দেনা,
আবু হকে বলে ওরে না না,
ঠিক হলোনা ভাই তোমার ঐ দীনতার হিসাবখানা,
যেজন গাছে ফুলফল ধরায় ও খাওয়ায়, পূরো মূল্যটাতো আসলে তারই পাওনা,
সে যে মূল্য চায়না তা নেয়ওনা, শুধু চায় তারে চিনি-জানি ও তার প্রতি জানাই একটুখানি
ভক্তি, বিনয়, কৃতজ্ঞতা ও শুকরানা ।
গাছ লাগানো মহাপুণ্যময়,
কেন মনেহয় তা ওরে ঝামেলাময়,
বলো কিসের খরচ কিসের কষ্ট কেনইবা তাতে ভয়,
রেখো স্বরণ ওরে সবুজের পরশে মন কোমল ও দৃষ্টি প্রখর হয়,
ভরে যাবে মন শোনবে যখন, তারাও তোমার সনে সুখ-দুঃখের কথা কয়,
ফুল-ফল হোকবা নাহোক তাদের কিছু আদর যতন ও সেবা উপকার ওরে করিতেই হয়,
এসো তবে সবুজের সমারোহে এ বিশ্বটারে আমরা সবে, নতুন করে আবার গড়ি শীতল ও ছায়াময় ।
গাছেরও আছে মন আছে প্রাণ,
গাছ লাগিয়ে তার বন্ধু হয়ে হও সবে উদার ও মহান,
জানো কি সেও কষ্ট পায় ও খুশী হয়, পূঁজা করে গায় মনিবের গুণগান,
পাখীরা এসে দলবেধে হরষে নাঁচে-গায়, যে সুরে ঝর্না ও নদীর জল করে অবিরল কলতান,
যদিও নিরব তাদেরও কথা আছে, মনে কত সুখ ও দুঃক্ষব্যথা ঠিক যেন মানুষেরই সমান ।
গোলাম তার যেন এমনই হয় চাহে রাজায়,
শীতল বিছানা রেখেছে মাটিতে বিছিয়ে তাই ওরে বিধাতায়,
ক্লান্ত পথিকের দল ও পাখীরা সকল এসে বিশাল ঐ অশ্বথের ছায়ায়,
ডালে বসে একটু জিরায়, ফল খায় ও নিদ্রা যায় আর যে যার মত বাসা বানায়,
অসহায় কত প্রাণেরে দেয় ঠাই ও যোগায় আহার,
স্রষ্টার সে এক অপার অরুপ সৃজন বাহার, শোভা আর সৌরভ ছড়ানো তার এ বিশ্ব জগতটার ।
বহিছে এখন ধূসর ধুলিঝড় দারুণ খরা,
বর্ষা আসেনি বলে প্রকৃতি যেন মলিন ও একেবারে আধমরা,
ঝড়ে গেছে অনেক পাতা, যেগুলো রয়েছে গাছে তাও হয়েছে বাদামী,
সবুজের তৃষায় কাতর যারা সবাই তারা যেন ক্লান্তি ও হতাশায় উঠেছে ভীষণ ঘামী,
সে শোভা গেলো কই, গাছেরা যাচে জল,
গাছের রুপ ও বাহার শত শাখাভরা সবুজ পত্রদল,
বনানী সাজায় চোখ জুড়ায় ও মন ভরায় প্রকৃতি করে পরিমল,
নাম না জানা আকার ও রঙে, হরেক মজার নানান খানা শতকুটি এই ফুল-ফল,
সবে গাছ লাগাও,
বনানীর ঐ ঘন সবুজে তাকাও,
বিধাতার অরুপ রুপের বাহার যদিরে হেরিতে চাও,
চোখ ও মনের খাবার, না হতে আঁধার সতেজ ও সজীবতায় হৃদয় ভরাও,
জগত জুড়ে অকাতরে গাছেরা জীবন বায়ু বিলায়,
লাগেনা কিনা পাওয়া যায় মূল্য বিনা কোটি প্রাণীর জীবন বাঁচায়,
শিকড় বাঁকল পত্র লতাগুল্ম ফুলফল এমনকি দেহটা দিয়ে করে উজার ধন্য হতে চায়,
কার দান কিবা তুল্য কি তার, বিনিময়ে কি চায়, কি দেই আমরা তার মূল্য কিবা প্রতিদান উপহার ।


পর্ব - ০৪


ঐ সবুজে গিয়ে মিলে,
খোলা আকাশের অপার গহীন নীলে,
মাছ আর পাখপাখালীর কিলবিল ভিড় মাতন ঝিলে,
একাকার হওয়া ও সাতরঙ মাখিয়ে লওয়া ঐ শাপলা শালুক বিলে,
একবার হেথা বেড়াতে গেলে,
কতো ভালো হতো আহারে আর আমারে তারা কভু ফিরে আসিতে না দিলে ।
আজীবন বারমাস,
ঐ সে সুখের বসবাস,
যেথা ঢের মোহ ও ভোগ-বিলাস,
করে বিবেক আর তৃতীয় চক্ষুটারে সমূলে বিনাশ,
যদি তারা নাহয় আমিই হতেম তাদের কুটুম, কিযে খুশীর ধুম এমন ভাগ্য কভু হতোগো আমার ।  
ঐ সে সবুজ নরম ঘাস তুলতুল,
যার নাই রাজার ঋন সেতো যেন বেহেস্তের বুলবুল,
পায়ের তলে পড়ে আছে বলে সেতো নহে মূল্যহীন কিবা নাহি সে ওরে দিচ্ছে মাসুল,
জন্ম হোক যথাতথা কর্ম্ম হোক ভালো, যাইবা হোক তার ভিত্তিমূল,
পথের বাঁকে মাঠের পাশে ঝোপের ধারে, নাম নাজানা শত তুচ্ছ ক্ষুদ্র ফুল,
ধন্য তার জীবন নিয়ে, শোভা আর সৌরভ বিলিয়ে, দিতে সদা রহে মশগুল,
কজনে জানে হিসাব রাখে, ঐ ঘাসফুলেরই মধু খেয়ে প্রাণে বাঁচে লক্ষ মক্ষিকুল,
তাও আবার কারো না কারো মজার খাবার, তবে কি তার জনম বৃথা ঐ জন্মটাই ভুল,
জংগলের ঐ টুকটুকে লাল কুচিলা ফল খেলে নাকি জিবটা কাটে গলাটা ফাটে পড়ে যায় মাথার চুল,
ক্ষুদ্র নহে তুচ্ছ নহে আবু হকে কহে, আকাশের খোলা ঘরে মহাসৃষ্টির তরে, তারও অবদান অপার ।
কে ঐ একেলা বসে হায়,
পারের আশায় নদীর ঘাটে সন্ধাবেলায়,
গাহে বিচ্ছেদ আর বৈরাগের গান দরাজ গলায়,
কোন সে সুখে নাকি মনের দুঃখে বাউল বসে বটের তলায়,
গানের শেষে কোন্ নিমেষে চুপিসারে অচিন লোকালয়ে যায় সে হারায়,
কিছু না পেলেও তার হয়নিতো হার,
ফুটেছে যার তৃতীয় নয়ন আর খুলেছে মনের বন্ধ দুয়ার,
কে সে জন ওরে কোন সে জীবন, হেন ধন্য, মহান, মহৎ ও উদার,
সেইতো ওরে শ্রেষ্ঠ সবার, এ জীবন যার ঘরে ও বাহিরে পরের তরে সামাণ্য একটুখানি হয়েছে উজার ।