ভূমিকা – আমার তৃতীয় নয়নে দেখা এক জীবনের গল্প । ৬৯ এ এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়া আঠারো বছরের দেখতে কালো প্রাণ চঞ্চল এক তরুণ যুবক । একাত্তরের গণঅভ্যুথ্যান, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ বিজয়ের অব্যবহিত পরের কথা । পুনঃরায় লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা তথা জীবন গড়া কিবা জীবন-জীবিকার কথা ভাবার দায় এসে পড়েছে যেন তার মাথায়, ঠিক এমনই এক কঠিন সময়ের কথা । টানাপোড়নের এক গ্রামীণ শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন যুদ্ধে সদ্য নাম লেখানো চটপটে এক সাহসী সৈনিক । কারো চোখে ছেলেটি কালো হলেও কারো চোখে সে খুবই স্মার্ট ও হ্যান্ডসাম, তাই সুদর্শন । তা সঠিক না হলেও চলনে, বলনে ও মননে রয়েছে তার নিখূঁত ও রুচিশীল আভিজাত্যের ছাপ । আর গল্পের নায়িকা ষোড়শী পরমা সুন্দরী অনিন্দ রুপসী দশম শ্রেনীর এক স্কুল বালিকা । ঢাকার বাসিন্দা তারা । পরিবারে থাকলেও মধ্যবিত্তের প্রচ্ছন্ন প্রকাশ ঢাকায় রয়েছে তাদের ২/৩ টি বাড়ী । আত্মীয়তার সুবাদে দুই পরিবারের আসা যাওয়া । উভয়ের উভয়কে ভালো লাগা ও নিভৃতে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা । তারপর ধীরে ধীরে কাল হয়ে উঠে অন্তরালে উভয় পরিবারের মধ্যে গড়ে উঠা জীবনের মান, বিদ্যা ও বিত্তধনের এক বিশাল ব্যবধান । বাঁকী গল্পটা কবিতার অভ্যন্তরে । সেখানেও তার শেষ না হলে “ফুলের নামে নাম” এই ধারাবাহিকতায় চলবে তা অন্য কোন কবিতায় - - - - -    


আমি প্রাসাদপুরে,
যেথা তোর নিবাস, হেথা হতে অনেক বহু দূরে,
নাইকো উড়াল পংখীরথ, পায়ে বছরের পথ, থাকলে পাখা যেতাম নাহয় উড়ে,
মনটা আমার রয় পড়ে, আহারে বড় দেখতে ইচ্ছে করে, বন্ধুরে পরান ভরে তরে এক নজর ॥
কেন এমন মনে হয়,                                                                                                      
আমি নিজেও জানিনা, তা কারে বুঝাবার মতও নয়,  
হেরিয়া মনের নয়নের যত সুখ, আহা ঐ মোখ আজও মোর কাছে যেন জগতের সেরা সুন্দর ॥
নিঠুর বন্ধুরে, অ পাষান বন্ধুরে,                                                                                            
তরে আমার আজ বড় দেখতে ইচ্ছে করে,
আর কি দেখা হবেরে, কভূ তর সনে মরনের পরে,
কষ্ট থেকে বেঁচে যেতাম ধন্য হতাম, যদি ওরে দেখতে পেতাম জুড়াত পোড়া এ মনটা হয়ে
আছে বিরহের অনলে পোড়া তামাটে-ধূসর ॥
কি দোষ বলো ছিলরে আমার,    
বিদ্যা ও গুন আর চটকদার রুপের বাহার,
ছিল তোমার বাবা এ পরগনার রায় বাহাদুর জমিদার,
আমার বাবার ছিলনা তেমন বিত্তধন কিবা নাম-ডাক মোড়লি কিছুই তার,
মধ্যবিত্ত পরিবার শুধু আর চৌচালা চৌকাঠ দুভিটায় ছিল তার দুখানা টিনের ঘর ॥
ঐ নীল আকাশ সমান,
তোর আমার এই দুজনার ব্যাবধান,
জানলে লোকে জানিরে যাবে তার জাত কূলের মান,
কনের বাবা একজন স্কুল মাষ্টার,
সাধারণ ঘরের মেয়ে তাই কিরে তার,
আকুল প্রেমের হলো এ দুঃক্ষময় পরাজয় হার,
আর জনমের তরে বুঝি আমি ওরে, হলেম তর যেন এক অচেনা পর ॥
কেনরে হইল এমন,
অকারণ হলেমরে তর দূষমন,
দুই দুনিয়ার বাসিন্দা এখন আমরা দুইজন,
আগে জানলে আগে বুঝলে কভু দিতেমকিরে তোরে এই মন,
দেখানো যায়না বুঝানোও অতী ভার,
বুকভরা না পাওয়ার সে কি এক নিদারুন হাহাকার,
বলো এ জীবন কেনরে হলো এমন কেউ নহে কার যেন এখন আর,
দিল ভরে রইল জুড়ে ঘন কালো অন্ধকার, একটা শুকনো ফুল হারিয়ে সবকূল বন্দি করেছে তারে এক বিশাল ধূধূ বালুচর ॥
নিত্য একবার চোরের মত,
দিঘীর ঘাটে এই দুজনার দেখা হত,
সুখ দুঃখের ভাল লাগার দারুন মজার গল্প কত,
স্বপ্ন আশা হইল ফাঁকি, সবই রইল বাকী চাওয়া পাওয়া ছিল যত,
এ হৃদয় আহত মর্মাহত, তুই যেমন আমার কলিজার মত, আমিও কিরে ঠিক তেমন ছিলামনারে তর ॥
অভাগীর মন কেনরে খুঁজে পেলনা,
দরদী নাই একটুখানি ঠাই শান্তিসুখের ঠিকানা,
সবইতো আছে আমার কাছে তবু মন কেন ভরলনা,
হইল বেহাল দশা হতভাগীর পোড়া কপাল জোড়া হইলোনা,
বিধিরে তোর এত সুখ এত ধন, তবু কেন সাজিলনা মোর জীবনখানা,
জীবন বিফল দিবানিশী আঁখিভরা অদেখা জল, যেন খলখল চিতার অনল এ অভাগীর অন্তর ॥
চারিধারে উছলে পড়া কত জল কানায়কানা,
পিপাসায় বুকের ছাতি ফেটে যায় ছটফট সে তাড়না,
বালুচর করে ধড়ফড় জীবন কাটিল জনমভর তৃঞ্চা তবু মিটিলনা,
অনাদরে আংগিনায় উঠানে লুটায় এত জোছনা, তবু কেনরে আমার এ ভুবনখানা হইলোনা পসর ॥
বন্ধুরে, তবু তুই সুখে থাক,
যেমনি আমার জীবন কাটে যাক কেটে যাক,
থাকিস তুই যতই দূরে,
দিনভর সারা বছর আমারে খায় কুড়ে,  
ওরে কেমন আছিস তুই, যখন আমি বিছানাতে শুই, বড় জানতে ইচ্ছে করে তোর খবর ॥
মনের মাঝে ভেসে উঠে ছবি আঁকা মোখখানা,
যতই করি বকাঝকা আসলে তা ভোলা কিবা মোছাতোরে যায়না,
ইচ্ছে করে ভেংগেচূড়ে,
গুড়ো করে ফেলে দেই সব ছুড়ে,
কেনরে অনেক দূরে আমার দুঃক্ষ জ্বালার ঐ আয়না,
উঠে যখন এ মনের ভিতর, অবুঝ মাতাল দামাল বেসামাল বিষাদের ঐ তুমুল ঝড় ॥
তবু এক বেহায়া বান্ধবের মত,
তার কথাই কানের কাছে কহে যে অবিরত,
জানিনা এত পেয়েও কোন সে না পাওয়ায় মর্মাহত,
হতাশায় সাধ বাসনাগুলি পায়ের শিকল খুলি পালাতে বিব্রত,
আশা করে বলে চায়, যদিরে একবার হায় সে আমারে দেখিতে আসিত,  
মন বুঝেনা দেয় যাতনা কত, দিনভর সে আমারে তাড়না দেয় তাড়া করে হয়ে এক নির্মম ছায়াহীন অনূচর ॥