ভূমিকা – এটি একটি জীবন বিষয়ক গল্প-কাব্য । আধুনিক শহুরে জীবনের সমাজ চিত্র, একটি রুঢ় বাস্তবতা । পরিবারের সবাই একসংগে বসবাস । একজনের উপার্জনের উপর নির্ভরশীল পাঁচজনের দিনাতিপাত । ছেলের উপর প্রচুর অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপ । তদুপরি ছেলে-বৌয়ের প্রতি এক অবিবেচক মায়ের টানা অবজ্ঞা, অবহেলা ও অমানসিক নির্যাতন । ইচ্ছায় কিবা অনিচ্ছায় বুঝে কিবা না বুঝে মায়ের করা এই অত্যাচারের প্রতি বাবার সমর্থন । তবুও মায়ের সুবাধ্য পুত্রধন তথা এক নির্যাতিত বধূয়ার অব্যক্ত অস্থীরতা অনুভব করেও মুখ বুজে থাকা স্বামীর দুঃসহ জীবন যাপনের করুণ আলেখ্য । অনেক শর্ত আরোপের পর অনেক বিলম্বে অর্থাৎ অনেক বেশী বয়সে অতঃপর ছেলেকে তার নিজ পছন্দে বিবাহ করতে মায়ের অনুমোদন ।


ছোট্ট এ জীবনের গড় আয়ুর দুই-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরও কেন এখন ছেলেকে সন্তান নিতে মায়ের বারণ । এমন মা-বাবার প্রতি ছেলের কোন অভিযোগ না থাকলেও মনঃকষ্ট আছে নিশ্চয়ই । হতে পারে বৌমারও রয়েছে অনেক নালিশ । ভয়ে বা অন্য কারণে তা থাক বা না ই থাক ঐ মা-বাবার প্রতি হয়তোবা কোটি পাঠক/শ্রোতারও রয়েছে বুকভরা ধিক বা হৃদয় নিংড়ানো ঘৃণা । চিরসত্য ও মহাপবিত্র কোরআন এর ভাষায়, নিশ্চয়ই সকল জুলুমকারীর উপরই রয়েছে হক্কের হাকিম আল্লাহপাকের শাহী বিধানের শাস্তি বা লানত যিনি মজলুমের প্রতি অতিশয় সদয় ও মেহেরবান ।    


পর্ব – ০১


ঘর বেধেছিল তারা বিয়ে করে,
কাটিছে জীবন বন্ধুর মতন পরম ভালবাসা ভরে,
নিশ্চয় বিধাতার এ সৃজন ভালবাসা মহাসৃষ্টির কল্যাণ ও মংগলের তরে,
এইতো নিয়ম হলে কম প্রেমের পরিচয় কাটেনা সময় এক দম, চলছে যা জনম জনম ধরে ।
বাবার ঔরসে মায়ের উদরে,
দশ মাস দশ দিন ধরে নিরাপদে থেকে-খেয়ে, ঘুমিয়ে ও ডিগবাজির খেলাকরে,
ধন্য হয় লভে বাবামার প্রাণ,
দুইই সমান ও পরম মহান ও মহামূল্যবান,
হোক ছেলে কিবা মেয়ে তাযে বিধাতার এক অপার করুণার দান,
দুনিয়ায় আসে, দুজনে শত আশার স্বপ্ন দেখে আর হাসে, কত প্রিয় কত আদরের এই সন্তান ।
কারণে কিবা অকারণে একদিন,
সবার মন রাখা ও মন পাওয়া হলে কঠিন ভালবাসা হয় বিলীন,
যখন আপন জগতটা সবার উঠে গড়ে,
অজান্তে গোপনে আপন জনেরে ঘুণে ধরে খায় কুড়েকুড়ে ।
কার দোষ কার দায় ভালটারে এসে ঘিরে ধরে,
ভুল বুঝাবুঝি অজান্তে মুক্তির পথ খুঁজি, ভালবাসা ক্ষিণ ও মনটা মলিন ঘরের ভিতরে,
দেনা-পানা, লেন-দেন, লাভ-ক্ষতি ও বিনিময় প্রতিদান,  
কত ভেদাভেদ লোভ ক্ষোভ ও ক্ষেদ, আসমান ছোয়া অদৃশ্যমান এক রাক্ষুসে ব্যবধান ।
কোন ফাঁকে হায়,
ঐ দিনগুলিযে খুব দ্রুত অজানায় বয়ে যায়,
একটু বড় হয়ে মায়ের বিছানা ছেড়ে এখন তারা ঘুমায় বাবার বিছানায়,
মায় কয় তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যা,
আরেক টুকরা মুরগী নে যাদুরে আমার পেটটা ভরে খা,
বাবায় থাকে সদা নানা ভাবনায়, বাইরে যেতে বলে তোরা সাবধানে যাস, আল্লাহ ভরসা ।
মায়ের কোণঠাসা সোহাগ আঁচল,
ছটফট আনমন ব্যস্ত চঞ্চল, বেশী ভাল লাগে যেন এখন দলবল,
ধীরে ধীরে যেন আলগা হওয়া এ গৃহছায়া তল,
বাবার ভালবাসায় নাই উচ্ছল আবেগ, হাসেও কম কখনও দেখিনি ঝড়েনা তার চোখের জল ।
পড়ে গিয়ে আবার উঠে তবুও ছুটে হায়,
ভাল লাগার একটু বড় সীমাণার উঠান কিবা আঙিনায়,
সংগীর তালাসে কেউ তারা যায় খেলার মাঠে কেউবা তার পাশের বাসায় ।
দিনের বেশীটা সময়,
দেহমন যেন ফুরফুরে ও চাঙা হয়,
তাদের জানার জগত খুঁজে লয়ে পথ তারা সদা ব্যস্ত রয়,
ছুটোছুটি করে কৌতুহলে ভরে পার হয়ে যায় স্কুল ও কলেজের সবুজ সরব চত্বরটায় ।  
দেখিনি মাথায় তাড়না,
তাদেরে মানুষ বানাবার কেন নাই বাবামার বাসনা,
পাইনিতো খুঁজে কেন তারা যেন চক্ষু বুজে, অধিক বাবামার মাঝে নেই সে চেষ্টা কিবা ভাবনা ।
স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়ায় মানুষ কিবা জ্ঞানী হতে নয়,
বাবা-মা কিবা ঐ সন্তানের দেমাগ ও ধমনীতে একই ধারণার জোয়ার বয়,
অনেক বড় হতে হবে সমাজে ক্ষমতায় কিবা অর্থ ও বিত্ত-ধনে, নাহলে যেন তা হবে এক পরাজয় ।


পর্ব - ০২


সে যে এক বিশাল অবক্ষয়,
কেউ নিজে না বুঝিলে তারে লোকে বুঝানো বড়ই কঠিন হয়,
মেয়ে যেমনই হোক বড় আশা করে বলে মায় তার,  
মেয়ের বাবার কাছে এ যেন তার মায়ের এক বায়না ও আবদার,
শোনে রাখো জামাই চাহি আমার হ্যান্ডসাম, স্মার্ট, কম বয়সী ও বিসিএস কেডার ।
বলে রাখি আর ছেলে হবে আমার,
চাই থলে ভরা করবে কামাই ও দুনিয়া জোরা নাম তার,  
মস্তবড় মাওলানা সময় নাই ঘরে মিলেনা খানা, শুধু দাওয়াত আর দাওয়াত যার,
নাহলে তাকে হতেই হবে জজ-ব্যারিষ্টার, সরকারী কলেজের অধ্যাপক কিবা ডাক্তার ইন্জিনিয়ার ।
মজার ভার্সিটির জীবন,
কেজানে কতটুকু পেলো কে জীবনের দরশন,
দল বেধে ছেলেমেয়েরা যেন শুধু ঘুরঘুর চা খাওয়া ও গল্প করা সারাক্ষণ,
যাই হোক, লেখাপড়া হলো তা প্রায় শেষ,
ভেবোনা তুমি খোদার করুণা হলে দিন বদলাতে বাকী শুধু এক নিমেষ,
মায় বাবারে বলে মেয়ের জন্য বিয়ে দেখো, চাকরী না পেলে মোদের ছেলে যায় যাবে বিদেশ ।
বউ এলে ঘরে শেষে আমি যাবো মরে,
ছেলে বেকার নাই রোজগার আমারে কোন দোষ দিওনা পরে,
কে পালবে কে খাওয়াবে তারে, বোঝার উপর এখন আরেকটা শাকের আঁটি নিওনা মাথায় করে ।
ধমক খেয়ে একেবারে চুপ বেচারা বাবা,
তার সব কথায় ও কাজে কিবা মুক্ত ভাবনায় পড়ে রাহুর থাবা,
বজ্রপাতের চমকে থমকে উঠা আঁধার রাতে যেন সে একজন নিরীহ অসহায় নিরুপায় হাবা ।
একটু জিরিয়ে বলতে চাহিল ফের,
নানা গুণে স্বভাব আচরণে পূরো যেন সে একসের,
আমার ছেলেটা কালো তোমার বোনের মেয়েটা দেখতে ভালো ও সুন্দর ঢের ।
ওরা দুজনে দুজনকে ভালবাসে,
দেখোনা নাকি বুঝনা, লিলি মেয়েটা প্রায়ই তোমারে কেন দেখতে আসে,
দুতিন বছর হলো অনার্সটা পাশ করে,
তোমার ছেলের বউ হতেইতো সে ঘরে বসে আছে এমএ না পড়ে,
মেয়েটা বেশ নামাজী ও সংসারী,
দেখো যেন শেষে, তুমি তোমার ইগোর কাছে যেওনা আবার হারি ।
কতদিন তারা এ আশায় বলো থাকবে বসে,
ভাল মেয়েতো পাওয়া যায়না, দেখেছি আমি দেশটা ঘুরে চষে,
নাহলে তুমি নিজ কৌশলে তাদেরে দাও না বলে, জানি আমি নিশ্চয় তুমি পস্তাবে শেষে ।
ছেলেটা যখন ধরেছে হাল,
এখনই ওরে তার কাঁধে দিওনা তুলে জোয়াল,
তোমার পেনশানের ঐ টাকায় কয়দিন চলে হয়কিরে তাতে চাল-ডাল,
শোন মন দিয়ে ওকে বিয়ে করিয়ে, সংসারে এখনই তুমি টেনে এনোনা আর একটা নতুন জঞ্জাল,
একটি মানুষইতো বাড়তি খাবে,
আর যে কামায় তার ঘরেইতো সে ঘুমাবে,
কোথায় কি সমস্যা তাতে, বুঝিনা তোমার হিসাব-কিতাব ও এ ঘরের যত সব এলোমেলো হাল-চাল ।


পর্ব – ০৩


তাছাড়া তোমাকে বলছি শোন, প্রেমের বিয়ে ভাল নয়,
শুনেছি নাকি তাতে বউ হয়ে আসা মেয়েদের লাজ সরমের অনেক ঘাটতি হয়,
ওরা অনেক বড়লোক, আত্বীয়ের সনে আত্বীয়তা করে হবেনাতো শেষে আবার আমাদের পরাজয় ।
বাবা হয়ে তুমি মেয়েদের রেখে ঘরে,
ছেলের বিয়ের চিন্তা এখন বলো করছো কেমন করে,
বিয়ার লায়েক তিনটে মেয়ের বিবাহের মহা দায় যে বাবার মাথার উপরে,
হোকনা বয়সে বড় সেতো ছেলে, সবেতো উনত্রিশ হলো কি এমন বলো বয়স হয়েছে তার ওরে ।
কিছু কামাই ও সঞ্চয় করুক,
আমাদেরে পালছে যখন ওরে কয়দিন পালুক,
সেতো এমন নয় যে, বলছি তারে অঁচল ঘানীটা সে টানুক,
তাদের অনেক কথা ও কাজগুলি ঐ আমার মনে হতো যেনরে চাবুক,
আমিতো ছিলামনা কভুই অবুঝ কিবা বোকা, হয়তো ছিলেম শান্ত, গম্ভীর ও ভাবুক ।
চোখে পড়ার মত একই ঘরে,
কেন এত ব্যবধান মা-বাবায় ওরে ঠিক যেমনটি করে,
কথায়, যখন খাবার খাওয়ায় কিবা সোহাগ ও আদরে,
মেনে নিতে চায়না মন, দেখায় তা কেমন যেন উল্টো করে তুলে ধরে,
মেয়ে-জামাই ও তাদের ঘরের নাতি-নাতনীদের লয়ে উঠে মেতে ও রয় মজে পড়ে,
বয়সতো কম হলোনা অনেক দেখেছি এ জনম ভরে,
ভেবেছি কারণ দেখেছি গভীর গবেষণা করে, তা আসলে হয় সারা বছর থাকে বলে তারা দূরে ।  
সব দেখে-শুনে ও বুঝে নিভৃতে অগোচরে,
কখনো হঠাৎ মায়ের ঐ অবাক করা মমতার আচারে,
আচানক অনুভবে গোপনে মনের ভিতরে,
মাঝেমাঝে কষ্ট আর হতাশায় এ বুকটা আমার হায় যেতোযে ভরে ।
বড় দুটি ছেলে উদাসীন,
বাবা-মার প্রতি তাদের যেন ছিলনা কোন দায়-ঋন,
যে যার মত বউ লয়ে তারা বাসা করে,
মন ভুবনের লৌহ প্রাচীর ঘের, কোন এক অচিন বিজন শহরে ।
মায়ের আচরণের পেশীতে পড়ে,
কোথায় বেশী সুখ, দেখুকনা তারা ঘুরে ঘুরে,  
যতনা মাটির গেছে চলে তারচেয়ে অনেক বেশী মনের দূরে,
কার কেমনে দিন যায়, কে পড়ে আছে বালুচরে আর কেবা মজে সুখের শান্তিপুরে ।
আমার মনের মানুষ ঐ মেয়েটার,
বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, বিয়ে হয়নি তখনও শুধু আমার,
এক ধনাট্য পরিবারে হয়েছিল তার ঘর,
আমার মায় কেন নাহি পায় ছেলের মনের একপাহাড় সে কষ্টের খবর ।
স্বেচ্ছা নির্বাসনে আমি তারপর,
বুকে বেধে একখানা অদেখা বিশাল কালো পাথর,
সব স্বজনের চোখ থেকে পালিয়ে করেছি পার ছোট্ট এ জীবনের চল্লিশটি বছর ।
অন্য একজন হয়েছে তার স্বামী,
আর শুধু মায়ের লাগি অপরাধী আসামী হয়েছি আমি,
নিজেরে আজ বড়বেশী ছোট মনে হয়, রয়ে গেছি বলে হয়ে অক্ষম ও কমদামী,
তার কি কভু আর ক্ষমা কিবা পূরণ আছে, কেমনে মোখ দেখাবো হয়েছি যার কাছে চির জনমের পর ।  


পর্ব – ০৪


আমার সব বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো,
তারপর শেষে উনচল্লিশ বয়সে আমার বিয়েটাও হয়েছিল,
তবে আমার ভাগ্যটা হয়নিরে ভাই, ছিলনাযে জানিনা কেন তা মোটেও ভালো ।
বউটি আমার ছিল পছন্দের ও ভালবাসার,
অনেক গুণ, শুধু দোষ ছিলো দুচারটে মিথ্যা বলা ও রাগ বেশী তার,
ছিল তার রুপের বাহার তবুও বছরের মাথায়, মার কথায় ও জ্বালাতনে ঘরটা ভেংগেছিল আমার ।
ছোট ভাইটির লেখাপড়া শেষ না হওয়ার অজুহাতে,
নাকি মায়ের পছন্দ করা পাত্রী মেনে না নেওয়ার কারণে সুখ পড়েনি আমার পাতে,  
আগে জানতাম মায়েরা রোজগেরে ছেলের আপন হয়,
আমিতো শান্ত তেমনই ছিলাম, কোন কিছুরই বিপরীত কিছু নয়,  
দেখছি এখন দিনরাত সারাক্ষণ, মেয়েদের ভাবনাই যেন মায়ের মাথাটা জুড়ে রয় ।
কেন আমার বেলায় তা হলোনা,
সামাণ্য যেটুকু তাও যেন অভিনয়, ছলনা ও প্রতারণা,
অনুভবে ও চেতনায় একটুখানি বিবেচনা,
পেলাম তার অন্যরকম এক ধারণা, শুধু কষ্ট ও হতাশার তাড়না ।
বুঝেছি বিলম্বে শান্ত, শীতল ও নিরব উদারতায় হয়না সবকিছু জয়,  
নাহলে কেন ভালবাসার নয় নহে আস্থা ও নির্ভরতার, কেন আমি তাদের আপন কেউ নয়,
বৈষম্য, দন্দ, রহস্যময় ও বৈরীতার এক ভিন্ন তিক্ত পরিচয়,  
কেন শুধু যেন তাই মনে হয়, এক বিমাতার সবকিছু যার বিরস, শূন্য, অসার ও যাতনাময় ।  
আমি কি ছিলাম তার পালক সন্তান তা কেমনে হয়,
মিলেনি কোনদিন আমার সে হিসাবখানি, কোন্ সে সত্যের অপচয়,
এখনও অনেক কিছু জানতে রয়েছে বাকী তাই সংশয়,
ছিল মায়ের সোহাগ প্রাপ্তী অনেক কম, অধিক ফাঁকি সেকি তবে আমার আসল মাতাজি নয় ।
কায়ঃক্লেশে পেলেও অবশেষে অনেক সাফল্য বিজয়,
আসলে এ ধনের জগতের লোক সমাজের দেখা চোখে আমার যে হয়েছিল পরাজয়,
জানিনা কি অপরাধ ছিল আমার,
কোন সাধ, বাসনা ও প্রয়োজন কি নাই, না কি তা থাকতে পারেনা কোন শিক্ষিত বয়স্ক পোলার ।
সব বাবা-মার কাছে সকল সন্তান,
এমনইতো হওয়া উচিৎ, হচ্ছে আসলে কেন তার বিপরীত, সবাই সমান,
শুনেছি তা মোখেতে সবার,
বরং একটু বেশী আদর ও কদর সে ছেলেটার,
যে বেশী সবার খেয়াল রাখে, কাছে থাকে আর সংসারে যার বেশী অবদান ।
এ কোন জুলুম অবিচার,
থাকতে পারেনা কি কোন স্বাধীনতা তার,
আর নিজের মত করে বউটিকে তার ভালবাসিবার অধিকার,
সে প্রয়োজন কিবা অধিকার কি ছিলনা কখনও যখন ছিল যৌবন আমার মা-বাবার ।
প্রচুর দীনতা আসলে ছিলযে আমার,
সহেছে তাই আমার স্ত্রী কত বিড়ম্বনা ও দিতে হয়েছে তাকে বহু ছাড়,
ছিলনা কোন সাহস ও সক্ষমতা স্পষ্ট কথা বলা, মনের চাওয়ায় চলা কিবা সত্য বলিতে পারার ।
আবারও বিয়ে করলাম,
এবারও অকারণ হায় বিধি বুঝি মোর হয়ে রলো বাম,
বয়স চল্লিশ সেই কবেই হয়েছে পার, আজও নাহি কোন সন্তানের মোখ দেখিলাম ।


পর্ব – ০৫


কেনযে পরহেজগার ও পর্দানশীন মা আমার,
অকারণ শুধু খুঁত ধরে ও দোষ খুঁজে বেড়ায় তার বৌমার,
সারাদিন শুধু নামাজ পড়া ছাড়া যেন আর কোন কাজ নাই যে মানুষটার ।
বউটি ছিলযে আমার,
একটু বাঁকা যেন তার দুটি কাঁধ ও ঘাড়,
খায় খাবে মার তবু, এমন স্পষ্টবাদী ও প্রতিবাদী, জুলুম অন্যায়ের কাছে কভু মানবেনা হার ।
কই গেলো হায় আমার বাবা-মার,
ঐ বিদ্যা, দীনদারী-পরহেজগারি ও বড় জাতের বড়াই অহংকার,
যত গুণগুলি দেখি অন্য দশজন বাবা-মার,
হয়ে থাকে এ সমাজে, একটা সাধারণ বয়সের আলাদা অর্জন মহত ও উদার ।
যদি সব অন্যায়, জুলুম ও অবিচার,
ঐ মহাপাকজাত নাহি সয়, নাই সামাণ্য পক্ষপাত যার,
তবে কি উপায় হবে তাদের, ঐ আচরণগুলি গণ্য হলে গুনাহের চোখেতে খোদার ।
ঐ মসনদ ও আদলত এমনই তার,
যেথা দিতে হয়না নালিশ কিবা চাহিতে কেউ কোন বিচার,
কোন গুনাহগার অপরাধীর নাই ছাড়, নাই মুক্তি বিনা বিচারে কেউই তারা পাবেনা পার ।
না পেলে ক্ষমা,
খোদার খতিয়ানে লেখা হয়ে থাকলে জমা,
আছে খোদ খোদার দাদনের মহাজনী ঋন,
লোকের পাওনা হক, অদেখায় সে দেনা-দায় তারচে অনেক বেশী হয়যে কঠিন ।
সকল বাবামা, ভাইবোন ও সব সন্তান,
সবাই বিধাতার গোলাম ও সকলেই তার কাছে সমান,
কোন অপরাধ, গুনাহ নেই কি বাবা-মার,
শুনেছি ও জানি শুধু কর্ম বা আমলের উপরই হবে হয়ে থাকে সবার বিচার ।
কত বেশী মর্যাদার আসন হয়েছে কেমনে কার,
নাহি মুছে কিবা হারিয়ে যাবে, নিশ্চিত সবাই ওরে পাবেই পাবেযে তার,
তাই যেন হয় হে মহান প্রভু করুণার, সবাই সবার প্রাপ্য সুক্ষ্ণ, নিঁখুত, নায্য-সঠিক শাস্তি ও পুরস্কার ।
সে বাণী ও বচন চির সত্য নিশ্চয়,
তবু কেনরে অপরাধী ও পাপাচারিরা করেনা বিশ্বাস পায়না ভয়,
নাহলে কি হতো এত দোযখের দরকার,
গোপন সব কথা, কাজ ও মন বা চিন্তা ও পরিকল্পনার,
বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, বউ-শাশুড়ি ও ভাই-বন্ধু সকলের সবার ।
হীন মন-মানসিকতার ও সবার শত দূর্ব্যবহার,
শুধু আখেরী নবীজী ছাড়া কেউ নহে বাহিরে তার,
কোরআনের ভাষায় ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সব ন্যায়-অন্যায়টার,
আর যত ভালমন্দ ও পাপ-পুণ্যের হবেই হবে হিসাব ও হবেযে বিচার ।
আমার প্রিয় মায়,
সারাক্ষণ যেন শুধু থাকে সে চেষ্টায়,
কেমনে বউটাকে তাদের খোঁচা, খোঁটা ও দোষ দেওয়া যায় ।
আর দারুণ এক মজায়,
সে তামাসা দেখে বসে আমার প্রিয় বাবায়,
নাকে দিয়ে রশি যেন তার ঘরে বসি মায় কেন ছড়িটা ঘুরাতে চায়,
নাই কিরে পরিণাম জানা, তাই বুঝি দুঃক্ষটারে হাতে ধরে টানা, অফুরান আপদ ও নিদান যার ।


পর্ব - ০৬


বুঝি বউটারে মনে ধরেনি তার,
কেমনে সওয়ারী করে তার সোনার তরীটার,
দেখি সে কেমনে টিকে থাকে, খেলাটা ঐ ছিলযে মজার,
এভাবেই ছোট করা, সদা পেরেশান রাখা ও হেয় করা শুধুই বারবার,
তবে সে সহিতে নারাজ শাশুড়ির অনাহুত, অকারণ ও অযাচিত ঐ সব অত্যাচার ।
কৌশলের ছলে,
মা তার ছেলেকে তাগিদ দেয় ও বলে,
এখন আর বাসায় কাজের ছুটা বুয়া রাখিবার দেখিনা দরকার,
কি প্রয়োজন টাকার জন্য তার এত মায়াকন্নার,
উপার্জনতো আমি করি, ঢের আছে তবে কেনযে তার এত হিসাব ও এত হাহাকার ।
তবে কেমনে দেয় ছোট ছেলেকে তার করে মন ও হাত উজার,
যেখানে না গেলেও চলে, নাহয় লাগতে পারে তিনশ হেথা কেমনে দেয় পাঁচশ কিবা হাজার,
মনতো চায় বলিতে পারিনা ও পাইনা সুযোগ বউয়ের সনে একটু গল্প করিবার,  
মেয়ে নয়, বৌমা নহে কেন বৌটাকে আমার কাজের বুয়া বানাবার এত কৌশল ও সাধযে মার ।
এক পা গেছে চলে কবরে যার,
এ কেমন মা, হিংসায় যেন বুক ফাটে ও পেট ভরা তার,
বউয়ের সামাণ্য ঐ সুখটা কেন সহেনা মনে সে এক জ্বালাপোড়া ও হাহাকার ।
কেন তার একার মাথায়,
যে ছেলের বাসায় থাকে ও ঘারে বসে খায়,
সবার অন্ন-বস্ত্র, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা ও লেখাপড়ার সবটুকু দায়,
তারে ভিখারী ও তার বউয়েরে দাসী বানিয়ে ছোট ছেলেরে কেমনে কেন সে রাজা বানাতে চায় ।
তারা কি ভয়ংকর,
কেমন স্বার্থবাজ ও স্বার্থপর,
বাবা-মা কেমনে হয় সন্তানের কাছে এত পর,
কেমনে তারা গেছে ভুলে, মরণের পরে আছেযে অন্ধকার কবর,
আবু হকেযে কয় খোদায় নাহি জুলুম সয়, শ্বেত পাথরের প্রাসাদ উড়িয়ে নেয় ছোট্ট একটা ঝড় ।
অনেক জিঙ্গাসাবাদ,
হিসাব-নিকাশ, নালা-নর্দমা ও ডোবা-খাদ,
বয়ে যাবে অনেক আপদ ও ঝড়,
হয়তো হয়ে যাবে পার নিদানে হাহাকার সহস্র বছর,
অনেক ঘাট পার হয়ে তবে কেজানে তারপর কেমন হবে কার ঐ কঠিন হাশর ।  
এ কি তবে হায় কেয়ামতেরই আলামত,
সেতো নহে আবু হকে কহে দুনিয়ার ডিগবাজি খাওয়া সোনার রথ,
এমন যারা হোক বাবা-মা কিবা সন্তান তারা, দিনের আলোয় দেখেনা ভালো ও পায়না খুঁজে পথ ।
নাইবা হোক পড়ে পড়ে,
মানুষতো শিখে শুনেশুনে, দেখেদেখে ও নিজে করেকরে,
বিদ্যা লাভ হয়নি তাই হয়তো জানা হয়নি হায়,
ছিল সাত রাজার ধন এমন কত রাজ্য ও রাজাগণ, পলকে নিমেষে গিয়েছে শূন্যে হারায় ।
তা কেমন কথা কোন অবিচার,
তার কিরে নাই স্ত্রী, সন্তান ও টাকা-পয়সার দরকার,
এমনটা করার আহা কি ছিল দরকার,পাইনাতো বুঝিনাযে খুঁজে ঐ ভেদটা তার,
বুড়ো মা-বাবার কি কখনও সাজে বা শোভা পায় এমন নাটক বা তামাসা করার ।


পর্ব - ০৭


বাহিরে যায় কতকি কিনে খায় ও বেড়ায় ঘুরে,
তার মেয়েরা তাদের স্বামীর সনে কত সোহাগ, আহলাদ ও রঙ-ঢং করে,
তাতে কোন দোষ নাই, সে খবর ছড়ায় করে বড়াই, খুশীতে আটখানা মায় যেন হায় গড়িয়ে পড়ে ।
কেন মায় হিংসায় ও বিষাদে মরে যায়,
শুধু কেন তার সে ভেদ বুঝা ভার বউয়ের বেলায়,
যে বয়সে অনেক ছোট ও যার স্বামী মাসে লাখ টাকা কামায়,
এ কেমন মা, ছেলে-বৌ যদি একসাথে বসে খায় ও কথা কয় হরষে ভরে ।
কোন্ কারণে কয়না কথা ক্ষোভে ফেটে পড়ে,
ঠাস করে দুয়ার এঁটে দেয়, কথা বন্ধ ও থাকে মোখটা কালো করে,
কিসের দোষ কিসের খোটা, কেন তার জাত-মান যায় চলে ছেলে-বৌ গেলে বেড়াতে বাহিরে ।
ঐ শ্বশুর বেটা ইবা কেমন,
ফুটেনি নাকি অন্ধ হয়ে গেছে তার তৃতীয় নয়ন,
তার স্ত্রীর কোন ন্যায়-অন্যায়ই চোখে পড়েনা কেন সে মানুষটা এমন ।  
এক অন্ধ ও বিবেকহীনের মতন,
শুধু তা সময়ের ব্যাপার, হয় নিশ্চয় হবে জুলুমের পতন,
তার সব মন্দ কথা ও অন্যায় আচরণগুলি কেন কেমনে সে করে সমর্থন,
কারো ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিনয় পেতে হলেযে তারে কিছুটা আদর ও ভালবাসা দেওয়া প্রয়োজন,
ছায়াকে সেলুট দিলে কিবা লাথি দেখালে সে ওতো তাই দেয় ও তাই করে, সেতো এক রেওয়াজ চিরন্তন ।
বিশ্বাস করেনা ও মানেনা যেজন,
স্বামীর পায়ের তলে স্ত্রীর বেহেস্ত হবার সে বচন,
তবে তার পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত একথা কেমনে হবে সাধন,
বুঝি নিরীহ স্বামীকেও সে বানিয়ে রেখেছে তার অন্ধ হুকুম ও ধমকের তাবেদার একজন ।
বাধা যার হাত-পা, কর্ণ ও দুটি নয়ন,
গর্ব ও অহংকারযে মানুষের এক অতি ভয়ংকর আত্ব হনন,
আর হয়তোবা এমনি করেই ছড়ি ঘুরিয়েই ঐ বিবি সাহেবার কেটেছে সারাটা জীবন ।
অনুভবে সব বুঝতে পারে ঠিক এমন,
কতকাল আর রবে কানা তীক্ষ্ণ একখানা ঐ শুক্ষ নয়ন,
হে খোদা জগতের সব বাবা-মাকে দাও হেন বোধ-বিবেক ও একটা মাটির মন,
হয় সদয় বোধোদয় ও জাগরণ আর তারা নিরপেক্ষ, সচেতন, বিজ্ঞ বিচারক, জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ।
দাও খুলে মুক্তির দুয়ার,
কেন মা-বাবার কারণে ছেলের সংসার,
হবে বলো হলেই কি লাভ মার, সুখ-শান্তি সবই করে ছারখার,
হে প্রভু ক্ষমা করে দাও, দাও এমন মজবুত ঈমান যেন তারা ভাল হতে পারে সেরা সবার ।
তাদেরকে বুঝাও হেন বুঝ দান কর,
কথায় কাজে ব্যবহার ও আচরণে বড় যেন থাকে তারা হয়ে চিরদিন বড়,  
তেজে সব মিথ্যা, মন্দ, অন্যায়, জুলুম ও অবিচার,
পুণ্য করিতে পারে, গুনাহের কাছে তারা কভু না হারে আর নিজেই নিজের করিতে বিচার ।
আমরা দুজন অসহায় ছেলে-বৌ তার,
সত্য বলছি ঐ বাবামার উপর আজও করিনি আমরা কোন অত্যাচার,
কি হবে এখন তবে আমাদের দুজনার, দুনিয়া ও আখেরাত দুই ই কি হবে মিছে রবে অন্ধকার ।


পর্ব - ০৮


এক বাবা-মার ঘরের সব সন্তান,
দেখেছি ছেলেমেয়েরা সবাই হয়নাতোরে কভু সমান,
মন, মানসিকতা, মনন, মেজাজ, বচন, ব্যবহার, কাজ ও আচরণ কিবা সম বিদ্যান ।
কেউ উদার, মহৎ ও মহান,
আবার কেউ রুক্ষ, রুঢ়, রুষ্ঠ ও নির্মম কঠিন পাষাণ,
কেউ প্রাণপণ রণ করে তিলে তিলে সাধনায় গড়ে, আর কেউবা ভেংগে করে খানখান ।
কেউ ভিজা মাটির তাজা পরাণ,
কেউ উগ্র হুতাষ, নিরীহ ও দূর্বলের ত্রাস ও প্রাণহীন মস্তান,
কেউবা দীনদার, পরহেজগার ঈমানদার পুণ্যবান,
তৃতীয় নয়নের মন, মনন ও দরশন যে আলো ও ভালোয় সাজানো বাগান,
তারাই মানবিক, সত্য-সঠিক, দেখে-শুনে ও বুঝে চলে, ভালকথা বলে ও সবার ভালটা চান ।
বাবা-মা সন্তানের লাগি শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর,
পুণ্যবান সন্তান হলো বাবামার লাগি বিধাতার দেওয়া পরম সম্পদ ও উপহার,
কেমন বাবা-মা,
খোদার ঘরে তারা পাবে কি ক্ষমা,
নষ্ট ঐ বাবা-মার কেজানে কত পাপ হয়েছে জমা,
এখন তিন পুরুষের পরিচয় জানতে চায় মন, জঘন্য ঐ বাবা-মায় যারা চাহে সন্তানের অকল্যাণ ।
তেমনি দুজনে দুজনার,
যত সব স্বামী-স্ত্রী এ গোটা দুনিয়ার,
সুজন বন্ধু মজার খেলনা নহে ফেলনা দামী অলংকার,
মার লাগি বিবিকে কিবা বিবির লাগি মাকে, কোন অশনি বিপাকে বিসর্জন দেবার ।
সাধ্য কার মূর্খকে বুঝাবার,
না, ধ্বংস নহে বিধাতায় চাহে বহুরুপ সৃজন বাহার,
স্বর্গীয় হেন নেয়ামত যেন নিরাপদ আবরু, উপহার ও ঠাই কোন সমতুল নেই যার ।
এখান থেকেই জীবনের শুরু তাই,
বিবাহ করে ভাই দিয়ে যেতে হবে সাজিয়ে গুছিয়ে সবাই,
সে নহে কোন বিলাস দুদিনের পরবাস পরম দায়, বাঁচার উপায়টা যেন দিয়ে যাই ।
একখানা বড় বীজতলা গড়াই,
জগতের বুকে সুখে ও দুঃখে মিশে জড়াই,
মিথ্যা ও মন্দটারে করে বিনাশ যার ওরে আর কোন বিকল্প নাই,
বিবিকে সংগে করে প্রয়োজনে প্রকাশে বা গোপনে যেতে হবে দূরে কোথাও পালাই ।  
সবকিছুতো দিয়ে গেছেন নবীজি শিখাই,
নাহলে কঠিন পরকালে সবে পড়বে বেহালে কারো মুক্তি নাই,
আলো ও ভালোর করিতে বানিজ্য বসতি ক্ষেতি-চাষ সুসন্তান রেখে যাওয়া চাই ই চাই ।
এখন কে বড় কার,
বউ-শাশুড়ি, বাবা-মা নাকি সন্তান তার,
লড়াই নহে, কার কম কার বেশী অধিকার বা ক্ষমতার,
একথা বলা যে বড়ই কঠিন, তবে কি লাভ তাতে কিবা কার কি দরকার,
সন্তান মোহাম্মদের কালেমা পড়ে গুনাহ মাফ হয়েছিল যে বাবা আদম ও মা হাওয়ার ।
হার না মানা জাতের অহংকার,
কেজানে ধরা পড়ে কে যাবে হেরে আর কে হবে পার,
যে বেশী নেককার কিবা আমলের হিসাবে শেষে পুণ্য বেশী ও গুনাহ কম যার,
দেখা যাবে যখন হবে ওজন তার, যাচাই-বাছাই হিসাব-নিকাশ ও মহারাজার মহান আখেরী বিচার ।


পর্ব - ০৯


অশিক্ষিত গরীব পিতার ঘরে হয়যে মিনিষ্টার,
আবার জজ-ব্যারিষ্টার ও মাওলানার ঘরে হয় কত অপদার্থ ও কুলাংগার,
আজও অনাদায় স্ত্রীর কত হক কত অধিকার,
যায়না কারেও কহা ভাই, যায়না সে যাতনা সহা, কে করিবে বলো তার সমাধান বা বিচার ।
এ বউ করবেনা সংসার,
মায় কেমনে কয় পুত, বাচ্চা নেওয়ার নাই দরকার,
ঐ মায় কেমনে ভাবে পুত-বউয়ে কিছুই জানেনা, দেখেনা ও বুঝেনা তার কুৎসিত ভিতরটার ।
অস্ফট কান্নার হাহাকার,
ঘরের ভিতরে কত অন্যায়, অপরাধ ও অবিচার,
জানতে চাই প্রশ্ন পাঠকের কাছে, কি কোন সহজ ও সুন্দর সমাধান আছে তার ।  
অন্যায়, অপরাধ, ভুল ও দূর্ব্যবহার,
অজানায় কেমনে হলো ঐ বাবার স্ত্রীর স্তন ক্যান্সার,
নিশ্চয় তা একদিনে নয়, ছয়মাস কিবা একবছরতো সময় লেগেছেই তার,
এমন কত আছে পলকে অজানায় গজায় গুনার পাহাড়,
বানানো গল্প নয়, এ সমাজে রয়েছে এমন কত অবক্ষয় ও পরাজয় নিযুত লক্ষ অযুত হাজার ।
বুঝতে কঠিন বিষয়টার এমনই রহস্যের ভার,
দেখেছি শুনেছি কথা মিথ্যে নয়, অবশ্য এমনই হয় সব রাজ পরিবার,
কেউ কারো নয়, জৌলুসের মাঝেও লুকানো রহে এমন কত হাহাকার,
কেমন স্বামী কেমন স্ত্রী ও কেমন সে পুরস্কার, এক ঘরের এক বিছানায় বসত ছিল ঐ দুজনার ।
এ নহে কোন দরবেশের অভিশাপ,
সময় সময় বড়ই ভয়ংকর হয়যে ছোট্ট একটা পাপ,
হায়রে পাপ, সে নাকি ছাড়েনা কারেও করেনা মাফ, হলেও সে মা-বাপ ।
কর্মটা যেই,
তার ফল হবেতো সেই,
তাতে অবাক হবার বা দুঃক্ষ করারতো কিছু নেই,
কারোতো ঐ সাধ্যটা নেই,
যতই ভালবাসি যারে দুঃক্ষটা দূর করে তারে সুখ এনে দেই,
কোন লাভ নেই করেও শেষে কোন আফসোস, আক্ষেপ কিবা পরিতাপ ।
আবু হকে বলে,
বিধাতার ক্ষমার দুয়ারটা বন্ধ হলে,
নিশ্চিত হবেই হবেযে ঐ সে কঠিন পরিনাম,
বুঝিবে সেদিন সবে কে কত বড় আর দরবারে তার কার কত দাম,
দুনিয়ার জীবনে প্রকাশে বা গোপনে যখন যেখানে যেজন যেটুকু মন্দ-ভালো করেছে যেই কাম ।
এ নিয়ে দুকলম লিখে গেলাম,
নাইবা পেলাম আজিকে আমি তার কোন দাম,
সব নির্যাতিতদের হোক উপকার,
তবেই হবে তা আমার সুখ, আনন্দ ও সাফল্যের ব্যাপার,  
যদি নব বিবাহিতা সব বধূয়াদের আদায় হয়ে যায় যথা সম্মান ও অধিকার ।
সহিতে না হয় কোনদিন শাশুড়ির অত্যাচার,
মা নামের এ ঘৃণ্য কলংক ধমনীতে বহিছে যার এমন ঐ সবার,  
মন্দ ও দুষ্ট মানসিকতার বাবা বিশেষ করে মায়েদের হীন দৃষ্টিভংগি বদলে যায় আর ।


পর্ব - ১০


হতে পারে যেন তারা সবার,
পরম শ্রদ্ধাভাজন হেন মহৎ, মহান ও উদার,
সদ্য বিবাহিত বোবা ও মাকে বুঝানোর রয়েছে বড় অভাব যোগ্যতার,
একটু জ্ঞান ও বুঝার ভুল যত সব পুতুল স্বামীদের জাগ্রত হয় যেন ঐ চেতনা ভালবাসার ।
তা সে যে হবে হোক,
কাছের আপন জন কিবা রাস্তায় পড়ে থাকা লোক,
মজলুমের অন্তরে লাগা একখানা ঘায়,
ফরিয়াদ করিবার আগেই তা নাকি আল্লাহর আরশে বা দরবারে পৌছে যায় ।
এ আমার বানানো বচন নয়,
নহে তাকে কোন আউলিয়া, দরবেশ ও বুজর্গ হতে হয়,
বিশ্বাস তা কারো হয় কি না হয়,
শুনেছি নিরীহ দূর্বল ও অসহায় মানুষের কষ্ট খোদার পরাণে নাকি নাহি সয় ।
শুধু শূন্যতা আর,
সব থেকেও অপার দীনতার ছাপ ও হাহাকার,
আলো নেই যেথা, শুভ বারতা আর কোন ভাল নেই ছাড়াযে অন্ধকার ।
যদিরে খুলে যেতো ইস,
আমার এ সৃজন নহে বোগাস নাহি তা রাবিশ,
ঐ সারটুকু নিয়েই লেখা হয়েছে, যা বলেছে পবিত্র কোরআন ও হাদীস ।
ধন্য হয়নি জীবন আর,
মানুষ হবার পূর্ণতা আসেনি এখনও যার,
রয়ে গেছে বলে চোখ ও মনের বন্ধ সকল জানালা ও দুয়ার,
বড় কথা বলা ও উদ্ধত চলা, আজও ঐ রেসালা রয়েছে যে হতভাগার,
সবটুকু কোরআন পড়া ও সে আলোয় জীবনটা গড়া আহা আজও কপালে হয়নি যার ।
মাগো মা,
তুমি কি জানোনা তুমিযে মা,
চাহি সেই শ্রেষ্ঠ মা তুলনাহীন ও তিলোত্তমা,
বিধাতার করুণায় যেথা আলো ও ভালোটা দুনিয়ার একবৃন্তে যেন হয়েছে জমা ।
কোরআন হাদীসে পেয়েছি আমি যে মায়ের পরিচয়,
যুগের হালে ও রঙ মাখানো জগতের তালে বদলে নষ্ট হয়ে যাওয়া নয়,
জাহানের সব মাকে কলংকিত করে তুমি কি শেষে হায় মাগো পাবে রবের ক্ষমা ।
অ আমার প্রিয় বাবা-মা,
তোমরা যদি না পাও খোদার ক্ষমা,
বাবাকে জড়িয়ে মা তুমি বানিয়ে ঠিক তোমার মতন,
আর জোর করে কৌশলে নিয়েছ আদায় করে তার ঐ নিরব সমর্থন,
তোমার ফন্দি ও পরিকল্পনাতে, সুযোগ পেয়ে মায় হাতে পোষ্যদের হক ও শান্তি হরণ ।
নাই দিক পথ কালো চাদরে ঢাকা অন্ধকার,
বেহেস্ত না হয় ওরে তোমাদের অর্জন, শুধু ত্রস্ত ছুটোছুটি ও হাহাকার,
এমন যেন না হয় কভু, তবু তাই যদিরে হয় তবে কোথায় বলো পাবো খুঁজে বেহেস্ত আমার ।
আমার বিদ্যান প্রবীণ বাবা,
তুমি জানিনা কেমনে হয়েছ এমন এক মস্ত হাবা,
পড়ছে না কি হায় তোমার মাথায়, মায়ের ঐ পাহাড় গুনার বারোআনা দায়ভার ।


পর্ব - ১১


ঐ দিন তুমি পাবে কিগো ছাড়,
এখনই জাগো মা, মাগো ক্ষমা ও করুণা দয়াময় বিধাতার,
আবু হকে কয় বেলা বেশী মনেহয় নাই ওরে আর,
এমনিতেই কেজানে কত ঋন, চিৎকার করেও সেদিন যতই করো তা অস্বীকার ।
কেননা তুমি ছিলে বয়সে বড় আর,
তুমিই বিধিসম্মত পরিচালক ও অভিভাবক যে ছিলে তার,
হচ্ছে তোমার নামে তোমারই খাতায় গুনাহগুলি সব জমা, তা কি সত্য নয়,
তাই যদি ওরে সঠিক হয়, দেখিনা লেশ তবে নাই কেন বাবা তোমার কোনই সে ভাবনা ভয় ।
গুনাহের আজাবের অকূল দরিয়াটা কেমনে পার,
যখন হবে এমন একা, নাই কারো দেখা ও চারিদিকে শুধু ঘিরে রাখা একাকার,    
শিক্ষার যাদের আছে প্রয়োজন বা দরকার,
ডিগ্রীধারী বিদ্যার মাঝে অজ্ঞতা ও মূর্খতাযে রয়েছে অপার,
কত বিদ্যান ও পন্ডিতের রঙীন বাতির তলে দেখেছি ওরে আজও বিচরে গহীন অন্ধকার ।
নিরবে তবে শিখুকনা সবে তা নয়তো কোন বিষয় লজ্বার,
সুশিক্ষাটা যখন আজও হয়নি সমাপন, যে দূর্ভাগা সন্তান কিবা তার বাবা-মার,
ঐ মূর্খরা সব শোন, কোন বয়স কিবা সময় বাধা নাই মানুষ হবার তরে বাহিরে ঘরে জ্ঞান শিখিবার ।
ছাড়ো যত মিথ্যে অহংকার ক্ষমতার,
অগাধ বিত্তধন, বিদ্যা ও রুপ, জাতের বাহাদুরি কিবা পোষাকের বাহার,
জ্ঞানের আলোর ঘাটতি রয়েছে যার,
মানুষ হয়নি এখনও যেজন, বৃথা জীবন ষোলআনাই মিছে তার,
বুঝিবে সবে যখন সবই বিরান হবে, যত সব ধন-জন ও সাজানো এ সোনালী সংসার ।
এখনও সময় আছে,
জলদি যাও কোন সুজন সুধীজন জ্ঞানীর কাছে,
ছোট হবেনা হেরে যাবেনা, বন্ধ হবার আগে বিধাতার অপার করুণার দুয়ার ।
খুঁজে নাও ওরে যেথা পাও,
কত দাম ও কোথায় পাওয়া যায় দেখো যাও,
আমার কথা ধর সন্ধান করো, কে কোথায় হকের পাওনাদার,
অযতনে অবহেলায় পড়ে থাকা জীবনের অমূল্য রতন ছোট্ট ঐ বাল্যশিক্ষা বইটার,
রয়েছে রাজার ঋনের বোঝাটা যার আজও এক পাহাড়,
যে বাণী ও বচন শৈশবে করেও পঠন-শ্রবণ ঢুকেনি দেমাগে আর যথা মূল্যায়ন কিবা শেখা হয়নি যার ।
মার সনে দুনিয়ায় আগমন,
বিয়ে করে বউকে লয়ে শুরু হয় সৃজনের জীবন,
না, সেযে বোঁকার বোধন, তার মানে এই নয় মাবাবাকে তাতেই বুঝি দেয়া হলো বিসর্জন ।
দূরে থাকাই বেশী উত্তম,
দৃষ্টির আড়ালে হীনমন্যতা ও ঝামেলা কম,
যেথা কম দায়, কে না ওরে বসত করিতে চায় এমন জীবন যাপন ।  
সুবিবেচক ও সদা সচেতন,
হয়েছে যার বোধোদয় সেইতো বেশী সুখী ও বেশী বিচক্ষণ,  
পরিশোধ করে যেবা ষোলআনা বিবির পাওনা ও অধিকার দেয় তার সঠিক ভরণ-পোষণ ।
বুড়ো বাবা-মায়,
না যদি হয় ওরে বিত্তহীন ও অসহায়,
সব সন্তানের কাছেই তাদের সম অধিকার, দাবীদার যেন সমান পায় ।


পর্ব - ১২


যে সন্তান বেশী কামায় বা যারা স্বচ্ছলতায়,  
কতজনে না চেয়েও দুনিয়ায় কতকিছু পায় খোদার করুণায়,    
কিবা তবে তারই বেশী দায়, যে বেশী পেয়েছে বা নিয়েছে ও পৈত্রিক সম্পদ ভোগ সুবিধায় ।
তারাই হয়ে যায়,  
বেশী ভাগ্যবান তার বাবা-মার দোয়ায়,
শুধু যারা পাশে থাকে আর তার ছোয়ায় ধন্য ও মহান হতে চায়,  
যেথা কম লোক-জন, হয় কম বাক ও বচন, কম ঝামেলায় খেয়ে না খেয়ে শান্তিতে থাকা যায় ।
রাখিও সবে স্বরণ, স্ব স্ব মাতা ও বিবিগণ,
আচমকা এসে ধরে, নিয়ে যাবে চিরতরে অদৃশ্য মরণ,
আপন আপন দোষগুলি ধূয়ে-মুছে লও, জলদি এখনই সবে হও সংশোধন,
জীবনের আহবানে যে যার অবস্থানে মহামূল্যবান, নিশ্চয় কেউ নয় অবাঞ্ছিত কিবা নিস্প্রয়োজন ।
সব সন্তান ও বউ শাশুড়িগণ হও সাবধান,
রয়েছে খোদার কাছে তোমার সব কথা ও কাজের অডিও ভিডিও প্রমাণ,
নিতে হবে মেনে তাই হোক যাই তার প্রতিদান,
শাস্তি কিবা পুরস্কার যা ছিল দুনিয়ায় তোমার স্বেচ্ছাচারিতার অবদান,
বলো সাধ্য আছে কার, কেমনে গুনার কর্মগুলি তোমার সব করিবে অস্বীকার ও পালাবে কোথায় ।
সাত আসমান ও আট স্বর্গের এক মহারাজার,
মহাজগতের অপরুপ এই সাত জমিন ও সাত সাগর নিমেষের সৃজন যার,
ভুতলে বিছানো তার অপার করুণার,
শতকোটি বছরের পরম শান্তি-সুখের সখের সাজানো পরিবার,
চোখ থেকেও রয়েছে অন্ধ কপাল তাদের এমনই মন্দ, হয়নি কপাল যার আজও তা হেরিবার ।
যখন যেমন মনঃ চাহে তার,
তাইতো মানুষের এ মহাঘের মরণ আসেযে বারবার,
কে বলিতে পারে, ভাংগিয়া গড়িয়া ফের নতুন করিয়া, এ মজার খেলার কোন সে মহারুপকার ।
জানিতে ইচ্ছা করে তার মূল কিবা ভেদ জানা আছে কার,
কোন সে বীর বাহাদুর, ধন-জন ও ক্ষমতায় ভরপুর, সাধ নাহি যার মরিবার,
এক রবি-শশী ও বেসুমার তারকার আলোক ও আঁধার আপন বলয়ে তার শত রঙ সহস্র বাহার ।
কেন চাহিতে হয় হবে হক,
কেমনে তবে রাজ্য টিকিবে সবাই হলে ঠক ও প্রতারক,
সে কি নয় ওরে দুষমনি আপনার সনে, দূরত্ব বাড়াবার এক তালিম ও ছবক,
ছেলের বৌকে যে শাশুড়ি মায় দাসী বানাতে চায়, সেকি নয় ওরে ভালবাসার এক আজব চমক ।
ঘরের ভিতরে তুমুল অশান্তির ঝড়,
কোন তামাসায় কেন বসায় তবে খোঁচা ও খোঁটার আসর,
বললে তার উচিৎ বা চাহিলেই অধিকার কেন হয় দোষ ও হতে হবে তাতে পর ।
মায়ের দাবীতে এক জুলুমবাজ রাণী সাহেবার,
যা ভাবে ভাবুক ও বলুক লোক, জিততেই হবে তার হয় হোক পানিঘোলা ও চারপাশ তোলপাড় ।
কে করিবে কারে রক্ষা বা উদ্ধার,
নাখোস হওয়া তুচ্ছ জ্ঞান করা কুয়াত এক আল্লার,
ক্ষুদ্র পাখীদের কঙ্করের ঘায় আর্তনাদ ও হাহাকার,
করুণ অসহায় হার হয়েছিল বিশাল ঐ বাহিনীটার,
মক্কা বিজয় আর কাবা ঘরটা ধ্বংস করিবার আহা বড় সাধ ছিল যার,
উগ্র ও উদ্ধত এত বল কার, মত যেন ঠিক ঐ পরাজিত ও নিহত বাদশাহ আবরাহার ।
এ কোন কাশীর মহিষী,
এক দুরন্ত জেদি ও তেজী দুঃসাহসী সর্বনাশী,
ছেলে-বৌকে নাজেহাল করার কুমন্ত্রণা, তার মনে ছিল বাসনা দিবানিশি,
বিদ্যা, জ্ঞান ও চক্ষু নাহি যার, কোথা হতে সহসা জুটিল সে আসি করিতে সবকিছু রদ ও সংহার ।