পর্ব - ০১


সাঁতরে সাঁতরে পার হয়েছি আমি সাত সাগর ॥
যে সাঁতারে কেউ জেতে কেউ হারে আমার সংগে ছিলোনা কেউ,
এসেছে ঢেউয়ের পরে আছড়ে পড়া ভয় দেখিয়ে কাতর করা অনেক বড় বড় ঢেউ,
ঐ সফরে কাছে কি দূরে এ জগত বাহিরে ঘরে বিপাকে নিদানে আপন স্বজন হয়েছিল সবে পর ॥
সে এক ডুব সাঁতার,
দেখলে মনেহয় বুঝি খেলাটা দারুন মজার,
পা দুটি যেন অঁচল, বাহুতে ছিলনা বল তবু মানিনি আমি হার,
ছিল কত কষ্ট তাড়না পেরেশানি ভাবনা তবে ছিলনা কোন হতাশা কিবা হাহাকার,
অনুভবে চেতনায় সংগে ছিল একজন আর, আমারে তুলে দিয়েছে কূলে প্রেরণা আশা ও ভরসা যার,
তারপর, উথাল ঐ সাগরই হয়েছিল মোর আশা ও সুখসান্তনার ঠাই আমার প্রিয় ঘর ॥
কার ডাক শুনি,
দেখে বারবার ঐ সে হাতছানি,
সাহস ও সহনে ভরে তোর দুরুদুরু বোকখানি,
ওরে আর একটু এগিয়ে আয়, তবেই তোরে আমি নেবো টানি,
আবার হয়েছে সতেজ শ্যামল আমার যে ভূবন অসার ফিকে ধূয়া চারিদিকে হয়েছিল গোধূলী ধূসর ॥
সব অবসাদ ভুলি,
হরষে আমি দেখি মাথা তুলি,
তার মহিমার বুঝি সবগুলি দুয়ার গিয়েছে খুলি,
দেখা যায় বুঝি অনতিদূরে,
এসেছি আবার ফিরে আমি অনেক ঘুরে,
পরম সুখের তার করুনার নিরাপদ ঘের এক নতুন শান্তিপুরে,
আবছা সোনালী আলোর অদেখা অনেক ভালোর পাখী ডাকা ভোর, রুপালী বিশাল বালুচর ॥
কেউ নেয়নি হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে,
হয়তবা আমি ন্বিঃস্ব শূন্য ও অসহায় ছিলেম জেনে,
জেনেবুঝে সয়ে নিরবে সব মাথা পেতে লয়ে, খুশীমনে নিয়েছি মেনে,
আঘাতে বেদনায়,
বারবার শুধুই হারাতে চায়,
দুদিনের এই রঙ মাখানো ধাধার দুনিয়ায়,
কাঁচের মত ভেংগে চৌচির তবুও কভু হয়নি অধীর নীড়হারা এক বিজয়ী বীর যেন মাটির পাথর ॥


পর্ব - ০২


ধন আছে মন নেই,
দেখি সবকিছু যেন জমেছে গিয়ে তাদের কাছেই,
ইচ্ছে করে ঐ তাদেরে নিয়ে ধরে রাজার স্কুলে ভর্তী করে দেই,
তারা কারো নয় তবু তাদেরই যেন সবখানে জয় কত বাহাদুরী সবকিছুতেই,
কুলীন ও অভিজাত,
অনেক লম্বা ওরে তাদের হাত,
রাতকে নিমেষে করে দিন আর দিনকে রাত,
দিনের চেয়ে যেন রাতই ভালো,
রাতে তাদের ঝিলমিল ঝলমলে সাতরঙ তীক্ষ্ণ আলো,
এ জীবনে হয়ত আর কোনদিন, শোধ হবেনা তাদের বকেয়া ঋন, তিমিরে ঢাকা মনের ঘর কভু পসর ॥
আর কেহ নয় শুধু আপন,
প্রিয়তম স্ত্রী ও আদরের সন্তানগণ,
আমার ভুবন, আমি আর আমার পোষ্য পরিজন,
হয়ত আর হবেনা জাগরণ,
বিকশিত আলোকিত ঐ মন তৃতীয় নয়ন,
যাদের কাছে জীবনটা এমন,
বেশী বিত্তবেসাত বেশী ধন আর শুধু ভোগবিলাস বিনোদন,
নেই কোন দায়,
কে আপদে নিদানে সমস্যায়,
কার কি প্রয়োজন নিরবে কাতরে কিবা চায়,
ধোকার ভুবনে এক রঙের জগত পূরোটাই ঐ হদ্দ বোকার,
দুদিনের ইজারাদার, সবকিছুই মহারাজার দাদন ও ধার, কিছুই নহে যার অক্ষয় সকলই নশ্বর ॥
কত ফাঁকি কত বাকী এ জীবন আর কতদিন,
হবে পরিশোধ অবসান ঐ বকেয়া হিসাবখান যত সব দায়দেনা ঋন,
সবকিছু যেন তার দখলে,
ভাবেনা কি হবে এ ধনজন তার মরণ হলে,
মাটির মানুষ মাটিতে বসবাস আকাশে উড়ে কেন ভেসে চলে,
ধরাকে সড়া আর মানুষেরে অবহেলা ভরে কূটা জ্ঞান করে অর্থ, বিদ্যা ও ক্ষমতার বলে,
একজন কানা,
কেমনে তার হবে দেখাশেখা চেনাজানা,
ডুবে মজে ও ভুলে থেকে রঙমাখা ছবিআঁকা সুন্দর এ ভুবনের ভিতর ॥


পর্ব - ০৩


নেই জল একটুখানি,
কোথাও ঝোপঝাড় বন বনানী,
কোথা হতে খড়কূটো পাতা ও বাঁশবেত আনি,
একজনেরে ভালোবেসে,
আমি গরীব বলে যারে আর পাইনি শেষে,
এক অচিন নগর বিজন দেশে কেমনে একেলা বাধিব ঘর,
যেথা ক্ষণেক্ষণে উঠে, দস্যুর মত আসে ছুটে, বহে ভুবন আঁধার করা দূরন্ত দামাল ধূলিঝড় ॥
না যদি মোর হয়রে সাধন,
নাই বাড়ীঘর চির যাযাবর রাজার বাঁধন,
আসা যাওয়ার সে এক দারুন মজার বিশ্বভ্রমণ,
তার উদার অপার নেয়ামত দান আর বৃথা এ জীবন,
ওরে মন, আমার কাছে দুইইযে সমান জীবন কিবা মরণ,
সৃজন ও লালন পালন যে মহাজন মহাবিশ্ব রাজন তবু কেন সেজন,
সকল প্রজার দরদী বন্ধু স্বজন কয়না কথা সংগে থাকে জড়িয়ে রাখে হয়না পর কজনে তার পেলো খবর ॥
দেখি আমি একাকি অসহায় বেলাভূমে আছি পড়ে,
অস্তরবির মলিন আভা হতাশায় নাকি অজানা কোন দূর্ভাবনায় যেন হায় নিরবে ক্রন্দন করে,
মোর চারিধারে রাজ সিপাহীরা রয়েছে দাড়িয়ে ঘিরে যেন এসেছে তারা মোরে নিয়ে যেতে ধরে,
জানি মোর নহে বিজয় সেযে ব্যর্থতা ও পরাজয়,
কে যেন বলিছে কাতরে উচ্চস্বরে আমিতো তবু ওরে অপরাধী নয়,  
এক অধম অক্ষম গোলাম দাস, তব ইচ্ছা ও করুণায় যার বসবাস জীবন মরণ সব হয়,
কারো সাতরঙ শোভা ও সৌরভে সাজানো কানন, আবার কারোবা এমন যেন ধূ ধূ মরু বালুচর ॥
হিসাব হবে দেনাপানার,
ঐ বিচারকের রায় সে নিখুঁত বিচার,
সামাণ্য একটু দান, ক্ষুদ্র সেবা ও পরোপকার,
বাদশা ফকির যে যার,
বিচারক ও প্রশাসক দুনিয়ার,
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যত অগনিত পুণ্য ও গুনার,
রয়েছে, পাবে সবাই তার নায্য সঠিক শাস্তি কিবা পুরস্কার,
নেই কোন পক্ষপাত মহাপরাক্রম পাকজাত, আকাশের মালিক ঐ মহারাজার শাহী দরবার,
জানিবে ও মানিবে আর কবে,
যত বেশী বিদ্যান, ধনবান ও ক্ষমতাবান সবে,
তবে কি ঠিকানা মাটির ঘর ও একেবারে নিঃস্ব, শূন্য ও অসহায় আর একা হবার পর ॥  
পেলে তার করুনার ছাড় কেউ পেয়ে যাবে পার,
কারোবা হবে বন্দি জীবন লয়ে পাওনা তার, নির্মম ও ভয়ংকর এক আগুনের কারাগার,
ঐ সাঁতার অথই পাথার অসীম সীমানা,
জীবন সেতো নহে ওরে তুলতুল করা ফুল বিছানো বিছানা,
কারো তা ঝলমলে প্রাসাদ, কারোবা কষ্ট-বিষাদভরা ঘর যেন একটা অচিন জেলখানা,
ঐ আনন্দ বেদনারও আছে সীমানা, যদিও হয়নি আজও অবসান কবে হবে নেই জানা,
দেখাশেখা চেনাজানা ও লাভক্ষতির বেঁচাকেনার পাওয়া না পাওয়ার ও আসা যাওয়ার এ অনন্ত সফর ॥