আজ শোনাব ভাই, অজানা জীবনের কিছু দুখভাল ॥
অ ভাই আমরা ধীবর জাতি,
তাজা মাছ বিক্রি হলে বাজারে পাই সুখ্যাতি,
আর তা না হলে নিস্তার নাই, নিশ্চিতই খেতে হয় কিছু গালাগাল ॥
সাহেবেরা বাজারে এলে দেখা হয়,
তার বেশী নাহলে, নেই কোন যোগাযোগ জানা পরিচয়,
কে খবর নেয়, কেমন আছি আমরা মন্দ কিবা বেশ,
নাহি হয় বেশী কথা বিনিময়, না থাকিলে হেন কোন চাহিদা ও ফরমায়েস,
ফেলতে হলে পুকুরে জাল, নাহলে দিতে হলে অনেক বেশী কিবা বড় মাছ আগামীকাল ॥
নাই মোদের কোন ক্ষেতি গিরস্তী নাই,
ভাগ্যটারে মেনে লয়ে চুপচাপ তাই জীবনটা কাটাই,
নাই হাল, নাইরে কাস্তে কোদাল, আর লাংগল ও জোয়াল ॥
নাই কোন দিনরাত,
মাছ ধরে মাছ বেঁচে খাই ভাত,
যার বিদ্যা নাই তার আবার কিসের কূল জাত,
তবু যেন সুখেই করি দিনাতিপাত, না হইলে দরিয়া উওাল ॥
এ কেমন জীবন পেলাম,
বুঝি মোদের জীবনের নেই কোন দাম,
নাই ঘূম নাইরে আরাম, রোদে পুড়ে যায় পিঠের চাম,
সারা দেহ মোর একটা অভাবের ঘরে, আর বিধাতার দেওয়া প্রান জনমের তরে, দরিয়ার কাছে বন্ধক রাখিলাম,
না হলাম গরু না হলাম রাখাল,
শেষে এখন ভারে নিয়ে কাঁধে জাল,
সব পেশা ফেলে হলাম জেলে, সেওতো বুঝি ছিল ভাল, চড়াতাম যদি খামারের গরুর পাল ॥
আছে সামান্য সম্বল,
বিধাতার ঐ অসীম অথই জল মহল,
আছে বুকের আশা আর সাহসী এই মনের বল,
একটা নাও আর আমার, জোড়াতালির এই তিনখানা জাল ॥
সাহস করে নাও ভাসাই,
জান ও রথের সামান্য কামাই,
জমি জিরাত আর ভিটা বাড়ীতো নাই,
দইজ্জার কূলত বসত করি, ছনের ঘর বানাই,
র্ঘূনিঝড়ে জলোচ্ছাসে হায় যখন খুশী লইয়া যায় তাই উড়াই ভাসাই,
তবু জানের মায়া ভয় ভাবনা নাই, এত আপদেও মাবুদে যখন রেখেছে বাঁচাই,
এই হলো আমাদের, ভীষন এক বেহাল দশার জীবনের হাল ॥
বড় বড় ঢেউয়ের সনে মিতালী করি,
র্মুশিদের ভরসায় নায়ের পাল উড়াই হাল ধরি,
চাঁদ সূরুযের মালিক, চেয়ে আছে ঠিক, মোদের হয় সাথি,
ক্ষুধায় আর পিপাসায় ডরে, হায়রে বারবার শুকাইয়া যায় গলা আর বুকের ছাতি,
আন্ধার রাইতের সফরে যখন সংগে থাকেনা কেউ, শুধু দরিয়ার বড় বড় ঢেউ, আর তারার বাতি,
ক্ষুধা পেলে চিড়া খাই মুড়ি খাই,
আর জলেরতো ভাই, অভাবই নাই,
ডর লাগিলে ওরে, দয়ালের নাম ধরে, উঁচূ স্বরে গান গাই, ঢেউয়ের সংগে মিলাইয়া তাল ॥
তিনচার কি পাঁচ দিনের সফর,
কারো সংগে নাই দেখা, পাইনারে খবর,
জানা নাই ফিরে আর, আসিব কিনা ঘরে তারপর,
না বাঁচিলে সাগরের উপর, জলেতেই ভাসমান বহমান কবর,
জাল আর নাও হয় বিলীন, অভাবের বান্ধব দইজ্জার এই পেটের ভিতর,
যদিও মহাজনের নাই ঋন, স্বপ্ন আশা নিপাত হলে ভালবাসা হয় মলিন, আমরা বড়ই দীনহীন কাঙাল ॥
আড়তে মাছ দিলে,
একমুঠে তার টাকাটা নাহি মিলে,
সাত জন পোষ্য আমার পরিবারে,
জমানো থাকেনা কিছুই, মোর কুড়ে ঘরে,
যখন সামান্য যা প্রয়োজন, দেয় বিধাতায় যোগাড় করে,
কভূ থাকেনারে এই ঘরে, এক দিনেরও আগাম কেনা কোন ডাল চাল ॥
ছেলেমেয়েরা পায় আমার,
মাঝে মাঝে দুধভাতও হয় আহার,
কভূ না পেলেও তবু কারো নাই কোন হাহাকার,
তাদের নিত্য দিনের খাবার হলো মোটা ভাত আর শাক মাছ ডাল ॥
নাইরে জানা,
মাছ ধরতে যাওয়া হবে কিনা,
নায়ের পাটাতন ভরা মাছ আর পাব কিনা,
জানা নাই তবে আমরা সবাই, কি হবে কি খাবো কাল ॥
দেওয়ার ভাব ভালনা তাই,
মাঝে মাঝে ভাংগা নাও চরেতে চড়াই,
উঠে সকালে নায়ে ও জালে আলকাতরা ভরাই,
বেলাবেলি ভাই, ঐ জাল আর নাও শুকানোই চাই,
সবাই বসে হুক্কা টানি আর দেখেদেখে তার ফুটা গড়াই,
করি জাল সেলাই, রুজির আশায় সময় খুঁজি, বাঁশের আড়ায় জাল ছড়াই,
আকাশ কালো, কেমনে থাকে মন ভালো, ঝড়ের আভাস ভয়ংকর দামাল ॥
বউয়ে কয় ওগো মাছ ধরা এবার বন্ধ কর,
ঝিপূতে কয় বাবা দূবলার চরে শুটকির কাম ধর,
বাবা যা হবার নয়, আমরা হতে চাইনা ওগো ধনে বড়,
সেইতো মোগো অনেক পাওয়া, সাগরে ডুবে তুমি না যদি মর,
আসে আসুক আকাল, মাছ চাইনা, আমরা সবে খাবো, ডাল আর ভর্তার ঝাল ॥