পর্ব - ০১


দিনটি ছিল, আমার মায়ের বিয়া ॥
দেখি আমি এক বিকেলে,
কি করে সে স্মৃতি যাইরে ভুলে,
সব সংগীরে ছেড়ে খেলাধুলা ফেলে,
এক ক্লান্ত দামাল ছেলে, মাঠ হতে এসে বাড়ীতে ফিরিয়া ॥
কেন এই তিন সন্ধায়,
একেবারে চুপচাপ যেন হায়,
জায়নামাজে বসে আছে আমার মায়,
মাথা নূয়ে হায় নতঘুমটায়,  
মোখ ঢাকিয়া মামীর দেওয়া একখান টকটকে লাল শাড়ী পরিয়া ॥
সে যে নিত্য যখন আমায়,
ধূলাবালি মাখা মোর সারা গায়,
ধুয়ে মুছে দিত সাবান মাখিয়া গামছায়,
জোর করে, আমারে টেনে ধরে, ষান বাধানো ঐ পুকুর ঘাটে নিয়া ॥
কেন আহারে, সবাই আমারে, করিল কাঙাল,
শিশুকালে কেন মোর দশা হইল এমন চরম বেহাল,
কেমনে কে ভাংগিল, এতদিন আমি ধরেছিলাম যেই ডাল,
ছয়মাস আগে, মাত্র দুদিনের জ্বরে বাবা মোর গিয়েছিল হঠাৎ মরিয়া ॥
আমার মায় ও বড় মামায়,
বুঝিনা আমি মনেরে বুঝাতে পারিনা হায়,
হেন কাজ করিল, আমার মমতা আদর কেন হরিল,
কেনরে আমারে এমন বিষাদে ভরিল তারা, কিজানি কেমন করিয়া ॥
আমার চোখের জলে,
মা আমার সে রাতে গেল চলে,
জানিনা কোন কারনে আমারে সে কেন কিছু না বলে,
কোন সে রশিতে পারিনি খসিতে, পাষানে বাধিয়া তাদের সবার হিয়া ॥
পালকিতে চড়ে,
একবার চাহিল না ফিরে,
বুঝিলাম না হায়, এ হলো কিরে,
নেইকি কোন স্মৃতি তার এ দুটি সন্তানেরে ঘিরে,
ছোট্ট আমার বোনটিরে হায়, সকলের অজানায় মামীর কাছে পালক দিয়া ॥        
সেদিন, কত আমি কেঁদেছি,
আর মায়েরে আমার কতযে বকেছি,
সারাক্ষণ, অবুঝের মতন, কত বায়না ধরেছি,
না পেয়ে শেষে, কতযে জ্বালাতন মামীরে আমি করেছি,
কষ্ট যাতনা পীড়ন, নিয়তির র্নিমম লিখন, চোখ বুজিয়া সয়েছি,  
পাথরে বাধিয়া অবুঝ অভিমানি শিশু মন, মায়ের কষ্ট বেদন, সেদিন না বুঝিয়া ॥


পর্ব - ০২


নিজের সস্তান দুটি মায় ফেলে ছেড়ে,
পরের সন্তান আপন করে বুকেতে ধরে ভাগ্যের ফেরে,
বিধাতায় কত ধনে ভরে দেয় কানায় কানায়, আবার নিমেষে কতকিছু নেয় কেড়ে ।
আমার মায়ের মনে ছিলনা সুখ,
নতুন বর ও অনেক ধন, পেট ও পিঠের সস্তানগণ ঐ বুক,
সব পেয়েও আহা আমার মায়ের কভু হয়ত ভরেনি মন তার ঐ নতুন ঘরে গিয়া ॥
আমিতো শূন্য, কি আর বলো আমার আছে,
কি চায় পৃথিবী জানিনা, এক অভাগা এতিম বালকের কাছে,
বাবাকে হারায়ে, মাকেও কাছে না পাওয়ার কষ্ট, রয়েছে এ বুকে জমাট বাধিয়া ॥
বাবা নাই, মা ও নাই,
কষ্ট বলিতে আমি, কার কাছে যাই,
এ জ্বালা বলোনা আমি, কি দিয়ে কেমনে জুড়াই,
এত সুখ নেয়ামত বিধির ঘরে, তবু কেন মিলেনারে কারো ভাগে সামাণ্য তাই ।
শেষে সব অভিমান ভুলে,
আমার যত অভিযোগ আমিই নিয়েছিলাম তুলে,
ব্যাথার সাগরটা পার হতে চাই, ভেবে শুধু কষ্ট পাই কেন মায় গেলনারে বলিয়া ॥
মা ছেলের ঐ কষ্টের ঝড়,
উঠিলে সেদিন হয়ত কাপিত সারা বাড়ীঘর,
কাছে পেলে বা সে লগনে দেখা হলে কেমনে হতাম তবে পর,
তাই সবে বুদ্ধি করে,
মা-ছেলেরে রেখেছে দূরে দূরে,
নাহলে আমারই মত মায়ও কাঁদিত হয়ত গড়াগড়ি করে ধূলায় মাটিতে পড়িয়া ॥
বহুদিন পরে ভেদ বুঝেছিলাম আমি তার,
কোন দোষ ছিলনা সেদিন আমার মা কিবা মামার,
যা আমি কভু চাইনি ভাবিনি তাই বুঝি ছিল সেদিনের বিধাতার উপহার ।
বিশাল বেদনার ভার বহন আর,
কষ্ট-যাতনা সহার তোমার ঘোষিত সে পুরস্কার,
আমি যেন পাই, সে আশায় হে প্রভূ মহান, আছি বসে তব অদৃশ্যমান রশিটা কষে ধরিয়া ॥
নিয়তির সকল কঠিন বিধান,
হোক সে কষ্টে ভরা কিবা দুখ-সুখ অপমান,
কখনও ভরে দেন, কখনও কেড়ে নেন, ঠিক যেমন বিধাতা চান,
ছিলেম কূটো সম আমি জানি বড় কমদামী মাকে দেখিতে মম হামেশা কাঁদে প্রাণ ।


পর্ব - ০৩


কতযে মজার খেলা,
দেখিলাম ওরে সারাবেলা,
সাজাও বাগান বসাও রঙের মেলা,
যখন তখন তব ইচ্ছে তোমার হয় যেমন এ জগত সংসার ভাংগিয়া ও গড়িয়া ॥
আজ সেই আমি মস্তবড় এক ইঞ্জিনিয়ার,
হয়েছে প্রাসাদ বাড়ী ও গাড়ী রাজধানীর এক রাজ পরিবার,
কোন ছেলে ছিলনা আমার মামার,
চোখ পড়েছিল ঐ ষোড়শী দুষ্ট কন্যাটার,
ছিল ভালো লাগা কত মান অভিমান দুজনার,
মামীর আদরে মানুষ, বিয়েও করেছি কন্যারে তার,
মেয়ে তার বিসিএস ক্যাডার অফিসার কাজ করে সে অধ্যাপনার ।
তবু একা কি যেন নাই নাবলা বেদনায় যেন ভাসমান,
আছে আশেপাশে কাছে কত লোকজন, বিত্তবেসাত ধন সবকিছু অফুরান,
সে ও বিধাতার এক পরখ যাচাই, যার ভেদ বুঝিবার সাধ্য কারো নাই, তার অপার নেয়ামত দান,
আজও স্বরনে পড়িলে, বিষাদে ভরিলে, নিজেরে বুঝাই আমি সে কথা মনে করিয়া ॥
বদলে গেছে সব, তবু মুছেনি আজও সেই দিন,
মরম গহীনে করুণ পীড়নে হয় আহত স্মৃতির পরশে বদন মলিন,
কেমনে কবে জানিনা শোধ হবে রাজার কাছে তার অধম গোলামের মাথাভারী ঋন,  
ভাবিছে কাপিছে আমার তৃতীয় নয়ন ভরিয়া,
পেতে তার অরুপ বাহার দরশন, বোধ অনুভব আর মম অধীর চেতনার অপার দরিয়া ॥
হরষে পুলকে কিবা কষ্টে ও বেদনে,
বাবামা কাউকেই পাইনি বা দেখিনি আমি কভু মোর জীবনে,
একজন পরপারে আহারে আর একজন দুনিয়ায়,
তবু কেন মনেহয় যেন মায়, অসহায় দাড়িয়ে দিগন্তের শেষ সীমাণায়,
সুখের অনেক ধরণ, কেউ পায় কেউবা হারায়, পিছে পিছে যায়, তবু পারেনা তারে রাখে ধরিয়া ।
যদিও হাহাকারে হায়,
তবু কেন আজ যেন কেউ কারে আর নাগালে নাহি পায়,
এ দূরত্ব কেনরে নাহিকো ঘুচে নাহি ফুরায়,
মামাকে প্রশ্ন করি, মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে দারুণ মন চায় ।
অপরাধ হলে মাগো দিও মোরে করে ক্ষমা,
আমিকি ছিলাম তোমার সতীনের ছেলে, নাকি তুমি মোর সৎ মা,
মনের শত প্রশ্ন আর, বুকের অপার ঐ কষ্টগুলির ভার কতদিন বইবো মাগো, অন্তরে রাখবো জমা,
মা ও মামাতো ছিল সহোদর বোন-ভাই, তবে তাদের কেন কষ্ট নাই, লোকে কাঁদে যেকথা শুনিয়া ।