কেন আর দেখিনা,
তবে তারা সবে স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ চলে গেল কিনা,
নদীর বুকে অগনিত,
মনের সুখে ছুটে চলা সেই আগের মত,
কিশোর কালের স্মৃতি যায়না ভোলা, পাল তোলা ঐ ছোট বড় ঘাসী নাও ॥
অ মাঝিরে,
তুমিতো বেড়াও ঘূরে,
উজানে ও ভাটিতে কাছে বা দূড়ে,
ধূ ধূ বালুচর কিবা ভিজা কাঁদা মাটিতে,
গুন লয়ে কাঁধে ক্লন্তি ও বিষাদে হাটিতে হাটিতে,
অচিন গাঁও গেরাম দেশে দেশে,
দখিনে পূবে, উওরে আর যেদিকে র্সূয ডুবে, তের নদীর জলে ভেসে ভেসে,
যখন যাও তুমি কি দেখতে পাও, তা আর কোথাও ॥
দূড়ন্ত দামাল বায়ু র্নিমল,
টলমল ছলছল অথই নীল জল,
গাঙের পারে তরুলতা ঘিরে রেখেছে যারে, এমন সবুজ শ্যামল,
গোমতির তীর,
সোনালী স্মৃতির ভীড়,
প্রিয় এত আমার বাড়ীর মত এমন সোনার গাঁও ॥
এখন নায়ে মাঝি মাল্লা কেন আগের চেয়ে অনেক কম,
গুদারা ঘাটে,
আগে যখন যেতাম হাটে,
খেতাম শশী ঘোষের রসেভরা চমচম,
স্মৃতির ডালার ঢাকনা মেলা, সেই মনের কথা বলা, কূলবালার অন্তর জ্বলা রাখালী বাঁশীর দম,
তাই কিরে মনের দরদ ঢালি,
বসে পাশাপাশি সেই সারি ও বিচ্ছেদ ভাটিয়ালি,
মন জুড়ানো প্রান ভরানো গান, গলার উঠানামার অনেক লম্বা ছিল যার টান, আর তোমরা নাহি গাও ॥
ডিজেল ইঞ্জিনের বলে,
ঢেউয়ের আগে নাও ছুটে চলে,
চুপ করে বসে হাল ধরে,
হাতের ইশারাতে শুধু বৈঠাটারে,
এইতো কাম,
ঝড়েনা তেমন ঘাম,
তবু তোমারই সবচে বেশী দাম,
নিশানা করে সামনে, বারেবারে ক্ষনেক্ষনে, তুমি ডানে আর বায়েতে ঘূরাও ॥
কত বাটে ও ঘাটে,
গঞ্জে বাজারে ও হাটে,
অজানা নাম,
আহা কি নয়নাভিরাম,
অচেনা সব কত গাঁও গেরাম,
নয়ন ভরে তুমি ওরে সাঁঝে ভোরে নিত্য দেখতে পাও ॥
গাঙের ঘাটে কলসী কাঁখে,  
দেখি হায় যেন অবাক চোখে ঠায় দাড়িয়ে তাকিয়ে থাকে,
রসমতি কিশোরী যূবতী দুষ্টমিতে হাতের ইশারায় কেউ জানায় বিদায় কেউবা কাছে ডাকে,
নাইতে আসা কূলবধূ ঘূমটাতে মোখ ঢেকে রাখে,
ভেজা বসন, কাড়ে রসিকা নয়ন, সারা গায় যা লেপটে থাকে,  
চতুর নয়ন ঐ ভূষনে চাহে দেখতে যাকে,
দুষ্ট মন বসে মনের ঘরে ঐ সে শোভন ছবি আঁকে,
কেজানে তাতে কি সুখ পাও, তৃষিত মন বুঝি তুমি তাতেই জুড়াও ॥  
যেমন আউষ ধানের চিড়া পিঠা,
অ রুপ দেখার মাঝে লুকানো দারুন মিঠা,                                                                              
তাতে নাই কোন বাধ, তাই কি দুধের স্বাদ তুমি ঘোলেতে মিটাও ॥
গুন টানা নাই আর,                                                                                                        
নাইরে নায়ের দড়িকাছি লগি দাড়,
আছে একটা নোংঙর আর,
একখান কাঠের সিড়ি লাগে হলে গাঙের নীচূ কিবা উঁচূ পার,
কেন নাহি আর সমতালে দাড় ও বৈঠা বাও, কিবা রঙিলা সে পাল উড়াও ॥
অ ভাই দুষ্ট মাঝি,
মনেহয় মানূষ ভালো আসলে রসিকা পাজি,
অন্য মজায় মজে ও মেতে, তোমার সংগে যেতে আমি রাজি,
শেষে যা হয় হোক কপালে আমার, নাহয় শুধু একবার এ জীবনে আমি ধরলাম বাজি,
নাবলা লুকানো সেই দুষ্ট চাওয়া সাধ,
বারবার, ভাংগিতে চাহে যে আমার, দেহমনের সহনের বাধ,
করতে বেশী কামাই,
আমারতো এত টাকার দরকার নাই,
বন্ধু আমার গেছে বৈদেশে,
জানিনা শেষে, কি করবে সে ভাটিতে এসে,
যদি রসের গাঙেতে আমার উঠে একটা বালুচর ভেসে,
নিমেষে শনি এসে, গা ঘেষে পাশে বসে, গায়েতে বারুদ ঘষে, শেষে আমার মাথায় হয় ভূত চড়াও ॥
মরা নদীর ঐ বাঁকে,
নিঝুম চরে কুড়ে ঘরে আমার বুড়ো মাবাবা থাকে,
দিন মাস যতন করে, ষোলটি বছর ধরে, সবাই মোরে চোখে চোখে আগলে রাখে,
ওরে কেউরে কিছু না বলে,
অ মাঝি আমি তোমার সনে গোপনে যাব চলে,
তুমি যদি চাও ওরে, ঐ ঝাউ বনের আড়ালে গিয়ে একটু দূরে, চুপটি করে নাও ভিরাও ॥
নাহলে কবে,
বলো আবার দেখা হবে,
সত্য করে আমায় বলে যাও তবে,
দিব্যি করে, সে কথাটি মোরে যাও বলে,
না দেখার সে লগন, কাটিবে গোপন চোখের জলে,  
কথা দাও তুমি ওরে স্বরনে রাখিবে মোরে, যেথাই থাকো তুমি যতই দূরে যাও ॥
অ পাষান বন্ধুরে,
শুয়ে থাকি একলা ঘরে,
আমি চমকে উঠি রাত দুপুরে,
বলো আমি ভয় সারাব কারে বুকে জড়িয়ে ধরে,
পেঁচা বসে গাছের ডালে, শুকনো পাতা টিনের চালে, যখন পড়ে ঝড়ে,
জীবনের আর কদিন বাকী,
তবে কি মধুর আশা সকলই ফাঁকি,
পথ চেয়ে বসে থাকি, বেলা শেষে তখন আমি করব কি আমায় বলে দাও ॥
জানি সেতো আমি সবই জানি,
আসল নহে তবে তোমার নকল রানী,
কপাল পোড়া যেনরে ল্যাংড়াখোড়া আমি এক অভাগীনি,
ওগো আমার নাও বোঝাই,
তোমারে কেমনে বুঝাই, কত সওদা তাতে লেখাযোখা নাই,
খাড়ি আর দাড়িপাল্লা, পাঁচজন জুয়ান মাল্লা, তুমি থাকবে কোথায় একবারও কি ভেবেছ তাই,
শত মানিক রতন,
ছোট্ট জীবন মাত্র কিছুক্ষন,
পোষ্য শুধু ওরে আমরা দুজন,
এত ধন এক জীবনে বলো কি প্রয়োজন,
ঘূরে ঘূরে নৌকা ভরে তুমি করেছ কামাই সারাটা জীবন,
বলো তাতে কি লাভ আমার,
আমি তোমায় দিলেম ছাড়, নাই কিছু আর তা আমার দরকার,
সারা রাত,
সোহাগ ভরা তোমার ঐ দুহাত,
ওগো আমার গলে হবে তাই হিরামতির হার,                                                        
ভরা জােছনার চাঁদনী রাত আর,
নাফোটা ফুল ও মধুভরা শত বসন্ত সম্ভার, অসার আকূল হবে কি বিফলে পার,  
বিরান ফেলে রেখে, আমি কত রাখব দেখে, তোমার আপন ভূমি,
যত দূড়ে রবে, আমি দিলেও ছাড় তব বিবেকের কাছে হার, বেশী অপরাধী হবে বন্ধুরে তুমি,
যতই কুড়াও ধন, মম অষ্ফুট নিবেদন, কেমন তব মন করেনা দংশন, ব্যাকূল বাসনা মম না যদি পূরাও ॥
আমি জানিনা সাম,
তোমার কাছে আমার কত দাম,
দরদী হবে বলো কবে সোনার অখরে মম বুকের ভিতরে লেখিবে তব নাম,
কেন লওনা খবর, আমি কি তোমার পর, ভাল লাগেনা আর এই ঘর, সারাটা বছর বলো তোমার এত কিসের কাম,
কেন আসনা আসার কথা বলে বলে,
যায় মধু লগন চোখের জলে, মিথ্যে আশার নানান ছলে,
একই কথা মিনতি তার, সেই পূরনো ব্যাথা যেন বারবার, তুমি আমারে আর, ওগো না যেন ঘূরাও ॥
কেন আর দেখিনা,
না’য়ে হয়না দোতারা গান বাজনা,
সবইতো আছে যেন সারাক্ষন শুধু বেঁচাকেনা,
সারেং ও মাঝি মাল্লাগন আগের মতন কেন এখন দখিনা পবন আর যাচেনা,
কেনরে তোমার মন ভারী,
এবার না আসিলে তুমি তাড়াতাড়ি,
নিশ্চয়ই দেবো আমি তোমার সনে জনমের আড়ি,
আমি যাবোরে ছাড়ি, মন ভূবনে তোমার বাড়ী, তুমি কি বলো তবে তাই চাও ॥
চাই আমি এমন একটা লাল শাড়ী,
যেন কোমড়ে ও পিঠে পড়ে খাড়া দারি,
চওড়া পারে থাকতেই হবে হলদে জড়ি,
না হলে লাল ফিতা আর রেশমী লাল চূড়ি,
পার না হতে কুড়ি, আমি কি বলো তবে হয়েছি বুড়ি,
সব সখীরা আমার কত ঢঙে সেজে সাত রঙে দলবেধে সারাবাড়ী বেড়ায় ঘূরি,
তুমি রবে আপন আমি হব পর,  
রাখিও স্বরন এবার তোমার আছে খবর,
জানিও হেসেহেসে আমি রচিব আপন কবর,
রাখি বলে, পরিব গলে সোনার তাবিজের ছড়া,
চক বাজারের সোনারু শম্ভূ নাথের নিপূন হাতে গড়া,
নাহলে হয়ত দেখিবে আমার মোখটা মরা,
উড়ন্ত মনের দূরন্ত দহনে পোড়া বাসনার দারুন খরা,
যেথা ছিল এই বুকে মধু জোয়ারে ভরা,
হেথা আজ দিগন্ত জোড়া, বিশাল বালুকার এক ধূ ধূ চড় পড়া,
এইবার রক্ষা নাই আর, তা যদি মোরে না পরাও,
তূষের দহনে পোড়া, চাতক পাখীর তৃষা বুক জোড়া, দেখিতে না পাও,
তোমার আকূল প্রেমের যাদুর জোয়ারে, জোড় করে দুহাতে টেনে ধরে না যদি মোরে সুখেতে ভরাও ॥