এইতো সেদিন হলো, আমার মিতার বড় ছেলের বিয়ে ॥
বার ঘন্টার  ভ্রমন,
যারা অতি কাছের অতি আপন,
জুটে আমরা শুধু এমন হাতেগনা কয়জন,
নিতে হবে কত কেজি মিষ্টি ও পানসুপাড়ী,
দাওয়াতি মেহমান ক’জন হলো ও লাগবে ক’খানা গাড়ী,
তালিকা বানাও ফর্দ করো সময় কম তাই কেনাকাটা চাই তাড়াতাড়ি,
যেই বলা - সবকিছু ছোট করে হবে,
বাপবেটা দুজনে বেকার, এত টাকার যোগান কে লবে,
মোখ কালো মন ভার, বুঝিলাম তা শোনে অখুশী বেজার হলো সবে,
ট্রেনে চড়ে চুপিচুপি কিছুটা লুকোচুরি করে বহু দুরে সেই দিনাজপুরে গিয়ে ॥
অনেক দুরের পথ,
নানা জনের নানান কথা নানামত,
কেউ যেতে রাজি নয়,
আছে এ সফরের স্বাস্থ্য ঝুকি ও ভয়,
কেজানে কোথায় আবার কেমনে রাত কাটাতে হয়,
আসা যাওয়ায় লাগবে দুতিন দিন সেওতো মেলা সময়ের অপচয়,  
প্রতি ঘরে করে একজন,
আবার কারোকারো মেতেছে মন,
জেগেছে জুড়েছে খুশীর নাঁচন ভরা শিহরণ,
কাকে বলবো আর কাকে না,
শিশু বালিকা মহিলা ও বৃদ্ধ নেবোনা,
তদুপরি কতজনার হলো মান অভিমান,
কি করি ভেবে নাহি পাই, তাই হয়ে যাই খুবই পেরেশান,
কারে কি বলি আর কেমনে মন রাখি সবার, ভাবনা হয়ে তা পড়ল মাথায় গড়িয়ে ॥
রুচি পছন্দ ভালোলাগা ও চাওয়া,
অল্পে তুষ্ট পরিপুষ্ট এমন হরেক মধুর পাওয়া,
দরশন আর চিন্তা চেতনার অসীম জগতে ক্ষনিকের হারিয়ে যাওয়া,
জনেজনে এ ভূবনে রয়েছে কত তার ভিন্নতা,
কজনের হয়েছে দরশন জানা তার সে অপার রহস্য আর বাণী ও বারতা,
হয়েছে গমন বিচরণ ভ্রমন ও নানা আহরণ ক্ষুদ্র আপন চিন্তা চেতনার  গন্ডির সীমানা ছাড়িয়ে ॥
ছেলেমেয়ে দুজনেই ডাক্তার,
সুস্থ্য দীর্ঘ জীবন পেতে কতকিছু মেনে চলা দরকার,
নতূন জীবন শুরু তাই হিসাবখানা করিতে পাকা ও পূরু চাওয়া পাওয়ার,
সে ওতো এক বাবার অনেক পাওয়া, স্বস্তির জলে ডুবিয়ে নাওয়া, আপন ইচ্ছার বিসর্জন দিয়ে ॥
কত স্বপ্ন আশার,
নিরবে গোপনে হলো হার,
ধন আর রুপ নাকি সকলই এ ভবে অসার,
নিরবতা ভালো লাগে তাই বিতর্ক আমি ভাই করিতে চাই পরিহার,
বিজন সবুজে মন চাহে মোর ফুলপাখীদের সনে হবে নিত্য ভোর হেন এক নব সংসার,
নাহলে মোর মন বলে কেউ নাই আর কিছু নাই যার ঐ সবার দৈন্যতা ও শূণ্যতাগুলি সব দেবো ভরিয়ে ॥
তা ছাড়া আর,
কি ছিল আমার করার,
এই বুঝি লিখন ছিল মহান বিধাতার,
অক্ষম অসহায় এক বন্দি হাতপা দেমাগ বাধা যার,
করে রাজার সনে গহীনে গোপনে সন্ধি তার গোলামী করা ও হার মানার,
অসীম অপার তার করুনার চীর অবারিত ঐ দুয়ার, শত মহিমার তলে ডুবে আছি বলে বুঝিনা তার নেয়ামত উপহার,
জোড় বেধে দিয়েছিল তাদের দুজনার, কেজানে কোন সে সৃজন বাসনা তার মনে এই দুজনারে নিয়ে ॥
এমন এক বিয়েবাড়ী,
আলোটারে হারাতে যেন সচল আঁধারী,
তাই বুঝি কারোকারো দেখি বদন মলিন ও মন ভারী,
কারো ভাবনা ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে যাক খুব তাড়াতাড়ি,
কে কোন কুটুম শিশুদের আমোদের ধুম কি নাম জানা নেই কার কোথায় বাড়ী,
খাবার নিয়ে বচসা কেউ খামোস হয়ে চুপচাপ বসা কেউ ব্যাস্ত তছরুপ কারচুপি কাড়াকাড়ি,
আনাগোনা কখন দেবে খানা ফিসফাস আর কি কভূ দেখা হবে নেই বিশ্বাস গেলে এ মজলিশ ছাড়ি,  
বেশী সোরগোল হৈ চৈ কিছুতেই,
চোখ ঝলসানো রঙীন বাতির সমারোহ নেই,
তবু সেই খুশীতেই অর্ধদিবসের তরে জড়ো হয়ে এক ঘরে গিয়েছিলাম আমরা সবাই হারিয়ে ॥
স্বজনের আহত বাসনা ঢেকে,
বাকীর খাতায় একটা বিশাল শূন্য রেখে,
নতুন মায়ের মোখ দেখেদেখে অনেক আশার ছবি এঁকে,
নগদের ঐ হরষের ঢল নিলেম সুখে আমি টেনে বুকে শূন্য দুহাত বাড়িয়ে ॥
হায় হায় একি,
হেথা গিয়ে অবাক হয়ে দেখি,
বউয়ের বাপে বরকনে নিলো ঘরে তুলে,
সব সাজ প্রসাধন কেন সে ফেলেছে ধূয়ে ও খুলে,
কোন্ সে কষ্টে আবেগে নাকি কোন তার চিন্তা চেতনার ভূলে,
এত যতনে মমতায় লাল সোনালী শাড়ী গহনায় দিলেম যারে মায়ের আসনে সাজিয়ে ॥
কতকিছু বাদ পড়েছে,
তাইকি বিষাদে তার মন ভরেছে,
কইগো আমার মা খালা চাচী ফুফু ও সই,
কোথায় আলতা পাউডার আমার চুলের খুশবো তেল আয়না কাঁকই,
এ কেমন বিয়ে হলো, তবে তোমরা বলো ঢাকঢোল আতশবাজি বাজনা সানাই বাঁশী না বাজিয়ে ॥
শুনেছি দেখেছি তারইতো হামেশা হয় বিজয়,
যে বেশী সয় দূরে ঠেলে নয় হার মেনে তবু কাছে টেনে লয়,
ক্ষুদ্র পাওয়ারও অনেক মূল্য সেতো সাতরাজার ধন তূল্য শতকোটির কম নয়,
যদি সে না হয় কানা, লেনদেন ও দেনাপানার ঐ হিসাবখানা সঠিক মাপকাঠিতে নিরুপন করা হয়,
কত বাসনা সাধনার নিরবে মরন হয়,
সাধ আর সাধ্যটার না হলে মিতালি কভূ সুসমন্বয়,
দানেরও চাই কিছু প্রতিদান দিতে হয় তার নায্য সঠিক বিনিময়,
শুধু পাওয়া আর ভোগ সে ও এক মহা কালরোগ আসল ভালোবাসা সেতো নয়,
সুখী হবার চেষ্টা,
দেহমনের অব্যাক্ত অবারিত তেষ্টা,
চুক্তি বিশ্বাস ভালোবাসা ভক্তি দুজনে দুজনার হয়ে সবকিছু ভাগ করে লয়ে দেয়ানেয়ার বিনিময়ে ॥
সব দীনতার ঘাটতিখানা,
কানায়কানা নিমেষে ভরে দিতে তা ষোলআনা,
এ কোন পসার কোন লাভ নাহি যার কে করে এমন বেঁচাকেনা,
এক বোঁকার বিস্বাদ ধোকা অদেখা বালামে লেখা অজানা রয়েছে অনেক দায়দেনা,
নিজেরে হলোনা চেনা,
তবু সে এক সপ্ত সুখের জালবোনা,
সেতো আকাশ হতে নেমেছে মাটিতে বিনিসূতায় টানা,
মিলে তা মূল্য বিনা, অব্যার্থ তার করুনা নেই যার কোন পরিমাপ সীমানা, বন্ধ দুয়ারে রয়েছে ঠায় দাড়িয়ে ॥
পূরুষের দায়,
উপার্জন করে ও খাওয়ায়,
তার বিনিময় প্রতিদান কিছু নাহি চায়,
তাতেই তুষ্ট শুধু নায্য পাওনা ভালোবাসাটুকু যদি পায়,
কন্ঠ নিরব চুপ আঁখি কথা কয়,
এক নারীর বহু রুপ বহু দায় বহু পরিচয়,
এ সংসারে বধূ কিবা মাতা হওয়া তাও এত সোজা নয়,
কৌশলে কষ্ট লুকায়, মোখে বলা হয়না ঠোঁটে তার হাসিটা লেগে রয়,
নহে তত কঠিন যদিও শত দায়ঋন নাহোক পথ সমতল মসৃন তবে আর কিসের ভয়,
ঘরে ও বাহিরে সবায় ঐ মোখপানে যেন রয়েছে তাকায়, সব মন তাকে বিনামূল্যে করিতেই হবে জয়,
এইতো জীবন এ জগত ও সংসার,
হর্ষ বেদনার এক মিশ্রিত সমাহার, দেয়ানেয়া প্রাপ্তি ও হারাবার,
শক্তি সাহস মনোবল আস্থা ও বিশ্বাস অটল অবিচল চাই করুনা ও নির্ভরতা উপরে তার,
পাথরের পাহাড় ও অথই পাথার, যাই হোক সে আলোময় কিবা আঁধার হতেই হবে পার তাহা সাতরিয়ে ॥
এলো সে নবজীবনের নতূন ঘরে,
মন আমারে ঝাপটে ধরে বারবার শুধু প্রশ্ন করে,
নববধূ কেন এমন,
যেন তার উদাসী বিষন্ন বৈরাগী মন,
কপট প্রসন্ন বিমর্ষ মলিন সাদামাটা অতি সাধারন,
কেন নেই কি তার কারণ সাজ প্রসাধন ও কাঙ্খিত বেশভূষন,
শোভা ও রঙ বিত্ত বেসাত ধন, করিতে আহরণ ও বিতরণ এইতো জীবন,
সাতরঙে বিধাতার সাজানো ভূবন, যে বলেছে হয়ত তারা রণে হেরেছে, কিছু তার নেই প্রয়োজন,
আপন পর যত ঘর দপ্তর এ সমাজ বিশ্ব চরাচর করিতে সরস ও সুন্দর বিধাতার অরুপ বাহার মাখিয়ে জড়িয়ে ॥
নহে এ জীবন,
ভোগ বিলাস বিনোদন,
শুধু আমি ও আমার স্ত্রীসন্তানগন,
সে কিসের মানুষ ভাই যার নাই দরশন,
তাই অনূভবে চেতনায় চাই সুবোধ সুবিবেচন,
ইসলামে সবাই সবার অতি আপন, নাই বৈরাগ্য সাধন,
হেরিতে আড়ালে সব গা ছোয়া অনূভব প্রয়োজন একটা তৃতীয় নয়ন,
হে মহাজন হে বিধাতা,
তুমিনা ন্বিঃস্বের ঠাই আর কেহ নাই প্রভু পালক ধনজন অন্ন দাতা,
তৃতীয় নয়ন সবার দাও খুলে আর নাও তুলে সকল গলদ যার মূলে মনের সব দীনতার ঐ আঁধার দাও সরিয়ে ॥
খুশী মনে বা শর্ত পূরণে কিছু দিয়েনিয়ে,
জীবনের এক অনন্য উৎসব আয়োজন হলো এই বিয়ে,
সে এক বিলাস, কত স্ফূর্তি ও অপচয় করে বাতাসে টাকা উড়িয়ে,
ভক্ত পূজারী হয় প্রিয় দাস আলো ও ভালোর বানিজ্য বসতি চাষ ফুলেফলে সাজিয়ে,
যারা কিছু নাহি চায় বেশী নাহি পায়,
এমন কত শত অগনিত বিয়ে হয় তাজা ফুলের মালায়,
লাল ফিতা রেশমী চুড়ি আর,
সূতী লাল টাংগাইল শাড়ী চওড়া জড়ির পার,
হয় যেন জাত-কূল যাত্রা,
রয় হেন সুখশান্তি সোহাগ সরস পঞ্চরস পূরো তিনমাত্রা,
খুশবুভরা মোহমায়া ছড়িয়ে নেশার ছায়া রাঙাতে ভাংগাতে লাজমান,
পতির শোবার ঘরের রংগী সমান এক সংগী নব সে মেহমান পরশে চাংগা লজ্জারাঙা টানটান,
লজ্জাবতী পত্নী সতী স্বরসতী, দুজনে দুজনার বিধাতার পরম নেয়ামত দান হয় শুধু একটা সোনার নাকফুল পরিয়ে ॥
দিনাজপুর,
লোকে বলে তা বহুদূর,
কি আসে যায় শূন্য আধা কিবা ভরপূর,
ঐ সোনার খনির পাতাল কিবা পার আর পাহাড় চূড়,
যাই বলো তোমরা ভাই তার কোন তুলনা নাই শান্তিপুর কিবা মধুপুর,
দুদিনের এ জীবন হর্ষ রোদন,
সুখ দুঃখ ভোগবিনোদন সবইতো নশ্বর কিছুক্ষন,
ঐ মহারাজায়,
দিয়ে মায়াতে জড়ায়,
সপ্তরঙে সপ্তসুখে জীবন ভরায়,
যার ধন যার দান দিয়েছে এ ভবে ছড়ায়,
আবার যখন যবে, তার ইচ্ছে হবে কিবা মনে চায়,
তবু কিসের আশায় আমি কোন সে মোহে কোন প্রতীক্ষায়,
সব ভূলে সব হারিয়ে,
রয়েছি হেথা আমি ঠায় দাড়িয়ে,
পলকে এক নিমেষে,
কেড়ে লয়ে সবকিছু ধনজন শেষে,
শূন্যহাতে কোন এক আঁধার রাতে অচিন আজব দেশে,
এক এক করে ধরে, চীর জনমের তরে জানি আমারেও জোড় করে এ ধরা হতে দেবে তাড়িয়ে ॥
মরে যাবো বলে,
যাবে কি এ জীবন তবে বিফলে,
অর্থহীন মূল্যহীন যাদের মাথাভারি ঋন তাদের দলে,
আমি তাই,
হাতে যেটুকু সময় পাই,
মুল্যবাণ সেটুকু সময় কাজে লাগাতে চাই,
এমন একটা গাছ লাগাই,
আলো আর ভালোর বসতি চাষ মিলে সবাই,
কোথা তার পাব চারা ভেবে নাহি দিশেহারা খুঁজে বেড়াই,
জনেজনে আপন ভূবনে স্বর্গ হতে রঙতুলি এনে সবে সে কানন সাজাই,
মহা পূণ্যময় কভূ ঝড়ে পরার নয় ফুলে ও ফলে সুশোভিত হয় স্বর্গমর্ত্য যায় ছড়াই,
সেই সুবাদে ঐ ছায়াতলে বিজয়ীর দলে হয়ত রাজায় দিবে ঠাই, যখন ন্বিঃস্ব অসহায় হবো ধনজন সব হারাই,
এই আশার বাণী শোনহে সবাই,
মহা নিদানে তুলিবে টানি, নিবে সে তড়াই,
কেউ নষ্ট কেউ লাভবান কেউ পথভ্রষ্ট মিথ্যামন্দের জালেতে জড়াই,
এক দেহে দুইজন,
প্রভূ ও গোলাম নিমেষে ক্ষিপ্ত পর নিমেষে প্রসন্ন আপন,
কি তার কারণ কেন ইবা হয় এমন, তবে হতো সর্ব সাধন যদি জানতো সবাই,
একজন মালিক মহাজন সৃজন নিধন সপ্ত আকাশ সাগর জমিন বিচরণ, ঘটে যখন ইচ্ছা হয় তার যাই,
যেজন কানা চাহে মালিকানা যার কিছু নাই, এ ভবে হয়েছিল আগমন ন্বিঃস্ব একা শূন্য বিবসন আজিকে ভূলে গেছে তাই,
চারিধারে সীমানার ঘের চোখ থেকেও দেখার সাধ্য নাই, আছে হিংসা ক্রোধ লোভ মোহ ক্ষোভ ও বড়াই,
ঐ সে রাজায়,
গোটা এ বিশ্বটা বেঁচে আছে যার করুনায়,
নাম লিখিয়ে তার কাফেলায় যাত্রী হই দুঃসাহসী ঐ অভিযাত্রায়,
সম তার কিবা কোন অংশীদার কিবা কারচুপি পক্ষপাত নাই, তার প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে ॥