ভূমিকা - এটি একটি জীবনের গল্প । কবিতায় ছোটগল্পের দারুন স্বাদ । বাস্তব ঘটনা, তবে কাব্যের স্বার্থে ও চরিত্র গুলো লুকানোর চেষ্টায় সামান্য হেরফের করা হয়েছে । একটু বড়তো হবেই । আকার বড় দেখে বিরক্ত না হয়ে, দয়া করে একটু সময় হাতে নিয়ে একবার নাহয় পড়েই দেখুন না । ভালো লাগতেও পারে ।


মোহ  - পর্ব


একটি প্রেমের গল্প ॥
সুখশান্তি ও সাফল্য নাকি র্ব্যথতা ও পরাজয়,
তার হিসেব কষা কঠিন, ভিন্নজনের কাছে সে পরিসংখ্যান বা ফলাফল ভিন্নরকম হয় ।
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগেকার কথা,
বাবা ও ছেলের পছন্দে ই বিয়ে হলো,
সুন্দরী স্ত্রী, বউ নিয়ে ছেলে কর্ম্মস্থলে চলে গেলো,
বড় শহর, ভাড়াটে বাসা,
খুবই সুখশান্তিতে চলছিল সংসার,
মাঝেমাঝে নিজের বাবামা ও স্ত্রীর আপনজন এসে বেড়িয়ে যেত,
বিবাহিত জীবনের দু/তিন বছর না যেতেই অঞ্জাত অশান্তির কালোছায়া ।
পরিবারে এখনও কোন সন্তান আসেনি,
স্বামী লোকটি এখন প্রায়ই অনেক রাত করে বাসায় ফিরেন,
তার কিছুদিন পর থেকে সে প্রায় রাতেই বাসায় ফিরতেন না,
প্রথমদিকে প্রশ্নের জবাবে নানাহ অজুহাত,
বাহানার যখন আর কোন রকম নেই তখন নাজেহাল,
শেষের দিকে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠা ও উত্তেজিত হয়ে স্ত্রীকে মারধর,
উভয় পক্ষের মুরুব্বীগণ বিষয়টি অবগত হলেন,
ধীরে ধীরে জানতে পারা গেলো, সে একটি কুমারী মেয়ের প্রেমে পড়েছে ।
ঐ মেয়েটি তার স্ত্রীর তুলনায় অতিশয় কম আকর্ষণীয়,
হয়ত বয়সে কয়েক বছরের ছোটই হবে,
সে মেট্রিক পাশ, চাকুরীজীবি ও নার্স,
একেবারেই সাদামাটা ও সাধারণ একটি মেয়ে,
ছিপছিপে গড়ন ও শ্যামলা, নিতান্ত নগন্যই তারে বলা যায়,
তার স্ত্রী আইএ পড়ুয়া, শিক্ষিত স্বচ্ছল ও সম্ভ্রান্ত এক পরিবারের মেয়ে নজর কাড়া সুন্দরী ।
একদিন দিনের বেলায় ঐ মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছিল,
মেয়েটি সেদিন খুবই স্বচ্ছন্দ, সাবলীল ও সৌজন্যমূলকভাবে গল্প করে চা খেয়ে চলে গিয়েছিল,
তারপর থেকে ক্রমশই তার স্বভাব আচরণের রুপ পাল্টে যাচ্ছিল,
এখন ঐ স্বামী লোকটি দু/তিন দিন পর পর একবার বাসায় আসে,
কোনদিন সে দিনের বেলায় বাসায় এলেও বেশীক্ষন ঘরে থাকেনা,
চোখ তুলে মোখের দিকে তাকায় না, ঠিকমত তার সংগে কথাও বলেনা,
ঘরে এটা নাই ওটা লাগবে ইত্যাদি বললেও হয় চুপকরে থাকে নাহলে বিরক্ত হয় ।
তুমুল অশান্তির আগুন জ্বলছিল ঐ পরিবারে,
পরস্পর শোনা যাচ্ছিল, সে নাকি ঐ মেয়েটিকে বিয়ে করেছে,
তার বাবার বাসায়ই নাকি সে রাতে থাকে,
ব্যাপারটি এখন আপনপর প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধব এলাকার প্রায় সবাই জানে ।
বিয়ের স্বর্নগুলিও তার নানা কৌশলে আগেই নিয়ে গিয়েছিল এক এক করে,
সেদিনই সে আত্বহত্যা করে যেদিন সর্বশেষে হাতের বালাদুটি তার নিয়ে যায় এসে কেড়ে জোড় করে ধরে,
কিছুদিন পর,
চারিদিকে রটালো খবর,
মহল্লার একজন মহিলা ফাঁসী দিয়ে আত্বহত্যা করেছে,
সে থেকে বাসাটি এখন প্রায় পরিত্যাক্ত,
কয়েক মাস পরে,
বাসা বদল করা হলো, নতূন বৌ এলো ঘরে,
তারপর সংসারে এলো অনেক স্বপ্ন আশা আর,
মোহ মায়া ও ভালোবাসার অতী প্রিয় সন্তান ।
দিন গড়িয়ে চলে, সময় পেরিয়ে যায়,
স্মৃতিতে জমা হতে থাকে কত ঘটনা আর কতনা সুখদুঃখের কথা,
এখন ঐ লোকটি চার কন্যা আর সব শেষে এক পূত্রের জনক,
এক সুখী দম্পতি ও একটা সুখের সংসার,
কেজানে সেদিন অঞ্জাতে অন্তরালে,
একটা ক্ষুদ্র ভূলে কোন বিশাল ক্ষতির বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল কিনা,
অনেককিছু দিয়ে, বড় মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল সেই অনেকদিন আগে,
পরিবারের পাতানো বিয়ে, শুনেছি তবে সে নাকি সুখে নেই ।


প্রতিফল - পর্ব


অনেকদিন পর, হঠাৎ একদিন ঐ ভদ্রলোকটি স্ট্রোক করে মারা গেলেন,
তারপর - - - - - অনেকদিন অনেককিছু,
কোন ফাঁকে দশ/পনর বছর গত হয়ে গেছে,
অবশিষ্ট তিন কন্যার কারোই আজও বিয়ে হয়নি,
একেবারে ছোট টির বয়স নাকি তেত্রিশ পার হয়েছে,
তারও ছোট ছেলেটি,
বেশী লেখাপড়া করা হয়নি, একটা চাকুরী করে,
বেশ কয়েক বছর আগেই প্রেম করে সে বিয়ে করে ফেলেছে,
এ গুনটি হয়তবা তার মাবাবার কাছ থেকেই পাওয়া,
দু/তিন বছরের একটি মেয়ে আছে তার,
হয়ত বড় বোনদেরকে বিয়ে না দিয়ে কিবা প্রেম করে বিয়ে করার অপরাধে,
ঘরে তাকে ও তার স্ত্রীকে যেন তাই গলগ্রহ হয়েই থাকতে হয়,
সারা সংসার জুড়েই কেমন যেন একটা অজানা ও অদৃশ্যমান অশান্তি বিরাজমান,  
পরিবারের মা মেয়ে ছেলে ও তার বৌ কেউই যেন সুখী নয়,
ছেলের বৌটি বেশ বড়লোকের মেয়ে,
মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে সে তার স্বামীকে বলে,
বাবামার কথা অমান্য করে তোমাকে বিয়ে করাটাই বোধহয় হয়েছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভূল,  
ছেলের বৌটি কিছুদিন পরপরই তার বাপের বাড়ী চলে যায় ।
এভাবেই চলছিল দিন,
অধিকই তমশা ঘেরা কিছু তার রঙীন,
কে জানিত কোন কারনে কোন ফাঁকে হয়েছিল তার অজানা এত ঋন,
ছেলেটি পয়ত্রিশের কর্মঠ যূবক,
উচ্ছল সদা হাস্য প্রাণ চঞ্চল, ছিল খুঊব ভাল ছেলে ভাল মানূষ সবাই বলে,
ভিতরে ভিতরে, খেলো তারে কুড়েকুড়ে, হলো প্রাণ নাশী ক্যান্সার,
দ্রুতই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছিল,
এক পর্য্যায়ে বউটি তার শিশু কন্যাটিকে নিয়ে বাপের বাড়ী চলে গেলো ।
৬/৭ ইঞ্চি জায়গা জুড়ে পাকস্খলীর ক্যান্সার,
কেটে ফেলে দিতে হতে পারে ২/৩ ফুট তার,
না হলে হয়ত তা হতে পারে আবার,
হলেও সফল অপারেশন, নেই গ্যারান্টি তার স্বাভাবিক জীবন আর ফিরে পাবার,
পরিপাক ও অন্য সবকিছুতে অনিয়ম ও বিঘ্ন ব্যাঘাত, হতে পারে কিছুদিন পরে পরে রক্তের দরকার,
তবুও সবাই রাজী, এখন করতে হবে বিশ লাখ টাকার যোগার,
৫/৬ মাস গত হয়ে গেছে,
ভারত গেলো, ধারকর্জ করে চিকিৎসা চললো,
কিছুতেই কিছু হলোনা, বিছানা ছেড়ে সে উঠে এলোনা কোনদিন আর ।
গতকল্য তার মৃত্যু হয়েছে,
মরন তাকে এক জীবনের কষ্ট যন্ত্রনা থেকে মুক্ত করে নিয়ে গেলো অন্য জীবনে,
আর বেঁচে রলো যারা,
ঐ পরিবারটির করুন পরিনতি আর বেহাল দশা,
ঐ সাবেক নার্স মাতা নানা রোগে ফেলেছে ধরে বিছানায় যেন পড়ে পড়ে ও তার কন্যাদের গল্প,
হয়ত আর কেউ, অল্প হলেও বলবে অন্য কোনদিন ।
শুধু সুখের মোহ ও ভোগের বাসনা,
বোঁকার দল, আর যত হতভাগা কানা,
প্রেমের উল্টো পিঠে কি আছে তা, যারা দেখেনা,
কেজানে তা প্রথম স্ত্রীর বুকফাটা নাবলা কষ্টের অভিশাপ ছিল কিনা,
বাহির আর ভিতরের রুপ ভিন্ন রকম হয়,
ভালো মানূষ চেনা আর বিনামূল্যে সুখটা কেনা এত সহজ নয়,
রুপ আর ভালোতেও আছে কত মন্দ আর কালোতেও শত ভালো লুকানো রয়,
রাজার কাছে সবই আছে, গোলাম হয়ে ধর্না দিয়ে নির্ভর করেই তা হতে পারে শুধু জয় ।
একটু সুখ, কিছু স্বপ্ন ভংগ বা আশার মরন,
একটু হতাশা এবং সামান্য দুঃক্ষ কষ্ট ও অশান্তি,
এইতো জীবন, সেতো বিধিরই বিধান,
তবে শুনে রাখো সবে সাবধান, বিধাতা নির্দোষ,
তারইতো বিজয়, সর্ব সাধন হয়, ক্ষুদ্র দানে ও সামান্য কথায় কাজে তারে করিতে পারে খোশ,
হতে পারে তা ই তার ফসল, আপন কর্ম্মদোষে হয়ে যাওয়া জীবনের যত সব অন্যায় অপরাধ ও ভুলভ্রান্তি ॥