বন্ধুরে - বারবার মনে পড়ে তোর ঐ মোখখান ॥
পোড়া দেহ,
দেখেনা কেহ,
আমার পোড়া মন,
নিরবে সারাক্ষন করে জ্বালাতন,
কখনও কখনও তোরে দেখিতে চায়, করে ছটফট আনচান ॥
আকূতি ভরে আমারে বলে,
বারণ করিলে চোখ তার ভাসে জলে,
কেমনে বুঝাই, নিজেরে লুকাই আমি কতনা ছলে,
দেখি কেউ নাই আমার দলে, বিফলে আমি হই পেরেশান ॥
সে ও নয় কম রুপসী,
তারেও আমি দারুন ভালবাসি,
সারাদিন যাই করি যেখানে যাই রাতে ঘরে ফিরে আসি,
সুখ পাই দেহে জড়াই, রাতভর শুয়ে থাকি গায়েতে লেগে পাশাপাশি,
তবু তোর প্রতি আমার, অন্তরের হাহাকার, কেনরে তোর লাগি তারচেয়ে অনেক বেশী টান ॥
সে তো তোর মতই একজন,
এক ডাকে, কাছে কাছে থাকে, সারাক্ষন,
নাই কোন তফাৎ, সবই পাই যখন যাহা চাই হয় প্রয়োজন,
এডাল ছেড়ে ওডাল, কেবলই উড়াল উড়াল, এত পেয়েও কেন ভরেনা এই মন,
তোর পিছে পিছে পায় পায়,
মনোলোকে সারাদিন ঘূরে বেড়ায় তোর আংগীনায়,
কোন সে যাদুর মায়ায়, দেহটা বধূয়ার কাছে আর, বন্ধুরে তোর কাছে মোর পড়ে রয় বেহায়া পরাণ ॥
আমার ঘরে যে আছে,
সব ধন সৌরভ সুধা ও মধু রস সবই ঢের আছে তার কাছে,
তুই দিলি দাগা দিলি ছেল,
কত কানাঘূষা, নিন্দা ও দরবার মেল,
তুই হলিনা আমার,
নিত্যদিনের সুখদুঃখের কোন ভাগিদার,
আমার স্বপ্ন আশার সোনালী ভূবন হলোযে ধূসর আর, সাজানো রুপালী কানন বিজন বিরান ॥
তবে কি এই তার কারন,
ছাই ও ধূয়ায় ঢাকা এক পোড়াবন,
আমার এ বিশাল সবুজ ও শ্যামল ভূবন,
যত দূর যায় দিগন্তের দূর সীমানায় এ দুটি নয়ন,
হেন এক পোড়াবন যেন নেই বাড়ীঘর নেই কোন লোকজন,
কি নেই আমার কাছে, সবইতো আছে সুন্দরী বউ বাড়ীগাড়ী ধনজন,
গায়ের সেই মেয়েটি গরীব চাষীর কলেজ পড়ুয়া বেটি, নেই বলে শুধু ঐ একজন,
বয়সের কালে বন্ধুরে সেইযে তুই আমার পরান কাড়িলি,
এ দেহে নেই প্রাণ, সে ব্যাথার হলোনা অবসান, আমার সুখ ফিরিয়ে আর নাহি দিলি,
ভালো লাগেনা এখন আর পুকুর ঘাটের ঐ পূর্নিমার চাঁন,
খোলা মাঠ, ঝাউ বন, গুদারা ঘাট, শাপলা বিল ও বয়াতীর পালাগান,
বধূয়ার বাহারী সাজ, বলিতে নেই লাজ, সকলই আমার কাছে আজ হয়েছে যেন বিজন শ্বশান ॥
কত কষ্ট পেলাম,
হলো আমার কতোনা বদনাম,
এ সমাজে কথায় কাজে কমে গেছে মোর দাম,
মনের চাওয়া রাখতে গিয়ে,
চুরি করে তরে আমি করলাম বিয়ে,
এক অধম অযোগ্য স্বামী শেষে দেখি হায় আমি সব হারালাম, হলো মোর ষোলআনা লোকসান ॥
বন্ধুরে তুই কইরে এখন,
ধিকি ধিকি জ্বলে এ বুকে দুঃসহ দহন,
পারিনা এ সংসার ছাড়ি, সবার সনে দেই আড়ি, আর যায়না সহন,
নাই জানা ঠিকানা, যতই কষ্ট পাই কারেও সেকথা আর বলিতে পারিনা এখন,
কলিজা ধরে মারিস তুই হেঁচকা টান, জানিরে তোরই অবদান নিরব এই বীরহ নিদান ॥
আমার বনপোড়া ময়না,
আজ কতদিন তার সনে দেখা হয়না,
মন খূলে আরতো সে ওরে হেসে কথা সে কয়না,
সকালে বিকালে দুটি কথা বলার ছলে গাছের তলে আর দাড়িয়ে রয়না,
কারে পড়াব আমি আর, হিজলতলার হাটে কেনা আমার প্রেমের গয়না,
এক বঞ্চিত প্রাণ বুঝি সয়ে সয়ে শেষে হয়েছে সে কঠিন পাষান ॥
আমার বাঁশীর গলায় কে পড়াল ফাঁসি,
আমি তারে চিনি আজও ভূলিনি যে বানালো উদাসী,
আর নিলোনা খবর হলো জনমের পর, দেখলোনাতো একবারও আসি,
নিদহীন গহীন রাতে ঐ বাঁশীটা আর উঠেনা হাতে, তাই সে আর করেনা গান ॥
দুজনার একই গ্রাম,
পূর্ব পূরুষের ঠিাকানা ও ধাম,
অপূর্ব সুন্দর, অর্পিতা সূত্রধর ছিল তার নাম,
হলেও সে বয়সে বড় দুজনে দুজনারে নামধরে ডাকতাম,
ছিল দুবছর পড়ায়ও সিনিয়র, দুজনে আমরা একই কলেজে পড়তাম,
আমাদের নায়েবী আর তার বাবার, কৃষিকাজ ও নক্শাদার সৌখীন কাঠমিস্ত্রীর কাম,
দুই পাড়ায় বসতি ছিল দুইজন,
দুই পরিবার তবু দুইজনেরই ছিল একই মন,
ভিন্ন বিধান আচার, দেহে নয় মনেও নয় শুধু জাত ধর্মের ছিল ব্যাবধান ॥
কেমনে আপদ ঠেকাতে হয়,
ছিল দুজনেরই জাত-মান ও বিপদের ভয়,
তাই অস্বীকার তার সনে আমার প্রণয় ও গোপন পরিণয়,
জানিনা কেমনে তা সেদিন মোখেমোখে জনেজনে হয়েছিল সারা গ্রামময়,
আমার বাবার,
ছিল বিশাল ধনের পাহাড়,
সেই পরিমান কেন থাকিবেনা অহংকার,
কিসের অভাব তার ক্ষমতা ও প্রভাব তাও ছিল পাহাড় সমান, আর মনটাও যেন পাষাণ ॥  
শেষে জেনে ফেলে মায়,
তারপরে শক্ত বাধা হয়ে উঠে বাবায়,
একদিন ডেকে এনে অর্পিতার বাবামাকেও শাসায়,
কিছুদিন পরে শুনি হায়, সপরিবারে চলে গেছে তারা কলকাতায়,
দরবার হইল, স্বাক্ষী রইল যত সরদার মেম্বার ও গ্রামপ্রধান, বাঁচিল বাবার মান ॥
মনেরে আমি এত বুঝালাম,
তবু মন কথা শোনেনা লয় শুধু তারই নাম,
ভূলিতে তারে নাহি চায়, এই বুঝিরে অবুঝ পীরিতির দাম,
আজও আমি হয়ে আছি মোর মরমের আংগীনায় এক অক্ষম অপরাধী সাম,
হয়নি কাগজে ছাপা, রয়েছে বুকেতে পাথর চাপা স্মৃতির পাতায় লেখা এ গল্পখান ॥
বাজ পড়িল আমার মাথায়,
বাড়িয়ে আমার ঋন তারপর বহুদিন চলে যায়,
তবু আজও কেমনে কেন রলো সে অক্ষয় অম্লান মম স্মৃতির পাতায়,  
সে সমাজের কাছে মোর হয়েছে হার,
এই হলো গল্প আমার অবুঝ ও ব্যার্থ ভালবাসার,
আহারে কে শোনে কথা কার, আর নাবলা তার এক পাহাড় কষ্ট বেদনার করুণ বয়ান ॥